ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আপীল বিভাগের রায়ের পর সকল আইনী প্রক্রিয়া শেষ ;###;উল্লেখযোগ্য নেতাদের মধ্যে রয়েছেন মীর মোঃ নাসির, মীর মোঃ হেলালউদ্দিন, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, আমানউল্লাহ আমান, গিয়াসউদ্দিন আল মামুন, জয়নাল হাজারী, মকবুল আহম্মেদ, ডাঃ জাহিদ, ওয়াদুদ ভ‍ূঁইয়া, আব্দুল ওহাব, ব্য

খালেদাসহ ২ ডজন অযোগ্য

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২৯ নভেম্বর ২০১৮

খালেদাসহ ২ ডজন অযোগ্য

বিকাশ দত্ত ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াসহ দন্ডিত ব্যক্তিরা আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারছেন না। দুই বছরের বেশি দন্ডিতদের ভোটে আসার সুযোগ মেলেনি আপীল বিভাগেও। হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেনের আবেদনে সাড়া দেয়নি সর্বোচ্চ আদালত। বিএনপি নেতার আবেদনে শুনানি করে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ‘নো অর্ডার’ দিয়েছে। অর্থাৎ হাইকোর্টের আদেশই বহাল থাকল। আগের দিন জাহিদ হোসেনসহ বিএনপির পাঁচ নেতার আবেদনের ওপর শুনানি করে হাইকোর্ট সিদ্ধান্ত দেয়, দন্ড বাতিল বা স্থগিত না হলে এবং জামিন না মিললে ভোটে দাঁড়ানো যাবে না। এর বিরুদ্ধে আপীলে গেলে হাইকোর্টের আদেশই বহাল রাখা হয়। এর ফলে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াসহ প্রায় দুই ডজন দন্ডিত নেতা আপাতত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য দরজা খুলল না। নির্বাচনী দরজা তাদের জন্য বন্ধই থাকল। আইনজীবীগণ বলেছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালতের এই আদেশের ফলে খালেদাসহ যাদের দুর্নীতি মামলার ২ বছরের বেশি সাজা হয়েছে তারা আপাতত নির্বাচন করতে পারছেন না। সাজা স্থগিতের বিষয়ে সব আইনী প্রক্রিয়া শেষ। তবে তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কি না সে বিষয়টি এখন রিটার্নিং অফিসারের ওপর নির্ভর করছে। এই আদেশের ফলে খালেদা জিয়াসহ বেশ কিছু প্রার্থীর আসনে বিকল্প প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক ) আইনজীবী খোরশেদ আলম খান বলেছেন, সর্বোচ্চ আদালতের আদেশের ফলে খালেদা জিয়াসহ দন্ডপ্রাপ্তরা নির্বাচন করতে পারছেন না। খালেদা জিয়া ছাড়াও বিভিন্ন দলের প্রায় দুই ডজন নেতা রয়েছেন। তাদের মধ্যে আছেন ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা, মীর মোঃ নাসির, মীর মোঃ হেলাল উদ্দিন, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, আমান উল্লাহ আমান, গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, জয়নাল আবেদীন হাজারী, আলহাজ মকবুল আহম্মেদ, হাজী মোঃ সেলিম, ডাঃ এ জেড এম জাহিদ হোসেন, ওয়াদুদ ভূঁইয়া, আবদুল ওহাব, ব্যারিস্টার একেএম ফখরুল ইসলাম প্রমুখ। এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, আপীল বিভাগের আদেশের পর বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াসহ দন্ডপ্রাপ্তরা নির্বাচন করতে পারবেন না। অর্থাৎ যে ব্যক্তিরা নৈতিক স্খলনজনিত কারণে অন্যূন দুই বছর দোষী সাব্যস্ত হবেন তারা কোন রকম নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। ওই রায়ের ফলে কতজন নির্বাচনে অযোগ্য হলেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের কাছে ফাইল রয়েছে। তারা এখন সর্বোচ্চ আদালতের এ নির্দেশনা, আমি মনে করি অবশ্যই নির্বাচন কমিশন মাথায় নিয়ে তাদের কাজগুলো করবে। অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা বলেছেন, দন্ডিতদের সাজা স্থগিত না হলে তারা নির্বাচনের অযোগ্য হবেন। সে ক্ষেত্রে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াও এবারের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারছেন না। তিনিও (খালেদা জিয়া ) জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বিচারিক আদালতের সাজা স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন। তার সাজাও স্থগিত হয়নি। এদিকে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহম্মেদ বলেছেন, সর্বোচ্চ আদালতে আদেশের পর আপাতত দন্ডিত ব্যক্তিরা নির্বাচন করতে পারবেন না। ফৌজদারি মামলায় দন্ডপ্র্রাপ্ত হলে, সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার ক্ষেত্রে একটি সাংবিধানিক বার (বাধা) রয়েছে। ন্যূনতম ২ বছর দন্ডপ্রাপ্ত হলে এবং তার পর ৫ বছর অতিবাহিত না হলে সে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। ইতোমধ্যে আপীল বিভাগের আদেশের পর বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গেছে। সংবিধানেও স্পষ্ট বলা আছে, সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদে সংসদে নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতা ও অযোগ্যতার বিষয়ে বলা হয়েছে, যদি কেউ নৈতিক স্খলনজনিত কোন ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দুই বছরের কারাদন্ডে দন্ডিত হন এবং তার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বছর কাল অতিবাহিত না হয়ে থাকে, তবে তিনি সংসদ সদস্য থাকার যোগ্য হবেন না। এর আগে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছিলেন, আমাদের সংবিধানে বলা আছে নৈতিক স্খলনের জন্য দুই বছরের অধিক সময় যদি কারও সাজা হয় তাহলে তিনি সংসদ নির্বাচন করতে পারবেন না। হাইকোর্ট ও সুপ্রীমকোর্টের দুটি রায় আছে, যেখানে এ বিষয়ে কিন্তু সুনিশ্চিত বলা হয়েছে আপীল যতক্ষণ পর্যন্ত শেষ না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত এই মামলাটা পূর্ণাঙ্গ স্থানে যায়নি সেজন্য দন্ডপ্রাপ্ত হননি সেজন্য ইলেকশন করতে পারবেন, আবার আরেকটা রায়ে আছে পারবেন না। এখন উনার বিষয়ে আপীল বিভাগ এবং স্বাধীন নির্বাচন কমিশন কি সিদ্ধান্ত নেবে সেটা তাদের বিষয়। এর আগে হাইকোর্টে দুটি বেঞ্চ ২৬ ও ২৭ নবেম্বর এ বিষয়ে আদেশ প্রদান করে। ২৬ নবেম্বর ‘সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর রায় ফাঁসের মামলায় তার আইনজীবী দন্ডপ্রাপ্ত ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলামের দন্ড স্থগিত চেয়ে করা আবেদন খারিজ করে দিয়ে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ পর্যবেক্ষণসহ আদেশ দেন। সেখানে বলা হয়, বিচারিক (নিম্ন) আদালতের দন্ডের বিরুদ্ধে করা আপীল আবেদন বিচারাধীন থাকা অবস্থায় দন্ড স্থগিতের বিধান নেই। চাইলে আবেদনকারী আপীল বিভাগে যেতে পারেন। আপীল বিভাগ এ বিষয়ে একটি প্রিন্সিপাল সেটেল (নীতি নিষ্পত্তি) করতে পারে। পরবর্তীতে হাইকোর্ট তা অনুসরণ করতে পারে। অন্যদিকে ২৭ নবেম্বর বিএনপির সাবেক প্রতিমন্ত্রী আমান উল্লাহ আমানসহ ৫ নেতা বিচারিক আাদালতের দেয়া দন্ড ও সাজা স্থগিত চেয়ে আবেদন করলে বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কেএম হাফিজুল আলম পর্যবেক্ষণ দিয়ে আবেদন খারিজ করে দেন। পর্যবেক্ষণে বলা হয়, নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে বিচারিক আদালতে কোন ব্যক্তির দুই বছর বা তার বেশি মেয়াদে সাজা হলে ওই দন্ডের বিরুদ্ধে আপীল চলাকালে তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। আপীলে সেই দন্ড বাতিল বা স্থগিত হলেই কেবল সাজাপ্রাপ্ত ওই ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন বলেও জানিয়েছে আদালত। হাইকোর্টের এই আদেশের বিরুদ্ধে ডাঃ এ জেড এম জাহিদ হোসেন আপীল করেন। বুধবার আপীল বেঞ্চ নো অর্ডার দিলে হাইকোর্টের আদেশই বহাল থাকে। এরই মধ্যে বেগম খালেদা জিয়া দুটি মামলায় দন্ডিত হয়েছেন। দুই মামলায় তাকে (খালেদা জিয়াকে ১৭ বছর কারাদন্ড ) দেয়া হয়েছে। ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়ে দন্ডিত হওয়ার পর থেকে খালেদা জিয়াকে রাখা হয়েছে নাজিমুদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে। এই মামলায় বিচারিক আদালতের দেয়া সাজা (৫ বছর কারাদন্ড) থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর কারাদন্ড দিয়েছে হাইকোর্ট। এ ছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলাতেও বিচারিক আদালতে সাত বছরের কারাদন্ড পেয়েছেন খালেদা জিয়া। এরই মধ্যে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালাস চেয়ে ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার দন্ড স্থগিত চেয়ে আপীল করা হয়েছে। এদিকে আরও তিনটি দুর্নীতি মামলাসহ মোট ৩৪টি মামলা চলমান রয়েছে। বুধবার আপীল বিভাগ বিচারিক আদালতে কোন ব্যক্তি ২ বছরের বেশি দন্ডপ্রাপ্ত হলে তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না বলে হাইকোর্টের আদেশ বহাল রেখেছে। এর ফলে বিচারিক আদালতের সাজার রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে (হাইকোর্ট) দন্ড স্থগিত করা হলে কিংবা আপীল চলাকালে কোন ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। আদালতে ডাঃ এ জেড এম জাহিদ হোসেনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, আহসানুল করীম ও খায়রুল আলম চৌধুরী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা। দুদকের পক্ষে ছিলেন এ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান। পরে ব্যারিস্টার খায়রুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘সাজা স্থগিত চেয়ে ডাঃ জাহিদ হোসেন হাইকোর্টে আবেদন জানিয়েছিলেন। হাইকোর্ট সে আবেদন মঙ্গলবার খারিজ করে দেয়। এরপর সে আদেশের বিরুদ্ধে আমরা চেম্বার আদালতে গেলে বুধবার তার সাজার বিষয়ে আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য দিন নির্ধারণ করা হয়। এরই শুনানি নিয়ে আপীল বিভাগ এ আবেদনের ওপর নো অর্ডার দেন। ফলে তার সাজা স্থগিতের বিষয়ে সব আইনী প্রক্রিয়া শেষ। খালাসপ্রাপ্ত ‘মন্ত্রী মায়া’ সম্পর্কে যা বললেন এ্যাটর্নি জেনারেল ॥ এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, শাসনতন্ত্রের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, নৈতিক স্খলনের কারণে দুই বছর বা তার অধিক সময়ের জন্য দণ্ডপ্রাপ্ত হলে, সেক্ষেত্রে তিনি নির্বাচন করতে পারবেন না। যদি তিনি (দণ্ডিত ব্যক্তি) ইতোমধ্যে খালাসও পান বা মুক্তিও পান, মুক্তি লাভ করার পরও তাকে পাঁচ বছর অপেক্ষা করতে হবে। মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াও খালাস পেয়েছেন এবং এ আদেশ তার জন্যও প্রযোজ্য হবে- এমন মতও দেন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ এ আইন কর্মকর্তা। বুধবার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ্যাটর্নি জেনারেল এমন মন্তব্য করেন। কিছুদিন আগে সাবেক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াও খালাস পেয়েছেন, এ আদেশ কি তার জন্যও প্রযোজ্য হবে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার বক্তব্যও তাই। আমার মনে হয়, হাইকোর্ট বা কোন কোর্টের পক্ষে সংবিধানের যে বিধান আছে তার বাইরে যাওয়ার উপায় নেই। আর কোন পথ খোলা আছে বলে আমার মনে হয় না।
×