ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে কড়াকড়ি আরোপ করা হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৪:২৭, ২৯ নভেম্বর ২০১৮

সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে কড়াকড়ি আরোপ করা হচ্ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ এতটাই বেড়ে গেছে যে বর্তমানে বছরে এ ঋণের সুদবাবদ সরকারকে ব্যয় করতে হচ্ছে ৫৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। সরকারী চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতায় বছরে যে পরিমাণ অর্থ খরচ হয় তার থেকেও এই ব্যয় ১ হাজার কোটি টাকা বেশি। তাই শীঘ্রই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের লাগাম টানতে চায় সরকার। এ জন্য এই খাতে বিনিয়োগে কড়াকড়ি আরোপ করা হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে হলে অর্থের উৎস জানাতে হবে। এটি কার্যকর করা হবে আগামী জানুয়ারিতে। গত মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত সরকারী ফিসক্যাল কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল সম্পদ কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আগামী ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরা হচ্ছে ৮ শতাংশ। সরকার আশা করছে, চলতি (২০১৮-১৯) অর্থবছরে দেশে বাম্পার ফলন হওয়ার জন্য প্রাক্কলিত প্রবৃদ্ধি কোনভাবেই কমবে না। ফলে জিডিপির প্রাক্কলিত চলতি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ ধরে রাখা যাবে। তবে উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ ছাড়ের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের নিষেধাজ্ঞা থাকায় প্রবৃদ্ধির ওপর কতটা নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে তা নিয়েও সরকারের নীতি নির্ধারকরা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল সম্পদ কমিটির সভাটি হয়। সভা শেষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল। দেশের অর্থনৈতিক পর্ষবেক্ষণে ভাল অবস্থায় উঠে এসেছে। তিনি মনে করেন চলতি অর্থবছরে সরকার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ ধরে রাখতে পারবে। তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর কোন পরিকল্পনা সরকারের নেই। তবে নির্বাচনের পর জানুয়ারি মাসে সঞ্চয়পত্রের লাভের হার কমানো হতে পারে। মুহিত বলেন, দেশের সঞ্চয়পত্রে সবার বিনিয়োগের তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। যাতে কোন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে সরকারের সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে না পারে। এদিকে সভাসূত্রে জানা গেছে, সঞ্চয়পত্রের সুদবাবদ প্রতি বছর সরকারকে ব্যয় করতে হচ্ছে ৫৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি। যেখানে সরকারী চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতাবাবদ বছরে ব্যয় হয় ৫৪ হাজার কোটি টাকা। তাই সঞ্চয়পত্রকে দেশের অর্থনীতির জন্য মাথাব্যথার কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সূত্র জানায়, আগামী জানুয়ারি থেকেই জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদফতরের সব কার্যক্রম অটোমেশন (অনলাইন) হয়ে যাবে। এ অটোমেশনে ন্যাশনাল আইডি কার্ডের সঙ্গে লিংক থাকবে। তখন সঞ্চয়পত্রে লেনদেন পেপারলেসভাবে হবে। তাই কেউ সীমার অতিরিক্ত সঞ্চয়পত্র কিনছে কি না সেটি সহজেই ধরা পড়বে। অটোমেশন হয়ে গেলে কার সঞ্চয়পত্র আছে তার চৌদ্দগোষ্ঠীর তথ্য পাওয়া যাবে। সঞ্চপত্রে কালো টাকা বিনিয়োগরোধে ৫০ হাজার টাকার বেশি কেউ সঞ্চয়পত্র কিনতে চাইলে তাকে চেকের মাধ্যমে টাকা পেমেন্ট করতে হবে। কারণ ব্যাংকে লেনদেনের ক্ষেত্রে কোথা থেকে টাকা আসল সেটা জিজ্ঞাসা করা হয়। এদিকে সভার একটি সূত্র জানায়, ব্যাংকে আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খোলার হার চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বের) আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৭৫ শতাংশ কমে গেছে। এর কারণ হিসেবে সভায় বলা হয়, নির্বাচনের অনিশ্চিয়তা এবং দেশের বাম্পার ফলনের আশায় ব্যবসায়ীরা নতুন করে আর এলসি খুলতে চাচ্ছেন না। এমনকি মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির এলসি খোলার হারও কমেছে আশঙ্কাজনকভাবে। এছাড়া দেশে চলতি হিসেবে ঘাটতির কারণে দেশের পণ্যের মূল্যসূচকের ওপর বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এ নিয়েও আশঙ্কা করছে ফিসক্যাল কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল। সভাসূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে দেশের চলতি হিসাবে ঘাটতি রয়েছে ১৩ দশমিক ৮৫ মিলিয়ান ডলার। গত অর্থবছরে চলতি হিসাবে ঘাটতি দাঁড়িয়েছিল ৯ দশমিক ৭৮ বিলিয়ান ডলার। এভাবে ঘাটতি হলে দেশের মূল্যস্ফীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তবে দেশের উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ ছাড়ের পরিমাণ কমে যাওয়া বাজেটে ঘাটতি না হয়ে উদ্বৃত্ত হয়েছে, যার পরিমাণ হচ্ছে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা। সভায় চলতি অর্থবছরে চলতি হিসাবে বিশাল ঘাটতি হওয়া সত্ত্বেও আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। চলতি বছর অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের বৈঠকে আগামী অর্থবছরে ব্যাংকের ঋণ প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১৬ দশমিক ৭ শতাংশ। কিন্তু বর্তমানে এ প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ১৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
×