ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী

স্ট্রোক কি হতে পারে অজান্তে

প্রকাশিত: ০৬:৫৭, ২৭ নভেম্বর ২০১৮

স্ট্রোক কি হতে পারে অজান্তে

নীরব স্ট্রোক সত্যিই ঘটতে পারে। মগজের কোন অংশে কোন সূক্ষ্ম নালীতে রক্তপ্রবাহ রোধ হলে হতে পারে এমন। সাধারণভাবে এটি নজরে নাও আসতে পারে। স্থায়ী ক্ষতি হলে তখন হয়ত নজরে আসে। হয়ত অন্য কারণে ব্রেন স্ক্যান করে ধরা পড়ল। নীরব স্ট্রোক (silent stroke) আর সতর্ক স্ট্রোক (warning stroke) একই জিনিস নয় বটে। সতর্ক স্ট্রোক বা transient ischemic stroke (Tia) বা টিআইএ ঘটে যখন রক্তের জমাট একটি ছোট পি- রক্তনালীপথ খুব সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয় রক্তের প্রবাহ মগজের কোন অংশে। তবে এতে মগজের স্থায়ী ক্ষতি ঘটে না। টিআইএ বা ক্ষণস্থায়ী রক্তের অভাবজনিত স্ট্রোক আসে ও যায় দ্রুত, সময়কাল গড়ে মাত্র এক মিনিট। এরকম হলে কয়েক মাসের মধ্যে পূর্ণস্ট্রোকের সম্ভাবনা থাকে। স্ট্রোকের লক্ষণ বোধ হলে এক নজরে আনা উচিত, ইমার্জেন্সিতে ফোন করা উচিত। মগজের অক্সিজেনের অভাব হলে, প্রতিটি মুহূর্ত জরুরী। স্ট্রোক যদি রক্তের তঞ্চনপি-ের কারণে হয়, তাহলে স্ট্রেপটোকাইনেথ (টিপিএ) ওষুধ দেয়া হলে জমাটটি চূর্ণ হতে পারে। রক্ষা এতে পারে মগজের কোষগুলো এবং স্থায়ী ক্ষতি রোধ হবে। পুরোপুরি সেরে ওঠার সবচেয়ে বেশি সুযোগ হলো স্ট্রোকের লক্ষণ দেখা দেবার ৩ ঘণ্টার মধ্যে টিপিএ ওষুধ দেয়া, অনেকেই সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছান না। বয়স্কদের দীর্ঘমেয়াদী অক্ষমতার একটি বড় হেতু হলো স্ট্রোক। খুব ক্রুদ্ধ হলে স্ট্রোক হবার সম্ভাবনা বেশি। অনেকে রাগী স্বভাবের, ক্ষণে ক্ষণে প্রচণ্ড রেগে ওঠা স্বভাব, খুব রেগে গেলে কখনও রক্তনালী সংকীর্ণ হতে পারে, উঠে যাবে রক্তচাপ। এ রকম রাগী লোকদের গ্রীবাদেশের ধমনীগুলো পুরু হয়, তাই স্ট্রোকের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। রাগ সামলাতে সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। স্ট্রোকের দরুন ক্ষতিকে খ-ন করা দুঃসাধ্য। স্ট্রোকের পর সমস্যাগুলো মোকাবেলার জন্য পুনর্বাসন প্রয়োজন হয় তবে ক্ষতি মেরামত করা সম্ভব নয়। ফিজিক্যাল থেরাপি শক্তি ও সমন্বয় শরীরে কিছুটা নির্মাণ করতে সাহায্য করে। অকুপেশনাল থেরাপি শক্তি ও সমন্বয় শরীরে কিছুটা নির্মাণ করতে সাহায্য করে। অকুপেশনাল থেরাপি দৈনন্দিন কাজকর্ম যেমন খাওয়া, কাপড় পরা এসব কাজকর্ম নিজে করতে সহায়ক ভূমিকা নেয়। স্পিচ থেরাপি ভাববিনিময়ে সাহায্য করতে পারে। মগজে রক্তক্ষরণ হয়ে স্ট্রোক হবার ঘটনা তুলনামূলক কমÑ ১৩%। রক্তনালীতে রক্ত জমাট খ-ের জন্য স্ট্রোক ঘটে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। রক্তের দেয়ালে চর্বি জমে রক্তনালী সঙ্কীর্ণ হলে রক্তপ্রবাহ কমে যায়, ব্রেনে অক্সিজেনের অভাব, এজন্য স্ট্রোক। স্ট্রোক হলে শরীর একদিক অবশ হওয়া এবং কথা জড়িয়ে যেতে পারে। তবে বুকব্যাথা স্ট্রোকের লক্ষণ নয়, তা হতে পারে হার্ট এ্যাটাকের জন্য। তাও বিপজ্জনক বটে। স্ট্রোকের কারণে মগজের ডান অংশের ক্ষতি হলে শরীরের বামদিকে দুর্বলতা ঘটতে পারে। মগজের ডান অংশ নিয়ন্ত্রণ করে শরীরের বাম দিক এবং বাম অংশ নিয়ন্ত্রণ করে ডানদিক। শরীরে একটি দিকে অকস্মাৎ কোন পরিবর্তন দেখা দিলে স্ট্রোকের সংকেত হতে পারে, যেমন, * কোন একদিকের বাহু বা পায়ে অবশ ভাব। * মুখম-লের একদিকে ঝুলে যাওয়া। * একচোখ দিয়ে দেখতে অসুবিধা হওয়া। যে সব মহিলার বিশেষ মিগ্রেন হয় যেমন সে সময় তারা যদি চোখের সামনে নানারকম উজ্জ্বল বস্তু বা ফুলকি দেখেন তাঁদের স্ট্রোকের সম্ভাবনা বেশি। তবে ঝুঁকি অত বেশি না। মিগ্রেন হচ্ছে, চোখের সামনে উজ্জ্বল ফুলকি বা আলোর ঝিলিক, ডাক্তার বলতে পারেন জন্ম নিরোধক পিল না খেতে, স্ট্রোকের সম্ভাবনা কমানোর জন্য। মগজের কোন অংশে রক্ত সরবরাহ রোধ হলো এর ওপর নির্ভর করে স্ট্রোকের লক্ষণ কি হবে। মগজের কোন অংশে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়, সেই অংশ তখন ঠিকমতো কাজ করতে পারে না, যদি মগজের সেই অংশটি বাকশক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকে তাহলে কথা বলতে অসুবিধা হতে পারে। মগজের এমন কোন যা পেশীর চলন নিয়ন্ত্রণ করে, তাহলে একটি বাহু বা পা নাড়াতে অসুবিধা হতে পারে। ৬৫ বছরের উর্ধ পুরুষ সমবয়সী মহিলাদের চেয়ে স্ট্রোকের বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। যেসব অন্য উপাদান বেশি ঝুঁকিতে ফেলে সেগুলো হলো- হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ এবং স্ট্রোকের পারিবারিক ইতিহাস। ধূমপান করে থাকলে অবশ্য বর্জন করুন স্ট্রোক প্রতিরোধের জন্য। ধূমপান করলে রক্ত হয় গাঢ়, রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা বাড়ে, উঁচুতে ওঠে রক্তচাপ আর শরীরচর্চা করলে শরীরে বেশি ওজন ঝরালে ঝুঁকি আরও কমে।
×