ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

নুর আলম ইসলাম মানিক

জীবন যখন মৃত্যুর ফাঁদে

প্রকাশিত: ০৩:৪৭, ২৯ নভেম্বর ২০১৮

জীবন যখন মৃত্যুর ফাঁদে

বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ। দেশে উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে চলেছে জনসংখ্যা। এবং জনসংখ্যা যতই বৃদ্ধি পাচ্ছে ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে অপরাধ প্রবণতা। পণ্য সামগ্রীতে ভেজাল মেশানো একটি সামাজিক অপরাধে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের বাজারগুলো এখন ভেজাল পণ্যে সয়লাব করছে। এখন ওষুধে ও মেশানো হচ্ছে ভেজাল, যেখানে ওষুধ হচ্ছে জীবন রক্ষাকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ওষুধে ভেজালের ফলে আমাদের জাতীয় জীবনে জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। অধিক মুনাফার লোভে কিছু দুষ্কৃতকারী যখন রাতারাতি আঙ্গুর ফুলে কলাগাছ হতে চায় তখন সে আশ্রয় নেয় অনৈতিকতার ও অসৎ পথের। ফলে সমাজে উদ্ভব ঘটে ভেজাল নামক বিশৃঙ্খলার। ওষুধের মধ্যে যে হারে বিভিন্ন উপাদান থাকার কথা সেগুলো না থাকলেই ওই ওষুুধকে বলা হয় মানহীন। আর মানহীন ওষুধই বিষ। মানহীন সকল ভেজাল ওষুধের ব্যবহার মানুষের জীবনকে ধীরে ধীরে ঠেলে দেয় মৃত্যুর মুখে। এ যেন অধিক মুনাফার লোভে জীবনের বলি দেয়ার জন্য এক পরিকল্পিত ফাঁদ। এর বিরূপ প্রভাব জনজীবনে সর্বস্তরেই পড়ছে। তাহলে যদি প্রশ্ন করা হয়, জনগণ জাগ্রত হচ্ছে না কেন? এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলছে না? উত্তরে উদাহরণ হিসেবে বলব, আমরা মানুষকে দ্রব্য সামগ্রীর দাম বৃদ্ধিতে প্রতিবাদ করতে দেখি, যাতায়াতের ভাড়া বৃদ্ধিতে প্রতিরোধ করতে দেখি, গ্যাস অথবা বিদ্যুত বিলে বাড়তি অর্থ আদায়ে উদ্বিগ্ন হতে দেখি; কিন্তু ওষুধের দাম বৃদ্ধিতে কেন কোন প্রতিক্রিয়া দেখি না? কারণ একটাই, ‘মানুষ ভয় পায় মৃত্যুকে।’ আর জনগণের এই ভয়, ভ্রান্ত ধারণা ও অসচেতনতাকে কাজে লাগিয়ে চলছে ভেজাল ওষুধের উৎপাদন। যা খুবই উদ্বেগজনক। মানুষ রোগ নিরাময়ের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খায়; কিন্তু সেই ওষুধেই যদি ভেজাল থাকে তবে মানুষ কোথায় যাবে? কাকে বিশ্বাস করবে? বাংলাদেশের বিভিন্ন ওষুধ কারখানাগুলোয় ২৭০০০ ব্র্যান্ডের বেশি ওষুধ উৎপাদিত হয়ে থাকে। তাই জীবন রক্ষাকারী ওষুধ শিল্পকে আরও গতিশীল নিয়ন্ত্রণ করা ও মান নির্ণয়ে ল্যাবের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। বাংলাদেশ এখন ওষুধ সম্ভাবনাময় শিল্প। তাই নকল, ভেজাল, নিম্নমানের, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের ওপর আইন করলেই চলবে না। তার যথার্থ প্রয়োগ ঘটাতে হবে। চিকিৎসা খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি বন্ধ ও সেবার মান বাড়াতে তদারকির বিকল্প নাই। ওষুধে ভেজাল সংস্কৃতির ভয়াবহতা থেকে জনগণকে সচেতন করতে হবে। ভেজালকারীদের গুরুঅপরাধে লঘুদ- হওয়ায় একই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আবার লিপ্ত হয় ভেজাল কর্মে। তাই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এরূপ কিছু দৃষ্টান্ত কার্যকর হলে এ ঘৃণ্য সংস্কৃতি বন্ধ হবে বলে বিশ্বাস। মানববিধ্বংসী এ বিষ প্রতিরোধে অনুরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ একদিকে সরকারের জন্য প্রশংসনীয় হবে অন্যদিকে দেশ ও জাতির উন্নতি সাধিত হবে। শ্রীনগর, মুন্সীগঞ্জ থেকে
×