ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

রবীন্দ্র সম্মাননা পেলেন আহমদ রফিক ও ফাহমিদা খাতুন

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ২৮ নভেম্বর ২০১৮

রবীন্দ্র সম্মাননা পেলেন আহমদ রফিক ও ফাহমিদা খাতুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্যসুন্দর/মহিমা তব উদ্ভাসিত মহাগগনমাঝে...। এভাবেই সুরের আশ্রয়ে সুন্দরের আহ্বানে শুরু হলো দুই দিনের রবীন্দ্র উৎসব। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক, শিক্ষা ভাবনা, পল্লী উন্নয়ন, বিশ্বশান্তিসহ পাঁচ বিষয়ের সেমিনারের সঙ্গে রবীন্দ্রসঙ্গীত, কবিতা আবৃত্তি ও নৃত্য পরিবেশনায় সাজানো হয়েছে উৎসব। রবীন্দ্র একাডেমি আয়োজিত সে উৎসবে রবীন্দ্র সম্মাননা প্রদান করা হলো রবীন্দ্র গবেষক ও ভাষা সংগ্রামী আহমদ রফিক এবং রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী ফাহ্্মিদা খাতুনকে। রবীন্দ্র গবেষণায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পুরস্কার পেলেন আহমদ রফিক এবং রবীন্দ্রসঙ্গীত প্রসারে বিশেষ অবদানের জন্য সম্মাননা পেলেন ফাহ্্মিদা খাতুন। ‘হৃদয় বিমল হোক, প্রাণ সবল হোক’ স্লোগানে মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে উৎসবের সূচনা হয় নৃত্যের নান্দনিকতায়। উৎসব উদ্বোধন করেন জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ড. মুহাম্মদ সামাদ। স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির সাধারণ সম্পাদক বুলবুল মহলানবীশ। সভাপতিত্ব করেন একাডেমির সভাপতি আজিজুর রহমান আজিজ। অতিথিরা ফাহ্মিদা খাতুনের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন। সম্মাননা প্রাপ্তির অনুভূতি ব্যক্ত করে ফাহ্্মিদা খাতুন বলেন, আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে সঙ্গীতচর্চা করতে হয়েছে। এখন যারা সঙ্গীতচর্চা করছে তারা যতটুকু সুযোগ পাচ্ছে আমরা সেই সুযোগটুকু পাইনি। সব বাধা পেরিয়ে আমারা এ পর্যায়ে এসেছি। সেই বিবেচনায় নতুন প্রজন্মের শিল্পীরা গান শেখার অনেক সুযোগ পাচ্ছে। সে সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে হবে। উদ্বোধনী বক্তব্যে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, রবীন্দ্রনাথের নিজের কাজের প্রতি অতৃপ্তি ছিল। তবে তিনি বলতেন, বাঙালীকে আমার গান গাইতে হবে, ছোটগল্প পড়তে হবে। তার সেই ভবিষ্যদ্বাণী অনেকটাই সত্য হয়েছে। কারণ, রবীন্দ্রনাথ পাঠের চেয়ে শোনাটাই বেশি হয়। এই প্রেক্ষাপটে যদি পাঠ্যাভাস বাড়ে তাহলে বোঝা যাবে, তার রচনার মধ্যে কত মণিমুক্তা ছড়িয়ে আছে। তার সৃষ্টিশীল জীবন আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করবে, সামনের দিকে চালিত করবে। গওহর রিজভী বলেন, আজকের এ আয়োজনে ফাহ্মিদা খাতুনের মতো একজন শিল্পীর সঙ্গে এক মঞ্চে বসেছি, এটাই অনেক বড় প্রাপ্তি। মুহাম্মদ সামাদ বলেন, আমাদের জীবনের সবক্ষেত্রে এবং প্রতিদিনই রবীন্দ্রনাথ প্রাসঙ্গিক। তার গান, কবিতায় পবিত্র হয় আমাদের হৃদয়, প্রাণ হয় সজীব। অনুষ্ঠানের শুরুতে নৃত্যালোকের নৃত্যশিল্পীরা ‘সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে’, ‘আকাশ ভরা সূর্য তারা ও ‘প্রাণ হরিয়ে তৃষা হরিয়ে’ গানের সঙ্গে উদ্বোধনী নৃত্য পরিবেশন করেন। রবীন্দ্র একাডেমির শিল্পীরা পরিবেশন করেন ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে’। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে শুরু হয় প্রথম পর্বের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে নৃত্যন্দনের শিল্পীরা নৃত্য পরিবেশন করেন। একক কণ্ঠে গান শোনান ফাহিম হোসেন চৌধুরী, স্বপন দত্ত, শামা রহমান, ছায়া কর্মকার, অনিমা রায় ও রুমা চক্রবর্তী। কবিতার দোলায়িত ছন্দে একক কণ্ঠে আবৃত্তি করেন ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, সীমা ইসলাম ও মাহমুদা আখতার। একক নৃত্য পরিবেশন করেন অনিন্দিতা সাহা ঐশী ও কৃতিকা সাহা। শিশু কণ্ঠে রবীন্দ্রনাথের গল্প পাঠ করে শোনান অর্ণব, অনুভব, অর্পিতা, আনুশাহ ওয়াসিফ, জেবিন, রিমঝিম ও সারগাম। এরপর অনুষ্ঠিত হয় ‘রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা ভাবনা’ বিষয়ক সেমিনার। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ। রবীন্দ্র একাডেমির সহ-সভাপতি অধ্যাপক মনিরুজ্জামানের সভাপতিত্বে আলোচনা করেন অধ্যাপক শফিউল আলম ও অধ্যাপক মোবাশ্বেরা খানম। সেমিনার শেষে শুরু হয় দ্বিতীয় পর্বের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ পর্বে সঙ্গীত পরিবেশন করেন অনামিকা ত্রিপুরা, শাকিল হাশমী ও বিনু মাহবুবা। আবৃত্তি করেন বেলায়েত হোসেন ও রূপা চক্রবর্তী। সবশেষে ছিল রবীন্দ্রনাথের ‘বিসর্জন’ নাটকের মঞ্চায়ন। শুভাশীষ দত্ত তন্ময়ের পরিচালনায় নাটকটি মঞ্চস্থ করে বিবেকানন্দ নাট্যগোষ্ঠী। আজ বুধবার উৎসবের দ্বিতীয় দিনে থাকছে চারটি সেমিনার। বিষয়গুলো হলো ‘রবীন্দ্র নাটক’, ‘রবীন্দ্রনাথ ও ইংরেজি ভাষা : মূল রচনা, স্বকৃত অনুবাদ ও চিঠিপত্র’, ‘মানবতাবাদী-কর্মযোগী রবীন্দ্রনাথ ও পল্লী উন্নয়ন’ এবং ‘বিশ্বশান্তি ও রবীন্দ্রনাথ’। সন্ধ্যায় থাকছে সমাপনী অনুষ্ঠান। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান।
×