স্টাফ রিপোর্টার ॥ সময় নাট্যদলের দর্শকনন্দিত প্রযোজনা ‘শেষ সংলাপ’। ২০০৯ সালে নাটকটির প্রথম প্রদর্শনী হয়। দেশ-বিদেশের নানা উৎসবে অসংখ্যবার মঞ্চস্থ হয়েছে নাটকটি। সেই ¯্রােতধারায় সোমবার সন্ধ্যায় নাটকটির আশিতম মঞ্চায়ন অনুষ্ঠিত হলো শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে। মঞ্চের আলোয় নাট্যরসিকরা আরেকবার দেখল রাজকীয় আমলের ক্ষমতার পালাবদলের নানা ঘটনাপ্রবাহ। মিসরীয় নাট্যকার তাওফীক আল হাকিমের ‘সুলতানুজ জান্নাম’ অবলম্বনে নাটকটি যৌথভাবে অনুবাদ করেছেন ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ ও ম. সাইফুল আলম চৌধুরী। প্রযোজনাটির নির্দেশনা দিয়েছেন আকতারুজ্জামান।
ত্রয়োদশ শতাব্দী থেকে ষোড়ম শতাব্দীর প্রথম ভাগ পর্যন্ত মিসরকে শাসন করত মামলুক বংশ। মামলুক বংশের শাসকরা অধিকাংশই ছিলেন তুর্কী ক্রীতদাস। তেমন এক ক্রীতদাস সুলতানকে নিয়ে এগিয়েছে শেষ সংলাপ নাটকের আখ্যানভাগ। কাহিনীতে দেখা যায়, মিসরের এক সুলতান উত্তরাধিকারী হিসেবে তার পালিত পুত্র একজন ক্রীতদাস সেনাধ্যক্ষকে মনোনীত করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত মৃত্যুকালে তিনি তার মসনদের উত্তরাধিকারী সুলতানকে ক্রীতদাসত্ব থেকে মুক্তি দিয়ে যেতে পারেননি। ‘সুলতানের দাসত্ব মোচন হয়নি’- এমন গোপন সংবাদ রাজ্যময় ছড়িয়ে দেয়ার অপরাধে এক দাস ব্যবসায়ীকে বন্দী করা হয়। কিন্তু বন্দীর ফরিয়াদনামা দেখে বিচার সভায় উপস্থিত হন স্বয়ং সুলতান। ব্যবসায়ীর কথা শুনে প্রচ- এক দ্বন্দ্বের মুখোমুখি হন তিনি। বিপাকে পড়ে যান রাজ্যের প্রধান কাজী আর উজির। অনেক তর্ক-বিতর্কের পর সুলতানকে আইনের পথ বেছে নেয়ার পরামর্শ দেন প্রধান বিচারক। আইন অনুযায়ী জনসম্মুখে প্রকাশ্য নিলামে সুলতানকে বিক্রি করা হবে এবং শর্ত অনুযায়ী যিনি নিলামে সুলতানকে ক্রয় করবেন, তিনি তাৎক্ষণিকভাবে মুক্তিনামায় স্বাক্ষর করে সুলতানকে মুক্তি দেবেন। আইন মেনে নিয়ে নিলামে ওঠেন সুলতান। এই পরিস্থিতিতে দেখা দেয় নতুন সঙ্কট। কারণ নিলাম ক্রয়কারী যার প্রতিনিধিত্ব করতে এসেছেন, তিনি এই রাজ্যে বারবনিতা হিসেবে পরিচিত। শুরু হয় তুমুল যুক্তিতর্ক। হারতে রাজি নন মহিলা। তিনি দাসত্বের মুক্তিনামায় স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানান। অকাট্য তার যুক্তি। শেষ পর্যন্ত মহিলার বাড়িতে এক রাতের জন্য মেহমান হওয়ার সম্মতি জানান সুলতান। এরপর ঘটতে থাকে বিচিত্র নাটকীয় ঘটনা। সমস্যার সমাধান হবে কোন পথে? এভাবে দর্শকদের উৎকণ্ঠায় রেখে এগিয়ে যায় নাটকের কাহিনী। নাটকটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন পাভেল ইসলাম, ঈশিতা চাকী, রিয়াজ মাহমুদ জুয়েল, আরিফুজ্জামান, ফখরুল ইসলাম, তোফায়েল সরকার, নাহিদ নিলয় বিপ্লব, রিংকু, মাসুম, টিপু, আনোয়ার, সেন্টু, সুমন পাল, জামাল মোস্তফা, মাকসুদুল বারী টিপু প্রমুখ। ফয়েজ জহিরের মঞ্চ পরিকল্পনায় নাটকের সঙ্গীত পরিকল্পনা করেছেন কমল খালিদ। পোশাক পরিকল্পনায় করেছেন আমিনুর রহমান মুকুল। আলোক পরিকল্পনা করেছেন আলমগীর হোসেন।