ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হলি আর্টিজান হামলার বিচার

প্রকাশিত: ০৩:৪১, ২৯ নভেম্বর ২০১৮

হলি আর্টিজান হামলার বিচার

বিলম্বে হলেও রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ ও নৃশংস জঙ্গী হামলার বিচার শুরু হয়েছে। সোমবার ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারকের আদালতে আট আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে দায়ের করা হয়েছে মামলা। এর মধ্য দিয়ে ভয়াবহ ও মর্মান্তিক এই জঙ্গী হামলার বিচার শুরু হলো আনুষ্ঠানিকভাবে। আগামী ৩ ডিসেম্বর সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছে আদালত। আট আসামির মধ্যে ছয়জন কারাগারে, দু’জন পলাতক। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানে হলি আর্টিজান হামলার ঘটনায় ২ পুলিশসহ নিহত হন ২২ জন। হামলায় নিহতদের মধ্যে বাংলাদেশী ছাড়াও ছিলেন জাপান, ভারত ও ইতালির নাগরিক। ওই রাতে সেখানে অভিযান চালাতে গিয়ে জঙ্গীদের বোমায় নিহত হন অসীম সাহসী দুই পুলিশ কর্মকর্তা। আরও ৩১ পুলিশ সদস্য আহত হন। শ্বাসরুদ্ধকর এই হামলা ও জিম্মি পরিস্থিতির অবসান ঘটে পরদিন সকালে সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানের মধ্য দিয়ে। হামলার ধরন ও ভয়াবহতায় এটি সঙ্গে সঙ্গে প্রায় আন্তর্জাতিক মৌলবাদী জঙ্গী গোষ্ঠীর নৃৃশংস হামলার রূপ পায় এবং আইএস এর দায় স্বীকার করে। সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য তা অস্বীকার করা হয়। দীর্ঘ তদন্ত শেষে গত ২৩ জুলাই এ মামলার অভিযোগপত্র জমা দেয় ঢাকা মহানগর কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)। মোট সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে ২১১ জনের। যাদের মধ্যে ১৪৯ জন প্রত্যক্ষদর্শী। ধৃতদের সবাই নব্য জেএমবির সদস্য। হলি আর্টিজানের ঘটনার পর আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন অভিযানে নিহত হয় আট জঙ্গী, যারা কোন না কোনভাবে এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত। সত্য বটে ভয়াবহ, নৃশংস ও জঘন্য এই হামলার পর বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভীষণভাবে ক্ষুণœ হয়, যা পুনরুদ্ধারে যথেষ্ট বেগ পেতে হয় সরকারকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরন্তর তৎপরতায় বর্তমানে জঙ্গী ও সন্ত্রাসী তৎপরতা যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণে বলা চলে। তবে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জঙ্গীরা যে তাদের অপতৎপরতা বাড়াবে না, এমন কথা হলফ করে বলা যায় না। সে অবস্থায় হলি আর্টিজানে হামলায় দ্রুত বিচার প্রত্যাশিত বৈকি। বর্তমান সরকার ধর্মীয় উগ্রপন্থাসহ সব রকম জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশে ধর্মীয় উগ্র মতবাদের কোন স্থান নেই। প্রকৃতপক্ষে জামায়াতে ইসলামী ও শিবিরের হাত ধরে দেশে ধর্মীয় রাজনীতি ও জঙ্গীবাদের উদ্ভব ঘটে। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে কুখ্যাত জামায়াত-শিবির হানাদার পাকিস্তান সেনাবহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর মাধ্যমে প্রসার ঘটায় জঙ্গী সন্ত্রাসী কার্যক্রমের। একাত্তরে পরাজিত হলেও পঁচাত্তর পরবর্তী সামরিক শাসনপুষ্ট সরকারগুলোর সহায়তায় দেশে ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী কার্যক্রমের বিকাশ ঘটতে থাকে। তবে আশার কথা এই যে, এ দেশের মাটিতে তা কখনই শিকড় গেঁড়ে বসতে পারেনি এবং জনসমর্থন পায়নি। ফলে দেশী-বিদেশী গডফাদারসহ আন্তর্জাতিক সহায়তায় সময়ে সময়ে বিচ্ছিন্নভাবে জঙ্গী ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালিত হলেও ব্যর্থ হয়েছে চূড়ান্তভাবে। গুলশান, শোলাকিয়া ও অন্যান্য স্থানে ছোট-বড় কয়েকটি হামলার পর এদেশীয় জঙ্গীদের সঙ্গে কুখ্যাত আইএস, আল কায়েদা, আল শামস, জইশ-ই-মোহাম্মদ, তালেবান ইত্যাদির সঙ্গে যোগাযোগ ও মদদের কথা দেশে-বিদেশে উচ্চারিত হলেও সেসব কখনই প্রমাণিত হয়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও বরাবরই তা অস্বীকার করে আসছে। তবু এতে আত্মপ্রসাদের কিছু নেই। দেশীয় জঙ্গীদের অস্ত্র ও অর্থের উৎসসহ উৎসাহদাতা, মদদদাতাসহ আন্তর্জাতিক যোগাযোগের বিষয়টি সর্বদাই নজরদারির দাবি রাখে। অর্থাৎ এটি একটি নিরন্তর ও অব্যাহত প্রক্রিয়া। জঙ্গী সন্ত্রাসীরা শুধু অস্ত্র ও বোমাই নয়, বরং প্রযুক্তি ব্যবহারেও অত্যন্ত দক্ষ। সে ক্ষেত্রে তাদের মোকাবেলা করতে হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও সর্বদাই সতর্ক ও তৎপর হতে হবে। সর্বোপরি সর্বস্তরে সর্বপর্যায়ে তৈরি করতে হবে জনসচেতনতা। টঙ্গী, কুমিল্লা ও শাহজালাল ক্যাম্পাসে জনপ্রতিরোধের বিষয়টি লক্ষণীয়। দেশ যদি আধুনিক শিক্ষা-সংস্কৃতি ও অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অর্জনের পথে অগ্রসর হতে পারে, তাহলে এমনিতেই জঙ্গীবাদ নির্মূল হতে বাধ্য।
×