ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নারী টি২০ বিশ্বকাপের শিরোপা জয়;###;মোঃ রাশেদুল হক

অসি মেয়েদের বাজিমাত

প্রকাশিত: ০৪:২৭, ২৮ নভেম্বর ২০১৮

অসি মেয়েদের বাজিমাত

নারী টি২০ বিশ্বকাপে চতুর্থবারের মতো শিরোপা জিতে বাজিমাত করেছে অস্ট্রেলিয়ার মেয়েরা। ক্যারিবয় দ্বীপ এ্যান্টিগার গ্র্যান্ড ফাইনালে কুলিন ইংলিশদের কার্যত উড়িয়ে দিয়েছে অসি মেয়েরা। ৮ উইকেটের বিশাল জয়ে উৎসবে মেতেছে মেগ ল্যানিংয়ের দল। ছেলেদের ওয়ানডে বিশ্বকাপের ট্রফিটা অস্ট্রেলিয়া যেমন নিজেদের সম্পত্তি বানিয়ে ফেলেছে, টি২০তে তেমনি সফল দেশটির মেয়েরা। ষষ্ঠ বিশ্বকাপে এটি তাদের চতুর্থ শিরোপা। অথচ অসি-ছেলেদের ভাগ্যে এ পর্যন্ত একবারও টি২০’র শিরোপা জোটেনি! ‘এটা সত্যি দারুণ ব্যাপার। ফাইনালে বোলিং, ফিল্ডিং, ব্যাটিং সবই হয়েছে আমাদের মনের মতো। দেশকে চতুর্থ শিরোপাজয়ে নেতৃত্ব দিতে পেরে আমি গর্বিত’Ñ প্রতিক্রিয়া তারকা অধিনায়ক মেগ ল্যানিংয়ের। ছেলে ও মেয়েদের সংস্করণে অস্ট্রেলিয়া সব সময়ই সমীহ–জাগানিয়া এক দল। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, ছেলেদের টি২০ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া কখনও শিরোপা জিততে পারেনি। ছয়বার অংশ নিয়ে ২০১০ সালে রানার্সআপ হওয়াই তাদের সর্বোচ্চ সাফল্য। কিন্তু মেয়েদের দলটি টি২০ বিশ্বকাপে সবার ধরাছোঁয়ার বাইরে। ২০১০, ২০১২ ও ২০১৪ সালের সাফল্যটা এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটি থেকে তুলে নিল মেগ ল্যানিংয়ের দল। আর কোন দল যেখানে একবারের বেশি শিরোপা জিততে পারেনি, অস্ট্রেলিয়ার মেয়েরা সেখানে চার-চারবার চ্যাম্পিয়ন! ওয়ানডে হোক বা টি২০, মেয়েদের বিশ্ব আসরে কখনই ফাইনালে ইংল্যান্ডের কাছে হারেনি অস্ট্রেলিয়া। সেরার মঞ্চে সেই অপরাজেয় যাত্রা অস্ট্রেলিয়ান অসি-মেয়েরা ধরে রাখল এবারও। স্যার ভিভ রিচার্ডস স্টেডিয়ামে শিরোপা ফয়সালার ম্যাচটা ছিল একতরফা। ১০৫ রানে অলআউট হয় হিথার নাইটের ইংল্যান্ড। জবাবে ১৫ ওভার ১ বল খেলে ২ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় অস্ট্রেলিয়া। দারুণ বোলিংয়ে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন অফস্পিনার এ্যাশলি গর্ডনার। আসরজুড়ে ধারাবাহিক ব্যাটিংশৈলী উপহার দিয়ে প্লেয়ার অব দ্য সিরিজের পুরস্কার জিতে নিয়েছেন এ্যালিসা হিলি। ফাইনালে টস জিতে ব্যাট করতে নেমেই অস্ট্রেলিয়ান বোলাদের তোপের মুখে পড়ে ইংল্যান্ড। ইংলিশদের হয়ে সর্বোচ্চ ৪৩ রান করেছেন ওপেনার ড্যানিয়েল ওয়াট। ৩৭ বলে ১টি ছক্কা ও ৫টি চারে সাজিয়ে ইনিংসটি খেলেছেন তিনি। এছাড়া অধিনায়ক হেথার নাইট ২৫ রান করেছেন। এর বাইরে আর কোন ইংলিশ ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে পারেননি। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ২২ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন এ্যাশলি গ্রান্ডার। এছাড়া দুটি করে উইকেট নিয়েছেন মেগান স্কট ও জর্জিনা ওয়ার্হাম। জবাবে ব্যাট করতে নেমে দ্রুতই জয়ের দিকে এগিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। তবে দলীয় ৪৪ রানে দুই ওপেনারকে হারিয়ে ফেলে তারা। তাতে অবশ্য রানের গতি মোটেও কমেনি। এ্যাশলি গ্র্যান্ডার ও অধিনায়ক মেগ ল্যানিং মিলে দলকে জয় এনে দেন। গ্র্যান্ডার ৩৩ রানে ও ল্যানিং ২৮ রানে অপরাজিত থেকে অস্ট্রেলিয়াকে শিরোপার উৎসবে ভাসান। খুব কাছে এসেও ব্যর্থ ইংলিশ মেয়েরা, স্বাগতিক হয়েও হতাশ করেছে আগেরবারের চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ নারী দল, তবে চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে বাদ দিলে আসরে সবচেয়ে আলোচিত দল ভারত! বড় তারকা ও সাবেক অধিনায়ক মিতালি রাজকে একাদশের বাইরে রেখে সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের কাছে বাজে হারে বিদায় নেয় আগের ম্যাচগলোতে দুর্দঅন্ত খেলতে থাকা ফেবারিটরা। এ নিয়ে ব্যাপক বিতর্কের তৈরি হয়। অধিনায়ক হারমানপ্রিত কাউর বলেন, ‘এই সিদ্ধান্তের জন্য কোনও আফসোস নেই আমাদের।’ ওই দিন টস জেতার পরে যখন হরমনপ্রীত জানান, মিতালি খেলছেন না, তখন টিভি ধারাভাষ্য বক্সে থাকা দুই প্রাক্তন ক্রিকেটার নাসের হুসেন ও সঞ্জয় মঞ্জরেকর বিস্ময় প্রকাশ করেন। ভারত ৮৯-২ থেকে ১১২ রানে অল আউট হয়ে যায়। ইংল্যান্ডের কাছে ৮ উইকেটে হেরে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যায়। এর পরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় মিতালিকে বাদ দেওয়া নিয়ে ঝড় ওঠে। বিরাট কোহালিরা বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে বাদ দিয়ে নামলে যা হতে পারে, তার সঙ্গে মিতালির বাদ পড়ার তুলনাও শুরু হয়ে যায় টুইটার, ফেসবুকে। কিন্তু ভারত অধিনায়ক হরমানপ্রীত ম্যাচের পরে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বলেন, ‘যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, দলের কথা ভেবেই নেয়া হয়েছে। কখনও এ রকম সিদ্ধান্ত কাজে লাগে, কখনও কাজে লাগে না। এ জন্য কোনও আফসোস নেই আমাদের। বিশ্বকাপে দল যা খেলেছে, সে জন্য আমি গর্বিত।’ তিনি আরও বলেন, ‘আগের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে আমরা সত্যিই ভাল খেলেছিলাম। সেমিফাইনালে সেই দলটাকেই ধরে রাখতে চেয়েছিলাম।’ মিতালির স্ট্রাইক রেট তেমন ভাল না থাকলেও (১০৩) এ দিন যাঁদের ওপর ভরসা করেছিলেন হরমনরা, সেই তানিয়া ভাটিয়া ও বেদা কৃষ্ণমূর্তি ভাল খেলতে পারেননি। সেই জন্যই আরও মিতালির অভাব বোঝা যায়। ভারতের ব্যাটিংয়ের বেহাল দশা দেখে হতাশায় ভেঙে পড়েন ডাগ আউটে বসা মিতালি। এই টি২০ বিশ্বকাপ যে এ ভাবে শেষ করতে হবে তাঁকে, তা বোধহয় কখনও ভাবতেই পারেননি। মিতালিকে বাদ দেয়ার ব্যাখ্যা দিয়ে হরমনপ্রীত বলেন, ‘মিতালি ওপেনার। কিন্তু আমার আর স্মৃতির (মন্ধানা) পরে কেউ ভাল ব্যাট করতে পারে, এমন একজন দরকার ছিল। কিন্তু সব সময় তো কৌশল অনুযায়ী কাজ হয় না।’ ১৪ নম্বর ওভারে জেমাইমা রদ্রিগজ আউট হওয়ার পরেই তাঁকে অনুসরণ করেন তাঁর সতীর্থ ব্যাটসম্যানেরা। হারমানপ্রীত স্বীকার করে নেন এ দিন আরও ৩০-৪০ রান তুলতে পারলে হয়তো লড়াই করা যেত। বলেন, ‘১৪০-৫০ তুললে নিশ্চয়ই ম্যাচটা জিততাম আমরা।’ তবে তাঁর দলের বোলারদের প্রশংসা করে অধিনায়ক বলেন, ‘ওদের রানটা তুলতে ১৮ ওভার লেগে যায়। কারণ, আমাদের মেয়েরা ভাল বল করেছে। এই ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হবে আমাদের। চাপের মুখে আরও ভাল খেলা শিখতে হবে।’ কিন্তু মিতালিকে আর নাও পেতে পারেন তাঁরা। এই বিশ্বকাপের আগেই যে তিনি বলে দিয়েছিলেন, এটাই সম্ভবত তাঁর শেষ টি২০ বিশ্বকাপ।
×