ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এ বছর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আর হচ্ছে না

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২৮ নভেম্বর ২০১৮

এ বছর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আর হচ্ছে না

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন চলতি বছর শুরু হওয়ার আর কোন সম্ভাবনা নেই। রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রশাসন, আন্তর্জাতিক মহল, আশ্রিতদের মনোভাব ইত্যাদি মিলে সেটাই স্পষ্ট প্রতীয়মান। উপরন্তু রোহিঙ্গারা এখন নতুন নতুন দাবি উত্থাপন করে মিছিল সমাবেশ করছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পেশ করেছে চার দফা। রোহিঙ্গারা এখন সরকারের প্রশাসনিক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে যেমন কথা বলছে, অনুরূপভাবে জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর বিপক্ষেও রয়েছে। কেননা, বাংলাদেশের প্রশাসন ও ইউএনএইচসিআর রোহিঙ্গাদের শান্তিপূর্ণ উপায়ে প্রত্যাবাসনে যে তৎপরতা চালিয়েছে তাতে তারা নাখোশ। তাদের অন্যতম দাবি মিয়ানমারে তাদের নাগরিকত্বের বিষয়টি নিশ্চিত না করা পর্যন্ত তারা নিজ দেশে ফিরে যাবে না। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ইস্যুটি দুদফায় থমকে যাওয়ার পর আরও অনিশ্চয়তার দিকে ধাবিত হলো। যা নিয়ে উখিয়া টেকনাফের জনসাধারণের কাছে উটকো ঝামেলাটির বিস্তৃতিই কেবল ঘটতে থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আশ্রিত রোহিঙ্গাদের পারিবারিক তথ্য সংবলিত স্মার্টকার্ড তৈরি কাজ মাঝপথে এমনিতেই থমকে গেছে। বাংলাদেশ সরকার ও ইউএনএইচসিআরের যৌথ উদ্যোগে পরিবারভিত্তিক রোহিঙ্গাদের জন্য স্মার্টকার্ড তৈরি ও প্রদান করা হচ্ছিল। রোহিঙ্গারা স্মার্টকার্ড গ্রহণের বিষয়ে শুরু থেকে অনীহা চালানোর পর পরবর্তীতে রীতিমতো আন্দোলন শুরু করেছে। এ আন্দোলন মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নয়, স্থানীয় প্রশাসন ও ইউএনএইসিআরের বিরুদ্ধে। রোহিঙ্গাদের পক্ষে যে চার দফা দাবি উত্থাপন করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পেশ করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে, রোহিঙ্গাদের স্মার্টকার্ড নিতে বাধ্য করা যাবে না। স্মার্টকার্ড নিতে না চাইলে রোহিঙ্গাদের আটক রাখা যাবে না। স্মার্টকার্ডে জাতিগত নাম ‘রোহিঙ্গা’ উল্লেখ করতে হবে। স্মার্টকার্ডে ‘জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক উল্লেখ করা যাবে না’ এবং বায়োডাটা (পারিবারিক তথ্য) সংগ্রহ করা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং ইতোমধ্যে যে সব তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে সেগুলো মিয়ানমার সরকারকে প্রদান করা যাবে না। শুধু তাই নয়, রোহিঙ্গারা এখন সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও বৈঠকের কথা বলতে শুরু করেছে। সরকারের বিভিন্ন স্তরে রোহিঙ্গাদের পক্ষে যে চিঠি দেয়া হয়েছে তাতে তারা উল্লেখ করেছে, ‘আমরা মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে শুধুমাত্র রোহিঙ্গা হওয়ার কারণে। যদিও রোহিঙ্গা শব্দটির জাতিগত স্বীকৃতি মিয়ানমার কেড়ে নিয়েছে আমরা সেই স্বীকৃতি চাই। কারণ এটা আমাদের জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্ববহ। উল্লেখ করা যেতে পারে ইউএনএইচসিআর রোহিঙ্গাদের যে তথ্য সংগ্রহ করেছে তা মিয়ানমার সরকারকে প্রদান করা হবে। কারণ প্রত্যাবাসনকালে এ তথ্যের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে ইতিবাচক তৎপরতা চালানো হলেও রোহিঙ্গারা গত ১৫ নবেম্বর জানিয়ে দিয়েছে তারা রাখাইনে ফিরে যাবে না। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ-মিয়ানমার এবং ইউএনএইচসিআরের সঙ্গে রোহিঙ্গা নেতাদেরও যুক্ত করতে হবে। এ জাতীয় দাবি তুলে গত সোমবার বিকেলে টেকনাফ, হোয়াইক্ষং, চাকমারকুল ও উখিয়ার বালুখালি, থাইনখালি, পালংখালি, কুতুপালং, ময়নারঘোনা, জামতলী ও শামলাপুর আশ্রয় ক্যাম্পে রোহিঙ্গারা আন্দোলন করেছে। তারা তিনদিনের আল্টিমেটাম দিয়েছে যা আজ বুধবার শেষ হবে। এসব ঘটনা নিয়ে ইউএইচসিআরের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে টেকনাফ চাকমারকুল রোহিঙ্গা শিবিরের ইনচার্জ মাহবুবুর রহমান ভুঁইয়া জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের চার দফা সম্বলিত চিঠি তার হাতে এসেছে। তিনি জানান, এ শিবিরে রোহিঙ্গাদের নতুন করে কার্ড দেয়ার জন্য তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। কিন্তু রোহিঙ্গাদের ধারণা এ কার্ড প্রত্যাবাসনের জন্য ব্যবহার করা হবে। তাই তারা ক্ষুব্ধ হয়ে আন্দোলন করছে। এদিকে, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন (আরআরসি) মোঃ আবুল কালাম জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তিনি অবগত আছেন। তিনি সরেজমিনে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন। আন্দোলনের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
×