ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারী স্কুলে ভর্তি নীতিমালা

প্রকাশিত: ০৩:৪৫, ২৮ নভেম্বর ২০১৮

সরকারী স্কুলে ভর্তি নীতিমালা

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঢাকা মহানগরীর স্কুলে পার্শ্ববর্তী এলাকার শিক্ষার্থীদের জন্য ৪০ শতাংশ এলাকা কোটা সংরক্ষণ করার নির্দেশনা দিয়ে ‘সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির নীতিমালা-২০১৮’ প্রণয়ন করেছে। এর আগে বেসরকারী স্কুলের ভর্তি নীতিমালাও প্রকাশ করা হয়েছিল। দুটি নীতিমালার ভেতর সঙ্গত সামঞ্জস্য ও সমন্বয় লক্ষণীয়। সরকারী স্কুলে ভর্তি সংক্রান্ত নীতিমালায় ২০১৯ শিক্ষাবর্ষে সব মহানগরী, বিভাগীয় শহর ও জেলা সদরের সব সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। উপজেলা সদরেও কেন্দ্রীয় অনলাইন পদ্ধতিতে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করা বাধ্যতামূলক। নীতিমালা অনুযায়ী, প্রথম শ্রেণীতে ভর্তির জন্য আবশ্যিকভাবে লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী নির্বাচন করতে হবে। পাশাপাশি শূন্য আসনের সমান সংখ্যক অপেক্ষমাণ তালিকাও প্রস্তুত রাখতে হবে। ভর্তি কমিটি কর্তৃক নির্ধারিত তারিখে নির্বাচিত শিক্ষার্থী ভর্তি না হলে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে পর্যায়ক্রমে ভর্তি করা হবে। এটাই যথাযথ। নিজের এলাকার একটি স্কুলে শিশু ভর্তি হবে, সময় ও অর্থ ব্যয়ে দূরে যেতে হবে নাÑ এটাই তো স্বাভাবিক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একবার বিশ্ব শিশু দিবসে শিশু একাডেমির অনুষ্ঠানে এমন কথাই বলেছিলেন। ‘পাড়ার স্কুলে ভর্তি হওয়া একটি শিশুর অধিকার’, এই ছিল তাঁর বক্তব্য। প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, তাঁরা যেন প্রতিটি শিশু নিজের এলাকার বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এলাকা কোটার বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। কিন্তু তা যেন সঠিকভাবে করা হয়। যদি কোন প্রমাণপত্র ছাড়াই এলাকার বাসিন্দা হিসেবে বিবেচিত হয় তাহলে একজন অভিভাবক তাঁর সন্তানকে ভাল একটি স্কুলে পড়াতে একাধিক স্কুলে আত্মীয়স্বজনের ঠিকানা দিয়ে আবেদন করবেন। তাই যে যেই এলাকার স্কুলে আবেদন করবে সে ওই এলাকার বাসিন্দা প্রমাণের জন্য ওয়ার্ড কমিশনারের পরিচয়পত্র বা অন্য কোন আইডেনটিটি চাওয়া যেতে পারে। আর সরকারী স্কুলে যেহেতু একই ওয়েবসাইটে আবেদন করতে হয় তাই একজন অভিভাবক একাধিক আবেদন করলে তা যেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে ধরা পড়ে সে ব্যবস্থাও থাকতে হবে। আর পর্যায়ক্রমে বেসরকারী স্কুলগুলোকেও একই ওয়েবসাইটের আওতায় আনতে হবে। তাহলেই প্রযুক্তির মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে। প্রসঙ্গত রাজধানীসহ দেশের নামী-দামী স্কুলগুলোতে নতুন বছরে ভর্তির সময়টাতে বাড়তি ফি আদায়ের নৈরাজ্য দেখা যায়। কোন কোন বেসরকারী স্কুল ভর্তির ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে নানা ধরনের ফি আদায়েরও উদাহরণ রয়েছে। নীতিমালায় কোন শ্রেণিতে কিভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে এবং কোন ক্ষেত্রে ভর্তি ফি কত হবে তা ঠিক করে দেয়া হয়েছে। এই নীতিমালা বাস্তবায়ন হলে অভিভাবকরা দুশ্চিন্তা থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পাবে। আমরা বরাবরই বলে আসছি শিশুদের সাক্ষর করানোই মূল লক্ষ্য নয়, বরং তাদের বাস্তবোচিত জ্ঞান বিতরণ এবং কর্মমুখী পাঠদানই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সে লক্ষ্যে যথাযথ কারিকুলাম বা পাঠ্যসূচি তৈরিই সবচেয়ে বড় বিবেচনার বিষয়। শিশুরা স্কুলে যাচ্ছে, সুর করে পড়া শিখছে- এটি সুন্দরতম দৃশ্য কোন সংশয় নেই। যদিও এ দৃশ্য তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠবে তখনই যখন শিশুরা প্রয়োজনীয় ও উপযুক্ত শিক্ষা লাভ করবে। মানসম্মত যুগপোযোগী এবং কারিগরি শিক্ষা বিস্তারে সংশ্লিষ্ট সবাই আন্তরিকতা ও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করবেনÑ এটাই প্রত্যাশা। আমরা আশা করব সুচিন্তিত এই ভর্তি নীতিমালা যথাযথভাবে অনুসরণ করা হবে। কোন পক্ষের সমালোচনা কিংবা আপত্তির মুখে যেন এটির পরিবর্তন না করা হয়।
×