ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মেয়র হানিফের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

প্রকাশিত: ০৬:১২, ২৮ নভেম্বর ২০১৮

মেয়র হানিফের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ স্নেহভাজন, জনতার মঞ্চের রূপকার, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ হানিফের আজ ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী। ২১ আগস্ট ভয়াল গ্রেনেড হামলায় মানবঢাল রচনা করে বঙ্গবন্ধুর কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে রক্ষা করতে পারলেও তিনি নিজেকে বাঁচাতে পারেননি। মস্তিষ্কসহ সর্বাঙ্গে বিঁধে থাকা ঘাতক গ্রেনেডের স্পিøন্টারের দুঃসহ যন্ত্রণা নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০০৬ সালের এই দিনে ঢাকার এ্যাপোলো হাসপাতালে মৃত্যুর কাছে পরাজিত হন। মোহাম্মদ হানিফ যৌবনের শুরু থেকে আমৃত্যু বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। দলীয় রাজনীতি করলেও তার উদার চিন্তা-চেতনা, প্রখর ব্যক্তিত্ব আর সংবেদনশীল মনোভাবের কারণে দলমত নির্বিশেষে সব মানুষের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা ছিল অপরিসীম। অতুলনীয় সাংগঠনিক দক্ষতা এবং সম্মোহনী বাগ্মিতা ঈর্ষণীয় জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন তিনি। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় মারাত্মক আহত হয়েও রাজনীতি থেকে দূরে রাখা যায়নি এই নেতাকে। মস্তিষ্কের গভীরে গ্রেনেডের স্পিøন্টার বিঁধে থাকায় সিঙ্গাপুরেও অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হয়নি। দুঃসহ যন্ত্রণা সহ্য করেই রাজনৈতিক জীবনে সক্রিয় থেকেছেন মোহাম্মদ হানিফ। অসুস্থাবস্থায় ২০০৬ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি মুক্তাঙ্গনের সমাবেশে সভাপতির বক্তব্য রাখার সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হন। এরপর আর সুস্থ হয়ে রাজনীতির মাঠে ফিরে আসতে পারেননি তিনি। দেশে-বিদেশে দীর্ঘ চিকিৎসা শেষে ২০০৬ সালের এই দিনে মৃত্যুর কাছেই হার মানেন মোহাম্মদ হানিফ। চির অবসান ঘটে তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের। ১৯৪৪ সালের পহেলা এপ্রিল সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম মোহাম্মদ হানিফের। ছাত্রাবস্থায় ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী, ধারাবাহিক পথচলায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর একান্ত সচিবের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। একান্ত সচিব থাকাকালীন ঐতিহাসিক ছয়দফা আন্দোলনের প্রস্তুতি, ছয়দফা মুক্তি সনদ প্রণয়ন এবং প্রচারে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। পরবর্তীতে ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ‘৭০-এর নির্বাচন, মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সকল আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথের প্রথম কাতারে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন মোহাম্মদ হানিফ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু মোহাম্মদ হানিফকে অত্যন্ত স্নেহ ও ভালবাসতেন। তাই স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু তার ঢাকা-১২ আসন ছেড়ে দিয়ে মোহাম্মদ হানিফকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত করিয়ে আনেন। পরবর্তীতে সংসদে হুইপেরও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৭৬ সালে মোহাম্মদ হানিফ ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। মাঝখানে কিছু সময় বিরতি দিয়ে আমৃত্যু ৩০ বছর এই দায়িত্ব পালন করেন। ‘৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন মোহাম্মদ হানিফ। ১৯৯৪ সালে বিপুল ভোটের ব্যবধানে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়র হন তিনি। তার নেতৃত্বেই ’৯৬ সালের মার্চের শেষ সপ্তাহে ‘জনতার মঞ্চ’ গঠন করে তৎকালীন বিএনপি সরকারের পতনকে ত্বরান্বিত করেন। পরে ’৯৬ সালের ১২ জুন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোট পেয়ে দেশ পরিচালনার সুযোগ পায়। মোহাম্মদ হানিফের ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণ, মেয়র মোহাম্মদ হানিফ মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন, মেয়র হানিফ স্মৃতি সংসদ সদস্যসহ বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে- সকাল সাড়ে ১০টায় আজিমপুর কবরস্থানে কবর জিয়ারত ও দোয়া মাহফিল, আলোকচিত্র প্রদর্শনী, দুপুর ১২টায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নগর ভবনে স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিলসহ দুই সপ্তাহব্যাপী স্বাস্থ্য পক্ষ থেকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান। বাদ আছর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের অস্থায়ী কার্যালয়ে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। প্রয়াত রাজনীতিক মোহাম্মদ হানিফের একমাত্র পুত্র ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা আলহাজ মোহাম্মদ সাঈদ খোকন দেশবাসীর কাছে তার বাবার জন্য দোয়া চেয়েছেন।
×