ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারের ৫ বছর

তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগ খাতে বিস্ময়কর উন্নতি

প্রকাশিত: ০৩:৫৫, ২৮ নভেম্বর ২০১৮

তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগ খাতে বিস্ময়কর উন্নতি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগ খাতে গত পাঁচ বছর ছিল প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা পূরণের সময়। এই পাঁচ বছরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে যেমন অবকাঠামো তৈরি হয়েছে, তেমনি বেড়েছে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা। মোবাইল ব্যবহারকারীর সংখ্যাও বেড়েছে। এ খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত পাঁচ বছরে তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগ খাতে যে উন্নয়ন হয়েছে, তাতে করে ২০২১ সালের আগেই ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্পন্ন হবে। বিগত পাঁচ বছরে অনেক পুরস্কার অর্জনসহ অন্যান্য উল্লেখযোগ্য অর্জনের মধ্যে রয়েছে, যশোরে শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক চালু, দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলে সংযুক্তি, ‘ডাক টাকা’র প্রচলন, সফটওয়্যার ও সেবা খাতে রফতানিতে হাজার কোটি টাকার কাছে পৌঁছানো (২০১৮ সালে টার্গেট ছিল এক বিলিয়ন ডলার), ফোর-জি ও মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি (এমএনপি) চালু, দেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ মহাকাশে উৎক্ষেপণ, ব্যান্ডউইথের ব্যবহার এক টেরার কাছাকাছি পৌঁছানো, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৯ কোটি ১১ লাখ ৯৪ হাজারে উত্তীর্ণ, মোবাইল সংযোগ ১৫ কোটি ৫৮ লাখ ১০ হাজারে পৌঁছানো। আর এসব কারণেই বলা হচ্ছে, তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগ খাতে গত পাঁচ বছরে অভাবনীয় উন্নতি হয়েছে। এছাড়া ই-জুডিশিয়ারি প্রকল্পের অগ্রগতি, বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম ডাটা সেন্টার নির্মাণ কাজ শুরু, এ্যাপস ও গেমিং ডেভেলপমেন্ট ইন্ডাস্ট্রি প্রকল্পের যাত্রা, মহেশখালীকে ডিজিটাল দ্বীপে রূপান্তরের কাজের উদ্বোধন, সারাদেশে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব তৈরি, ই-কমার্স নীতিমালা এবং ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্ট প্রণয়ন করা হয়েছে। জানতে চাইলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘২০২১ সালের আগেই ডিজিটাল বাংলাদেশের বিনির্মাণের কাজ শেষ হবে। আমরা অবকাঠামো নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ করেছি। এখন দেশের প্রত্যন্ত এলাকায়, মানুষের দরজায় সেবা (ইন্টারনেট) পৌঁছাতে হবে।’ তিনি জানান, দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে ২, ৫ ও ১০ বছর মেয়াদী রোডম্যাপ তৈরি করেছে আইসিটি বিভাগ। স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদের রোডম্যাপ ধরেই বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। দেশে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক জানান, ২০১৪ সালে দেশে ব্যান্ডউইথ ব্যবহার হতো ১৫০ জিবিপিএস। বর্তমানে যার পরিমাণ ৮৫০ জিবিপিএসের (গিগাবাইট পার সেকেন্ড) বেশি ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ ব্যবহার হচ্ছে। ২০১৭ সালের জানুয়ারী মাসে এর পরিমাণ ছিল ৩৫০ জিবিপিএস। একই বছরের আগস্টে যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৪২১ জিবিপিএসে। এই হারে ব্যান্ডউইথ বাড়তে থাকলে এ বছরের শেষ নাগাদ বা আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে তা এক টেরাবাইটে (১০২৪ জিবিপিএস) পৌঁছবে। দেশে ব্যবহার হওয়া ৮৫০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথের মধ্যে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর (আইএসপি) গ্রাহকরা ব্যবহার করেন ৬২০ জিবিপিএস। আর মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো ব্যবহার করে ২০০ জিবিপিএস। অবশিষ্ট ৩০ জিবিপিএস ব্যবহার করেন ওয়াইম্যাক্স ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা। প্রসঙ্গত, গত ফেব্রুয়ারিতে দেশে ব্যবহার হতো ৫৫০ জিবিপিএসের কিছু বেশি ব্যান্ডউইথ। ওই মাসে ফোর-জি চালুর পর থেকে এ পর্যন্ত ৯ মাসে ব্যান্ডউইথের ব্যবহার বেড়েছে ৩০০ জিবিপিএসের বেশি। অন্যদিকে বাংলাদেশ ২০০৬ সালে সাবমেরিন ক্যাবল সিমিইউ-৪-এ যুক্ত হয়। বর্তমানে এটি দিয়ে দেশে আসছে ২৫০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ। আর দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল সিমিইউ-৫ দিয়ে আসছে ৪৫০ জিবিপিএস। যদিও দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের সক্ষমতা এক হাজার ৫০০ জিবিপিএস। এছাড়া ছয়টি আইটিসি বর্তমানে দেশে আসছে ১০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ। ২০১৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে (আঙুলের ছাপ) সিম নিবন্ধন শুরু হয়। সারাদেশে এক লাখ ডিভাইসের মাধ্যমে এই নিবন্ধন কার্যক্রম চলে। এর আগে ২১ অক্টোবর সচিবালয়ে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি টেলিটকের একটি নতুন সিম কিনে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সেটি নিবন্ধন করেন। সে সময় দেশে মোবাইলফোনের ব্যবহারকারী (সংযোগ) ছিল ১৩ কোটি ৯ লাখ। আর বর্তমানে সংযোগ সংখ্যা ১৫ কোটি ৫৮ লাখ ১০ হাজার। যশোরকে প্রযুক্তিনগরী ও ডিজিটাল অর্থনীতির হাব হিসেবে গড়ে তুলতে ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর যশোরে শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক উদ্বোধন করা হয়। পার্কে আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধাসহ ১৫ তলা মাল্টি-টেনেন্ট বিল্ডিং, আন্তর্জাতিক থ্রি-স্টার মানের আবাসন ও জিমনেসিয়ামের সুবিধাসহ ১২তলা ডরমেটরি বিল্ডিং, একটি ক্যান্টিন ও এ্যাম্ফিথিয়েটার, ৩৩ কেভিএ পাওয়ার সাব-স্টেশন, অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল সংযোগ এবং অন্যান্য ইউটিলিটি সার্ভিস রয়েছে। ২০১৭ সালের বছরজুড়ে তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন বিষয় আলোচনায় থাকলেও বছর শেষে রোবট মানবী সোফিয়ার আগমন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে। ডিসেম্বরের প্রথম ১০ দিন পুরো দেশ যেন সোফিয়াতে বুঁদ হয়েছিল। ওই বছরই প্রথম আইসিটি ডে-২০১৭ (১২ ডিসেম্বর) পালিত হয়। এ বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি দেশে চালু হয় ফোর-জি সেবা। গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক ও এয়ারটেল এই সেবা চালু করে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটকের পক্ষ থেকেও ফোর-জি সেবার লাইসেন্স নেয়া হলেও এখনও সেবাটি চালু করতে পারেনি। বর্তমানে ফোর-জি গ্রাহক সংখ্যা কোটি ছাড়িয়ে গেছে বলে জানা যায়। এ বছরের ১১ মে যুক্তরাষ্ট্রের অরল্যান্ডোর কেপ কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে দেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণ করা হয়। ৩৬ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে নিরক্ষরেখার ১১৯ দশমিক ৯ ডিগ্রিতে স্থাপিত হয় এটি। এরপর বিভিন্ন কারিগরি পরীক্ষা শেষে স্যাটেলাইটের নির্মাতা ও নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান ফ্রান্সের থ্যালাস এ্যালেনিয়া গত ৯ নবেম্বর ঢাকায় এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এর নিয়ন্ত্রণ তথা টাইটেল বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করে। নিজস্ব স্যাটেলাইট আছে এমন তালিকায় বাংলাদেশ এখন বিশ্বে ৫৭তম দেশ। নম্বর ঠিক রেখে অপারেটর বদল (এমএনপি) সেবা চালু হয় এ বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর। সেবা চালুর পরে অপারেটর পছন্দ বা পরিবর্তনে গ্রাহকরা সম্পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করছে। তবে এই সেবা গ্রহণে মোবাইল ব্যবহারকারীকে অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি বা এমএনপি সেবা নিতে যে নতুন অপারেটর পছন্দ করা হবে, সেই অপারেটরের কাস্টমার কেয়ার সেন্টার বা বায়োমেট্রিক রেজিস্ট্রেশন পয়েন্টে গিয়ে ৫০ টাকা ফিস দিয়ে নতুন সিম নিতে হচ্ছে। তবে যতটা ভাবা হয়েছিল ততটা জনপ্রিয়তা পায়নি এই সেবা। চালুর পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী নম্বর ঠিক রেখে তাদের অপারেটর বদল করেছেন।
×