ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আইপিও টাকা ব্যবহার না করেই বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ২৯ নভেম্বর ২০১৮

আইপিও টাকা ব্যবহার না করেই বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে উত্তোলিত অর্থ ব্যবহার না হতেই বোনাস শেয়ার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো। এক্ষেত্রে কোম্পানির লভ্যাংশ প্রদানের সক্ষমতা না থাকা ও উদ্যোক্তাদের টাকা না ছাড়তে চাওয়ার মনোভাবকে দায়ী করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তবে অনেক কোম্পানিকে আইনী বাধ্যবাধকতার কারণেও বোনাস শেয়ার দিতে হয়। কারণ আইপিও ফান্ড ব্যবহার করতে না পারলেও আইপিওধারী শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ প্রদান করতে হয়। অন্যথায় ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে নামতে হয়। সাধারণত ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি, নতুন বিনিয়োগ বা আর্থিক সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য নতুন করে অর্থের প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো পুনঃগণপ্রস্তাব (আরপিও), রাইট শেয়ার, ডিবেঞ্চার বা বন্ডের মাধ্যমে বাজার থেকে নতুন করে মূলধন সংগ্রহ করতে পারে। কিন্তু এ সব পদ্ধতিতে মূলধন বাড়াতে হলে নানা ধরনের আইনী পদ্ধতি পরিপালন ও কোম্পানিকে জবাবদিহিতার মধ্যে থাকতে হয়। কিন্তু বোনাস শেয়ারের মাধ্যমে মূলধন বাড়ানোর ক্ষেত্রে কোন ধরনের জবাবদিহিতা না থাকার কারণে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত অধিকাংশ কোম্পানি যৌক্তিক কারণ ছাড়াই বোনাস শেয়ার ইস্যু করে মূলধন বাড়ায়। সম্প্রতি শেয়ারবাজার থেকে আইপিওর মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করছে এ ধরনের কোম্পানিগুলোর মধ্যেও একই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। আইপিওর অর্থ ব্যয় না হতেই কোম্পানিগুলো বোনাস শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে মূলধন বাড়াচ্ছে। বোনাস শেয়ারের মাধ্যমে মূলধন বাড়ানো হলে কোম্পানি থেকে কোন ধরনের ক্যাশ আউটফ্লো হয় না। কিন্তু নগদ লভ্যাংশ দেয়া হলে ক্যাশ আউটফ্লো হয়। মূলত সমুদয় মুনাফা কোম্পানিতে রেখে দেয়ার কৌশল হিসেবে বোনাস শেয়ার ইস্যু করছে কোম্পানিগুলো। এতে কোম্পানির মূলধন বাড়লেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, সে হারে কোম্পানিগুলোর মুনাফার প্রবৃদ্ধি হয় না। এ বিষয়ে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী এ বিষয়ে বলেন, একটি কোম্পানি যদি সত্যিই মুনাফা করে তাহলে বোনাস শেয়ার প্রদান করতে পারে। তবে নগদ লভ্যাংশ প্রদানের ওপর একটি কোম্পানির সক্ষমতা বা ভিত্তি কতটা মজবুত তা নির্ভর করে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। আইপিওর অর্থ ব্যবহার না হতেই কোম্পানিগুলোকে বোনাস শেয়ার প্রদান করতে দিয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ভুল করছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু আহমেদ। তিনি বলেন, এসব কোম্পানি শুধু বোনাস শেয়ার দিয়ে মূলধন বাড়াচ্ছে কিন্তু ব্যবসায় উন্নতি হয় না। আর বোনাস শেয়ার দেয়ার পরের বছর গিয়ে কোম্পানিগুলোর ইপিএস কমে যায়, যার ফলে বিনিয়োগকারীরা লোকসানের কবলে পড়েন। এএফসি ক্যাপিটালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাহবুব এইচ মজুমদার বলেন, উদ্যোক্তা পরিচালকেরা মূলত কোম্পানি থেকে টাকা বাহির করতে না চাওয়ার মনোভাবের কারণেই বোনাস শেয়ার ইস্যুর ঘোষণা দিয়ে থাকে। তবে অনেক কোম্পানির নগদ লভ্যাংশ প্রদানের সক্ষমতাও থাকে না। এছাড়া একটি নতুন কোম্পানি আইপিও ফান্ড ব্যবহারের সুযোগ না পেলেও লভ্যাংশ দেয়ার বাধ্যবাধকতায় বোনাসে ঘোষণা দেয়। সম্প্রতি আইপিওর মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করার পর বোনাস শেয়ার ইস্যু করে যেসব কোম্পানি মূলধন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কাট্টালি টেক্সটাইল, ইন্দোবাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস, এমএল ডাইং, ভিএফএস থ্রেড ডাইং, এসকে ট্রিমস এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, ইন্ট্র্যাকো রিফুয়েলিং স্টেশন, এ্যাডভেন্ট ফার্মা ও কুইন সাউথ টেক্সটাইল মিলস।
×