ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কঠোর নিয়ন্ত্রণ জরুরি

প্রকাশিত: ০৩:৪৫, ২৯ নভেম্বর ২০১৮

কঠোর নিয়ন্ত্রণ জরুরি

অতি পরিচিত ও প্রয়োজনীয় একটি দ্রব্যের নাম ওষুধ, যা মানুষের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে সহায়তা করে। এটি সকল শ্রেণীর মানুষের কাছে সমানভাবে মূল্যায়ন হয়ে থাকে। চিকিৎসা বিজ্ঞান প্রযুক্তির ব্যবহারে নতুন নতুন রোগ নির্ণায়ক যন্ত্র আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছে। শুধু যন্ত্র নয়, ওষুধ আবিষ্কারেও তারা পিছিয়ে নেই। রোগ নিরাময়ে প্রয়োজনে হাতের নাগাল থেকে খুব সহজেই মানুষ ওষুধ সংগ্রহ করতে পারছে। ওষুধ ব্যবহারে মানুষ সুস্থ হচ্ছে, পাচ্ছে নতুন এক জীবন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে এই ওষুধই অনেক সময় কেড়ে নিচ্ছে মানুষের জীবন। ভেজাল ওষুধ তাতে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। জীবন রক্ষাকারী ওষুধের ভেজাল, নকল ও নিম্নমানের বিস্তার রোধ কোনক্রমেই প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। কার্যকরী তদারকি ও পদক্ষেপের অভাবে ওষুধ খাতে চলছে ভয়াবহ নৈরাজ্য। যে কারণে দেশের মানুষের জীবন হুমকির মুখে পড়তে চলেছে। বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশী ওষুধের সুনাম ও রফতানির সাফল্যের পরও দেশজুড়ে ওষুধের এই নৈরাজ্য বন্ধ করা যেন অসম্ভব একটি ব্যাপার। একশ্রেণীর লাইসেন্সধারী বা লাইসেন্সবিহীন কোম্পানি অনবরত ভেজাল ওষুধ উৎপাদন করে যাচ্ছে যা উদ্বেগজনক হওয়া সত্ত্বেও কোনভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। সম্প্রতি ল্যানসেট প্রকাশিত এক গবেষণা প্রবন্ধে জানা যায়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এক-তৃতীয়াংশ ম্যালেরিয়ার ওষুধ নকল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ২০১০ সালে সারা বিশ্বে ম্যালেরিয়ায় ৬ লাখ ৫৫ হাজার মানুষ মারা যায়। অন্যদিকে গবেষকরা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাতটি দেশে পাঁচ ধরনের ১৪৩৭টি ম্যালেরিয়ার ওষুধের নমুনা পরীক্ষা করে দেখতে পান, এসব ওষুধের ৩৬ শতাংশ নকল। এসব নমুনার মধ্যে ৩০ শতাংশ ওষুধে কোন উপকরণই নেই। নকল, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ এসব মৃত্যুর জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে দায়ী বলে মনে করা হয়। ওষুধ প্রশাসনের তথ্য মতে, দেশে এ্যালোপ্যাথিক ওষুধ কারখানার সংখ্যা ২৮১টি, ইউনানির ২৬৬টি, আয়ুর্বেদিক ২০৭টি, হোমিওপ্যাথিক ৭৯টি ও হারবাল ৩২টি। একটি ওষুধ একাধিক কোম্পানির তৈরির অনুমতি আছে। যেমন, শুধু প্যারাসিটামল ট্যাবলেট তৈরি করে ১০৬টি কোম্পানি এবং প্যারাসিটামল সিরাপ তৈরি করে ২১টি কোম্পানি। এদিকে, এই ওষুধ বাজারজাত করা হচ্ছে দেশের প্রায় সোয়া দুই লাখ ওষুধের দোকানে। এর মধ্যে লাইসেন্স রয়েছে মাত্র ৬০ হাজার দোকানের। বাকি দোকানগুলোর কোন লাইসেন্স নেই। ফলে গুণগত মানসম্পন্ন ওষুধের পরিবর্তে নকল, ভেজাল ও নিম্নমানের এ্যান্টিবায়োটিক, স্টেরয়েড বা অন্যন্য ওষুধ বিক্রি হচ্ছে যা সেবন করলে জীবন বিপন্ন হতে পারে। বর্তমানে দেশে বছরে ওষুধ বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার কোটি টাকার। এর মধ্যে আড়াইশ কোটি টাকার ওষুধ ভেজাল। যা থেকে বোঝা যায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ কোম্পানিই ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ তৈরি করছে। কাপাসিয়া, গাজীপুর থেকে
×