ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন নিয়ে খুবই সন্তুষ্ট, পর্যবেক্ষক পাঠাবে

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২৯ নভেম্বর ২০১৮

যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন নিয়ে খুবই সন্তুষ্ট, পর্যবেক্ষক পাঠাবে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আগামী জাতীয় নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনী পর্যবেক্ষক পাঠাবে। এছাড়া সকল দলের অংশগ্রহণে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে বিশ্বের ক্ষমতাধর এ দেশটি। বুধবার রাজধানীর ধানম-িতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ের পাশে নির্বাচন পরিচালনা অফিসে দেশটির একটি প্রতিনিধি দল সৌজন্য সাক্ষাতের সময় এমন মনোভাব ব্যক্ত করেছেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা ও আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচ টি ইমাম। বৈঠক শেষে এইচ টি ইমাম সাংবাদিকদের বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্র পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে। আগামী নির্বাচন নিয়ে দেশটি অত্যন্ত সন্তুষ্ট। এটাই হচ্ছে ওদের কাছে সবচেয়ে সন্তোষজনক। এমন কোন দল নেই, যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না। ওরা বরং খুব অবাক, এতগুলো দল, এতগুলো জোট তোমরা (আওয়ামী লীগ) ম্যানেজ করছ কীভাবে। ওরা ভাবতেই পারে না, আমরা এগুলো করতে পারি। আমরা বলেছি, এগুলো আমরা করছি। আমাদের সব ঠিকঠাক হয়ে গেছে। নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণের বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাবের বিষয়ে এইচ টি ইমাম বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা চাই একটি অংশীদারিত্বমূলক নির্বাচনে সকলে অংশগ্রহণ করুক। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অত্যন্ত স্পষ্ট একটি নির্বাচন হবে, যেটি সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। এই আদর্শগুলো আমেরিকানরাও ধারণ করে। তাদের সঙ্গে আমাদের মতের যথেষ্ট মিল আছে। এ জন্যই তারা আমাদের এখানে এসেছেন। এটিই প্রথম নয়, কিছুদিন আগেও ব্রিটিশ হাইকমিশনার এলিসন ব্লেক এসেছিলেন এবং আওয়ামী লীগ অফিসে প্রায়ই অনেকে এসে দেখা করেন।’ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের এই সদস্য আরও বলেন, কূটনীতিকদের সঙ্গে ব্যক্তিগত পর্যায়ে যদি বলেন সব রাষ্ট্রদূতের সঙ্গেই আমাদের ব্যক্তিগত কথাবার্তা ও আলোচনা হয়। সেগুলো সব সময় প্রচার করার দরকার আমরা মনে করি না। পার্থক্যটা হলো অন্যান্য দল বড় বড় হোটেলে তাদের জন্য ডিনারের ব্যবস্থা করে, তারা দাওয়াত করে, তারা বাড়িতে যান, দেখা করতে যান। আমাদের যে যাই সমালোচনা করুক, তারা সকলেই বলছেন, আওয়ামী লীগের একটা অন্য স্ট্যান্ডার্ড আছে। সেই স্ট্যান্ডার্ডের জন্য, এই উচ্চতার মানের জন্যই তারা এখানে আসেন। আমেরিকানরা আমাদের সঙ্গে সবক্ষেত্রে বন্ধুত্ব চায় উল্লেখ করে এইচ টি ইমাম বলেন, ‘আমি কথায় কথায় বলেছিলাম মুক্তিযুদ্ধের সময় আমেরিকার জনগণ আমাদের দ্বিগুণভাবে সমর্থন করেছে। যদিও সরকার তখন আমাদের বিরোধী ছিল। যাওয়ার আগে বিল মোলার সঙ্গে সঙ্গে মনে করিয়ে দিলেন, আমেরিকা আবার ভুল বুঝতে পেরে ৪ এপ্রিল স্বাধীনতার পর পরই অনেক দেশের আগে আমাদের স্বীকৃতি দিয়েছিল। তাদের সঙ্গে আমাদের অনেক পারস্পরিক মিল আছে দাবি করে তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রত্যেকটি দূতাবাসের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখি এবং গণতন্ত্রের পক্ষে যারা এখানে কাজ করেন, নৈতিক একটা উচ্চতা থেকেই সবার সঙ্গে কথা বলি।’ নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু আরপিও তৈরি করেছিলেন। সেই আরপিও’র ওপর ভিত্তি করে এই পর্যন্ত নির্বাচন হয়েছে। সে আরওপিওতে যত রকমের সংশোধনী এসেছে, নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করা, তার আদর্শ একটা ইমেজ দেয়া এবং নির্বাচন পদ্ধতিতে যত কিছু সংস্কার; সব একমাত্র আওয়ামী লীগ করেছে। এটি আর কেউই করেনি। তাই আসুন আমরা সকলে মিলে নির্বাচন কমিশনকে এমন একটা উচ্চতায় নিয়ে যাই, কেউ যেন প্রশ্ন করতে না পারে। তখন বলবে যে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগই করে দেখিয়েছে, এটা করতে পারা সম্ভব। গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টিতে আমরা সকলেই একসঙ্গে কাজ করব উল্লেখ করে এইচ টি ইমাম বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে অনেক অবজারভার আসবেন। আমরা তাদের বলেছি, অবজারভার যেখানে যাবেন, তাদের নিরাপত্তা বিধান করা আমাদের দায়িত্ব। কাজেই আপনারা তালিকা দিন। আগে থেকেই জানাবে কোথায় তারা যাবেন, কী কী কাজ করবেন- এগুলো জানা দরকার। জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে আমেরিকার পক্ষ থেকে কোন অসন্তোষ জানানো হয়েছি কিনা, এ প্রশ্নের জবাবে এইচ টি ইমাম বলেন, তারা এ সমস্ত কথা বলেননি। বরং তারা বলছেন, এখন বাংলাদেশে শান্তির ভাল পরিবেশ বিরাজ করছে। ওদের এনডিআই-এর আগে অক্টোবর মাসে এসেছিলেন, এসে আমাদের সঙ্গে দেখা করেছেন। তখন তারা বলে গিয়েছিলেন, বাংলাদেশে একটি সংলাপ হওয়া দরকার। এটা ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালসহ অন্যান্যরাও বলেছিলেন। এজন্য তারা বলছেন, আমরা অত্যন্ত খুশি। তোমরা সংলাপ করেছ। তিনি বলেন, এই ডায়ালগে আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা সকলকে যেভাবে নিয়ে এসেছে, ওদের (সংলাপে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দল) যা কিছু বলার ছিল তারা কিন্তু প্রকাশ্যেই বলে ফেলেছেন। সরকারের বিরুদ্ধে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদের ক্ষোভের জায়গাগুলো তারা বলেছেন এবং সরকার হাসিমুখে নিয়েছেন। আমরা যা যা করার দরকার ছিল, যে প্রতিশ্রুতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিয়েছিলেন সে প্রতিশ্রুতিগুলো আমরা সব পালন করছি। আমরা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি সম্পন্ন করার চেষ্টা করছি সর্বাত্মকভাবে। কিন্তু সবকিছুর ওপরে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে নির্বাচন কমিশনকে সমস্ত আলোচনা-সমালোচনার উর্ধে রেখে করতে হবে। তাহলেই সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন পর্যবেক্ষক না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাহলে আমেরিকা কেন পাঠাবে ? এমন প্রশ্নের জবাবে এইচ টি ইমাম বলেন, আমেরিকা অবজারভার পাঠাবে। ওরা সব জায়গাতেই পাঠায়। ওরা বলছে, আমরা নির্বাচন কেমন হয় দেখব, সত্যিকার সুষ্ঠু হয় কিনা সেটাও দেখব। ওদের তো কতগুলো থিঙ্ক ট্যাংক আছে। আমেরিকান আর ইউরোপীয় ইউনিয়ন এক নয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনায় সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে নির্বাচন হয়। এ রকম নির্বাচন কিন্তু অনেক দেশেই হয় না। এটা আমাদের গর্ব করার জিনিস। এ জন্যই ওরা আসে। সৌজন্য বৈঠকে মার্কিন দূতাবাসের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কাউন্সিলর বিল মোলার, যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের রাজনৈতিক কর্মকর্তা কাজী রুম্মন দস্তগীর উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে সৌজন্য সাক্ষাতে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, উপ-দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, কার্যনির্বাহী সদস্য এস এম কামাল হোসেন, আন্তর্জাতিক উপ-কমিটির সদস্য ড. সেলিম মাহমুদ, উইলিয়াম প্রলয় সমাদ্দার বাপ্পী প্রমুখ।
×