ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কোন দল বা জোটের সব প্রার্থী এখনও চূড়ান্ত হয়নি

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২৮ নভেম্বর ২০১৮

কোন দল বা জোটের সব প্রার্থী এখনও চূড়ান্ত হয়নি

রাজন ভট্টাচার্য ॥ দলীয় মনোনয়ন কেন্দ্র করে বড় দল ও জোটে বাড়ছে ক্ষোভ। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আর মহাজোটে আসন বণ্টন ফয়সালা হয়নি এখনও। দলের মনোনয়ন পেয়ে কেউ ক্ষুব্ধ। কেউ না পেয়ে ক্ষুব্ধ। কারণ, একই আসনে একাধিক ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। আবার মহাজোটের প্রধান শরিক আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টির জন্য যেসব আসন ছাড় দিয়েছে সেখানেও দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়ন দেয়ায় মহাজোটে জট লেগেছে। তাছাড়া দলের মনোনয়নবঞ্চিতদের ক্ষোভ তো আছেই। ১৪ দলের শরিকরা এবার আসন কম পাওয়ায় আছে নানা আলোচনা। অনেকেই ইতোমধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। জাতীয় পার্টিও ৩০০ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের দলীয় মনোনয়নের চিঠি দিচ্ছে না। মহাজোটে কতটি আসন পেয়েছে তাও পরিষ্কার করা হচ্ছে না জাপার পক্ষ থেকে। এমন বাস্তবতায় দেশের বিভিন্ন জেলায় সব দলের মনোনয়ন বঞ্চিত নেতাদের সমর্থকরা আন্দোলনে নেমেছেন। কোথাও কোথাও দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে। সব মিলিয়ে বড় বড় রাজনৈতিক দল ও জোটে গৃহদাহ এখন স্পষ্ট। এদিকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, চিঠি দেয়া মানেই মনোনয়ন চূড়ান্ত নয়। চিঠি দেয়ার পর আবার জরিপ হবে। তারপর চূড়ান্ত তালিকা। বিএনপির পক্ষ থেকেও বলা হচ্ছে, মনোনয়ন প্রত্যাহারের আগে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হবে। বড় দলগুলোর সিদ্ধান্তহীনতায় প্রার্থীরা অনেকটা বেকায়দায়। যারা মনোনয়ন পেয়েছেন, শেষ পর্যন্ত সোনার হরিণ টিকেট হাতে থাকবে কিনা এ নিয়ে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার শেষ নেই। উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ৩০ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণ। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ আজ ২৮ নবেম্বর। মনোনয়ন যাচাই-বাছাই ২ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৯ ডিসেম্বর। তবে মঙ্গলবার থেকেই উৎসবমুখর পরিবেশে সারাদেশে মনোয়নয়নপত্র দাখিল শুরু হয়েছে। সোমবার থেকে বিএনপির মনোনয়ন দেয়া শুরু হয়েছে। দলের প্রধান খালেদা জিয়াকে মনোনয়নপত্র দেয়ার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করে বিএনপি। এরপর একে একে বিভিন্ন আসনের প্রার্থীদের হাতে মনোনয়নপত্র তুলে দেয়া হয়। কিন্তু সোনার হরিণ মনোনয়নের টিকেট পেয়ে তো খুশি হবার কথা। কারও মুখে হাসির ঝিলিক মেলেনি! বিষন্ন মন। হতাশা। ক্ষোভ। আর কষ্টে অনেকেই বিএনপির গুলশাল কার্যালয় ছেড়েছেন। অনেকেই কেঁদেছেন। প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা বলছেন, বেশিরভাগ আসনে দুই থেকে তিনজনের হাতে মনোনয়নপত্র তুলে দেয়া হয়েছে। ফলে নির্বাচনী প্রচারের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়বে। তাছাড়া একই দলে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে বাড়বে বিভক্তি। মঙ্গলবারও দলের অনেক নেতার হাতে একই পদ্ধতি অনুসরণ করে মনোনয়নপত্র তুলে দেয়া হয়েছে। কৌশলগত কারণে এটি করা হয়েছে এমনটাই বলছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আমরা কৌশলী অবস্থান নিয়েছি। তাই একই আসনে দুই থেকে তিনজনকে মনোনয়ন দেয়ার চিঠি দিচ্ছি। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় সব ঠিক হয়ে যাবে বলেও মনে করেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। তাছাড়া দলের পক্ষ থেকে প্রায় ৩০০আসনে চিঠি দেয়া শেষ। কিন্তু জোট কিংবা ঐক্যফ্রন্টের আসন পরিষ্কার হয়নি এখনও। ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক কামাল হোসেন বলেছেন, মনোনয়ন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে তাদের কোন মতবিরোধ নেই। যা হচ্ছে তা সকলের সম্মতিতেই হচ্ছে। তাছাড়া এখন দলের পক্ষ থেকে মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে। তারপর জোটের বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। অর্থাৎ মনোনয়ন নিয়ে রীতিমতো লুকোচুরি খেলা খেলছে ২০ দলীয় জোট তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ফ্রন্টভুক্ত দলগুলোও ইতোমধ্যে দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছে। সব মিলিয়ে শেষ পর্যন্ত কবে প্রার্থী চূড়ান্ত হবে এ নিয়ে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা সবার। কুমিল্লা-১০ আসন থেকে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছেন তিন প্রার্থী। তারা হলেন আবুল খায়ের ভূঁইয়া, মোবাশ্বের আলম ও মনিরুল হক চৌধুরী। প্রাথমিকভাবে দলের মনোনয়ন পেয়ে খুশি আবুল খায়ের। তিনি বলেন, আমাকে এই আসন থেকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয়া হলে ধানের শীষকে বিজয় উপহার দেব। আশা করব, দল থেকে দ্রুত চূড়ান্ত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে। গোপালগঞ্জ-২ আসন থেকে প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছেন দুজন। তারা হলেন সিরাজুল ইসলাম সিরাজ ও ডাঃ কে এম বাবর। প্রাথমিক মনোনয়নের চিঠি পেয়েও উদ্বিগ্ন ডাঃ কে এম বাবর। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে মনোনয়নের চিঠি পেয়েছি। কিন্তু চূড়ান্তভাবে তো একজনকে বাদ দেয়া হবে। তখন কে বাদ পড়েন, এই নিয়ে চিন্তায় আছি। ফরিদপুর-৪ আসনে শাহরিন ইসলাম শায়লাসহ ২ জনকে মনোনয়নের চিঠি দিয়েছে বিএনপি। শাহরিন ইসলাম বলেন, কে চূড়ান্ত মনোনয়ন পাবেন, জানতে পারলে ভাল হতো। তারপরও আমাকে যদি চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয়া হয়, তাহলে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করে ধানের দলকে জয় উপহার দেব। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খোন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, নির্বাচন কমিশন প্রতীক বরাদ্দ দেয়ার পর, আমাদের চূড়ান্ত প্রার্থী করার বিষয়টি চিঠি দিয়ে জানাবে। তারাও তখন বিষয়টি ইসিকে ও প্রার্থীদের তা জানিয়ে দেবেন। শরিকদের জন্য ৭০টি আসন রেখে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে ২৩০টি আসনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে চিঠি দেয়া হয়েছে। চিঠি দেয়ার পর থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলায় শুরু হয়েছে সংঘর্ষ, সংঘাত। মনোনয়ন বঞ্চিত নেতাদের সমর্থকরা রাস্তা অবরোধ করছেন। সমাবেশ করে মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার আবেদন জানাচ্ছেন কেন্দ্রের কাছে। আবার কেউ স্বতন্ত্র করার চিন্তা করছেন। তাছাড়া সোমবার আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মহাজোটের প্রার্থী তালিকা ঘোষণার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত কৌশলগত কারণে এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে দলটি। অর্থাৎ এ বিষয়টি এখন ঝুলে আছে। জাতীয় পার্টি, ১৪ দল, ইসলামী ঐক্যজোট, যুক্তফ্রন্টসহ মিত্রদের কতটি আসন দেয়া হয়েছে তা এখনও পরিষ্কার হয়নি। তবে ১৪ দলসহ জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতারা নির্বাচন অফিসে মনোনয়নপত্র জমা দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, কিছু আসনে প্রার্থী পরিবর্তন আসতে পারে। তাছাড়া এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হয়নি। সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আসন্ন নির্বাচনে নৌকার মনোনীত প্রার্থীদের বাইরে দলের অন্য কেউ বিদ্রোহ করে দাঁড়ালে তাকে আওয়ামী লীগ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হবে। রাজধানীর ধানম-িতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে কাদের বলেন, বিদ্রোহ মানেই বহিষ্কার। আজীবনের জন্য বহিষ্কার করে দেয়া হবে। যতই জনপ্রিয় হোক, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গেলেই বহিষ্কার। কাদের বলেন, মিডিয়ায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীর নাম ঘোষণা নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দেয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেয়ার আগে তালিকা না প্রকাশের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। এখন যাচাই-বাছাই করে শরিকদের সঙ্গে সমঝোতার মাধমে পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করা হবে। মনোনয়ন দেয়া মানে চূড়ান্ত না। মনোনয়ন দেয়ার পর, মাঠে আবার জরিপ করা হবে। তারপর যাকে মনোনয়ন দেয়া হবে তাকে প্রার্থী চূড়ান্ত বলে ঘোষণা করা হবে। একাদশ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে দলের প্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বনানী কার্যালয়ে ভিড় করেছেন দলের নেতারা। রবিবার থেকেই গুঞ্জন ছিল দলের পক্ষ থেকে ২০০আসনে মনোনয়নপত্র বিতরণ হবে। হয়েছেও। তবে কেউ পেয়েছেন কেউ পাননি। এই প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নিতে যাওয়া জাতীয় পার্টি শরিক হিসেবে কতটি আসন পাচ্ছে, তা জানা যায়নি। তবে দলটি মহাজোটের আসনসহ মোট ২০০ আসনে প্রার্থী দিতে পারে বলে জানা গেছে।
×