ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাগবিই নিশার আশা-ভালবাসা...

প্রকাশিত: ০৪:৩৪, ২৯ নভেম্বর ২০১৮

রাগবিই নিশার আশা-ভালবাসা...

রুমেল খান ॥ ছেলেদের কলেজ রাগবি দলের কোচ একজন মহিলা! হ্যাঁ, বাংলাদেশে এমন বিস্ময়কর ঘটনাই ঘটেছে গত মঙ্গলবার। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক (অনুর্ধ-২০ বালক) কলেজ রাগবি প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে কবি নজরুল সরকারী কলেজ (ঢাকা)। ঢাকার পল্টন মাঠে অনুষ্ঠিত ফাইনালে তারা ৫-০ পয়েন্টে হাইমচর সরকারী মহাবিদ্যালয়কে হারায়। চ্যাম্পিয়ন দলের কোচ নিশা আক্তার। বয়স মাত্র ২২। বাংলাদেশের কলেজ রাগবিতে চ্যাম্পিয়ন কোন দলের প্রথম মহিলা কোচ হিসেবে নিশা গড়েছেন অনন্য এক মাইলফলক। নিশা নিজেও কবি নজরুল সরকারী কলেজে পড়েন অনার্স ফাইনাল (চতুর্থ বর্ষে) ইয়ারে। বিষয় দর্শন। জন্ম ও নিবাস ঢাকার কেরানীগঞ্জে। বাবা গোলাপ চাঁন, অবসরপ্রাপ্ত সাবেক চাকরিজীবী। গৃহিণী মা ঝর্ণা বেগম। একমাত্র ছোট ভাই মোহাম্মদ আকাশ (বয়স ১৮)। নিশা ভাগ্যবতী, রাগবি খেলা শুরু করার ক্ষেত্রে তার পরিবার তাকে কখনই কোন বাধা দেয়নি, বরং পূর্ণ সমর্থন দিয়েছে। কিভাবে রাগবিতে এলেন নিশা? জনকণ্ঠের সঙ্গে একান্ত আলাপনে নিশা বলেন, ‘২০১৪ সালের ডিসেম্বর। কবি নজরুল কলেজে প্রথমবর্ষে পড়ছি। তখন দেশে প্রথমবারের মতো মেয়েদের নিয়ে বিজয় দিবস রাগবি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই আসরে অংশ নিয়ে প্রথমবারের মতো রাগবি খেলি। দল রানার্সআপ হয়। খেলাটি তখন বেশ ভাল লেগে যায়। খেলাটি বেশ ডিফারেন্ট, কিন্তু অনেক ইন্টারেস্টিং।’ এরপর নিশা প্রথমবারের মতো খেলেন জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে। সেটা অব্যাহত থাকে তারপরের বছরেও। এই দুই আসরেই তিনি প্রতিযোগিতার সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার লাভ করেন এবং ফেডারেশনের নজর কাড়েন। এরপর ক্লাব রাগবিতে ক্যারিয়ার গড়ার পালা। ২০১৫ সালে যোগ দেন ফ্লেইম গার্লস ক্লাবে। সেই থেকে এখনও এই ক্লাবেই আছেন। ২০১৭ সালে ক্লাবের অধিনায়কত্ব করেছেন। গর্বভরে নিশা বলেন, ‘আমি জয়েন করার পর থেকে ক্লাবটি এ পর্যন্ত যে ৬টি টুর্নামেন্ট খেলেছে তার প্রতিটিতেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।’ ফেডারেশন ও কোচিংয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত হলেন কিভাবে? ‘ফেডারেশন আমিসহ বেশ ক’জন মেয়েকে (৮ জন) বাছাই করে লেভেল-১ কোচিং কোর্স করায়। এভাবেই কোচ হওয়ার পথে অগ্রসর হই। এরপর ভারতের ভূবনেশ্বরে গিয়ে আরেকটি কোচিং কোর্স করি।’ কোচ হিসেবে শিরোপা জিতে এই যে সফলতা, সেটা কিন্তু একবারেই হয়নি। সাফল্যটা এসেছে তৃতীয় চেষ্টায়। ২০১৮ সালে অনুর্ধ-১০ বালক রাগবি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। নিশা কেএম বশির সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় দলের কোচ হন। সেবার তার দল ১ ম্যাচ ড্র করে। দলও সেমিতে উঠতে ব্যর্থ হয়। এরপর অনুর্ধ-১৬ স্কুল (বালক) রাগবি প্রতিযোগিতায় একই দলের কোচ হিসেবে অংশ নেন। কিন্তু এই আসরেও তার দল ব্যর্থ হয়। বিদায় নিতে হয় প্রথম রাউন্ডেই। তারপর অনুর্ধ-২০ (বালক) কলেজ রাগবিতে কবি নজরুল কলেজের কোচ হন। এবার নিশার দল অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়। ‘এই আসরে আমাদের বিপক্ষে কোন ম্যাচে কোন দলই একটি পয়েন্টও পায়নি।’ নিশার গর্বিত উচ্চারণ। তিনটি আলাদা দলকে কোচিং করানোর অভিজ্ঞতা-সমস্যা প্রসঙ্গে নিশার মূল্যায়ন, ‘বাচ্চাদের দলটিকে কোচিং করানো ছিল বেশ কঠিন। তবে ওরা বেশ মেধাবী। দ্রুত শিখতে পারতো। অনুর্ধ-২০ দলকে কোচিং করাতেও সমস্যা হয়েছিল। আমি মেয়ে বলে ছেলেরা শুরুতে বেশ আন ইজি ফিল করতো। তবে সেটা ছিল সাময়িক। কেননা একই কলেজের ছাত্র হওয়াতে ওরা আগে থেকেই আমার পরিচিত ছিল। তাছাড়া আমার কলেজ কর্তৃপক্ষও আমাকে বেশ সাহায্য ও উৎসাহ জুগিয়েছে।’ অনুর্থ-২০ দলকে মাত্র চারদিন কোচিং করাতে পেরেছেন নিশা, ‘ফেডারেশন আমাকে দল দিয়ে বলেছিল সাতদিন সময় পাব। কিন্তু আমার পরীক্ষা থাকায় প্রথম তিনদিন কোচিং করাতে পারিনি। তারপরও যে দলটি চ্যাম্পিয়ন হয়েছে এ জন্য আমি খুবই খুশি। খেলোয়াড়রা আত্মবিশ্বাসী ছিল। ওদের প্রতিনিয়ত মানসিকভাবে উজ্জীবিত করার চেষ্টা করেছি।’ এখনও বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা রাগবি দল গঠিত হয়নি। যদি হয়, তাহলে ওই দলের হয়ে খেলাই নিশার প্রধান স্বপ্ন।। আরও ৭-৮ বছর পর্যন্ত খেলা চালিয়ে যেতে চান রাইট উইঙ্গার পজিশনে খেলা নিশা। খেলোয়াড়ী জীবন শেষ করে কোচ হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে চান। মোট কথা, রাগবির সঙ্গেই থাকতে চান তিনি।
×