ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

১৭০ প্রার্থীর ঋণ পুনর্তফসিলের আবেদন

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২৯ নভেম্বর ২০১৮

১৭০ প্রার্থীর ঋণ পুনর্তফসিলের আবেদন

রহিম শেখ ॥ গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের বিধান অনুসারে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঋণখেলাপী কোন ব্যক্তি জাতীয় সংসদের সদস্য হতে পারবেন না। ফলে রেকর্ড পরিমাণে বেড়েছে খেলাপী ঋণ পুনর্তফসিল প্রার্থীদের সংখ্যা। বুধবার শেষ দিন পর্যন্ত নির্ধারিত ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ১৭০ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী ঋণ পুনর্তফসিলের আবেদন করেছেন। যদিও ঋণ পুনর্তফসিল বাবদ কত টাকা আদায় হয়েছে তা জানাতে পারেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ঋণ পুনর্তফসিলের পক্রিয়া শুরু হয়েছে চলতি বছরের শুরু থেকেই। এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ তথ্য ব্যুরো (সিআইবি) থেকে রিটার্নিং অফিসার বরাবর মনোনয়নপত্র দাখিলকারী প্রার্থীদের ঋণখেলাপী সংক্রান্ত তথ্য পাঠাতে হবে। তথ্যের সঠিকতা ও হালনাগাদ তথ্য যাচাইয়ের জন্য আজ বৃহস্পতিবার থেকে আগামী শনিবার পর্যন্ত ব্যাংকের সিআইবি সেল খোলা রাখার নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের শেষ দিন আগামী ২ ডিসেম্বর ঋণখেলাপী সংক্রান্ত তথ্যসহ শাখা ব্যবস্থাপকদের সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের দফতরে বাধ্যতামূলকভাবে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জানা গেছে, ঋণখেলাপী নন বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন সনদ মিললে হতে পারবেন প্রার্থী। যারা বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ফেরত দেননি তারা প্রার্থী হতে পারবেন না। প্রার্থী হতে ব্যাংকের দায় ঋণ পরিশোধ কিংবা পুনর্তফসিল করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি এ নতুন নির্দেশনা জারি করেছে। সে মোতাবেক কোন ব্যক্তির যদি এক টাকাও ঋণ থাকে তার রিপোর্ট পাঠাতে হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে। ফলে ছোট-বড় আকারের যে ঋণই থাকুক না কেন তা নিয়মিতকরণ করতে হবে। এবারই প্রথম নিয়ম করা হয়েছে ব্যাংকে যে কোন পরিমাণের দায়ে আটকে যেতে পারে প্রার্থিতা। আগে নির্ধারিত শাখা অথবা সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে ম্যানেজ করে ছাড়পত্র নিলেই প্রার্থী হওয়া সম্ভব ছিল। কিন্তু এবার প্রার্থী হতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ছাড়পত্র নিতে হবে। এজন্য এবার রেকর্ড পরিমাণে বেড়েছে খেলাপী ঋণ পুনর্তফসিল প্রার্থীদের সংখ্যা। বুধবার ছিল ঋণ পুনর্তফসিল আবেদন করার শেষ দিন। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, নির্ধারিত ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ১৭০ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী ঋণ পুনর্তফসিলের আবেদন করেছেন। যদিও ঋণ পুনর্তফসিল বাবদ কত টাকা আদায় হয়েছে তা জানাতে পারেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জুনে ঋণ পুনর্তফসিলের পরিমাণ ছিল প্রায় এক হাজার ৪৫৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। আগস্ট মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৮শ’ ৭৮ কোটি ৮১ লাখ টাকা। সেই হিসেবে তিন মাসের ব্যবধানে বেড়েছে প্রায় চার হাজার ৪২০ কোটি টাকা বা ৩০৩ শতাংশ। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই সময় সবচেয়ে বেশি ঋণ পুনর্তফসিল করা হয়েছে রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাংকগুলোতে। জানা গেছে, ঋণ পুনর্তফসিলের পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার জারি হয় ২০১২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর। পরবর্তী সময়ে আরও দুই দফায় সার্কুলার জারি করে ওই নীতিমালার কিছু শর্ত শিথিল করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের এ নীতিমালার সুবিধা নিয়ে ২০১২ সালে মোট ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকার খেলাপী ঋণ পুনর্তফসিল করে ব্যাংকগুলো। এর পরের বছর থেকে ব্যাংকগুলোর ঋণ পুনর্তফসিলের গতি বেড়ে যায় অস্বাভাবিক হারে। ২০১৩ সালে ১৮ হাজার ২০ কোটি টাকার ঋণ পুনর্তফসিলের সুযোগ পেয়েছিলেন খেলাপী গ্রাহকরা। এরপর ২০১৪ সালে ১২ হাজার ৩৫০ কোটি ও ২০১৫ সালে ১৯ হাজার ১৪০ কোটি টাকার খেলাপী ঋণ পুনর্তফসিল করা হয়। ২০১৬ সালে ১৫ হাজার ৪২০ কোটি টাকার খেলাপী ঋণ পুনর্তফসিল করার পর গত বছর আরও ২৪ শতাংশ বেড়ে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ১৯ হাজার ১২০ কোটি টাকায়। সব মিলিয়ে শুধু গত পাঁচ বছরেই ব্যাংকগুলো থেকে ৮৪ হাজার ৫০ কোটি টাকার ঋণ পুনর্তফসিলের সুবিধা পেয়েছেন খেলাপী গ্রাহকরা। নির্বাচনী বছর হওয়ায় চলতি বছর শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে ঋণ পুনর্তফসিলের পরিমাণ সর্বকালের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। শুক্র ও শনিবার খোলা থাকছে ব্যাংকের সিআইবি সেল ॥ জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ব্যাংকগুলো থেকে ঋণখেলাপীদের তালিকা নিয়ে সিআইবি হালনাগাদ করতে শুরু করেছে। তথ্য চাওয়া হয়েছে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরির আওতায় থাকা ক্ষুদ্র ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের খেলাপী গ্রাহকেরও। এদিকে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঋণখেলাপীদের প্রার্থী হওয়া ঠেকাতে আগামী শুক্র ও শনিবার ব্যাংকের সিআইবি সেল খোলা রাখার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আজ বৃহস্পতিবার থেকে আগামী শনিবার পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা রাখতে হবে। প্রয়োজনে এর চেয়েও বেশি সময় সিআইবি সেল খোলা রাখার ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে।
×