ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপির কয়েকজন ডাকসাইটে নেতাও অনিশ্চয়তায়

চট্টগ্রামের ১৬ আসনে আ’লীগের অবস্থান আগের চেয়ে মজবুত

প্রকাশিত: ০৬:১২, ২৭ নভেম্বর ২০১৮

চট্টগ্রামের ১৬ আসনে আ’লীগের অবস্থান আগের চেয়ে মজবুত

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে ১৬ আসনে আওয়ামী লীগ একক ও জোটগতভাবে সব দিক দিয়ে এগিয়ে রয়েছে। প্রকারান্তরে আওয়ামী লীগ ও এর নেতৃত্বাধীন জোটের বিরোধীরা সোমবার পর্যন্ত তাদের প্রার্থিতা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোন সিদ্ধান্ত প্রকাশ করতে পারেনি। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট বহু আগে থেকে গোছানো অবস্থানে থেকে গত রবিবার তাদের প্রার্থী যে তালিকা ঘোষণা করেছে তাতে হেরফের হওয়ার সম্ভাবনা খুব একটা নেই বলেই বহুল আলোচিত। বিপরীতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে থেকে বিএনপি ও তাদের সহযোগীরা রীতিমতো অগোছালো পরিস্থিতিতে রয়েছে। বিএনপির প্রার্থিতা নিশ্চিত করা একদিকে যেমন তাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং লন্ডনে পলাতক অবস্থানে থাকা তারেক জিয়ার ওপর নির্ভরশীল তেমনি আসন বণ্টন প্রশ্নে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারাও এখন বড় ধরনের ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করছে। এছাড়া জামায়াত যেহেতু দলীয়ভাবে নির্বাচন করতে পারবে না সেক্ষেত্রে চট্টগ্রামে দুটি আসন তারা নিশ্চিত করতে চায় বলে আলোচনায় রয়েছে। বর্তমানে চরম কোণঠাসা অবস্থানে রয়েছে জামায়াতের নেতাকর্মীরা। বিএনপি তাদের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আবার বিএনপি নাগরিক ঐক্যের চিন্তাধারার বাইরে গেলে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে এমন আশঙ্কাও রয়েছে। এ অবস্থায় চট্টগ্রামে বিএনপির কিছু ডাকসাইটে নেতাও অনিশ্চিত অবস্থায় রয়েছেন। বিএনপির মতো নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে জোট বেঁধেছে আরও কয়েকটি আওয়ামী লীগ বিরোধী রাজনৈতিক দল। এরাও নির্বাচনে আসন নিয়ে ভাগ বসাতে চায়। বিশেষ করে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম হাটহাজারীতে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক। এই আসনে বিএনপির শীর্ষ নেতা সাবেক মন্ত্রী মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন এবং তার পুত্র ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দীনও দলীয় মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেছেন। এই তিনজনের প্রার্থিতা চূড়ান্তকরণে বিএনপি হিমসিম খাচ্ছে। এর ওপরে রয়েছে নাগরিক ঐক্যের সবুজ সঙ্কেত। এছাড়া এলডিপি সভাপতি কর্নেল অলি আহমদও রয়েছেন ২০ দলীয় জোটে এবং মুখপাত্রও বটে। ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে তিনি চন্দনাইশ-সাতকানিয়া আংশিক, লোহাগাড়া-সাতকানিয়া আংশিক এই দুটি আসনে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক। যেহেতু তার নিজ এলাকা চন্দনাইশে তিনি একজন হেভিওয়েট প্রার্থী। সে হিসেবে তাকে এ আসনে মনোনয়ন না দিলে বিএনপি বা জোটগতভাবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের জন্য বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। অপরদিকে, রাজনৈতিক অঙ্গনে সর্বত্র আলোচিত হচ্ছে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে এবং গোছালো অবস্থায় রয়েছে বিপরীতে নাগরিক ঐক্য বা বিএনপির অবস্থান অনেকটাই লেজে গোবরে। এখনও আলোচিত হচ্ছে বিএনপির শেষ পর্যন্ত নির্বাচন নিয়ে অবস্থান কী হতে পারে তা নিয়ে। প্রথমত দলীয়ভাবে তারা অগোছালো অবস্থানে রয়েছে। এর পরে মনোনয়ন নিশ্চিত করে নির্বাচনী প্রচারের জন্য মাঠে নামতে আরও সময় নিচ্ছে বিধায় তারা বেশ পিছিয়ে আছে। কেননা নির্বাচনের জন্য হাতে সময় তেমন নেই। ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন কমিশন এগিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি দেশের অন্যান্য স্থানের মতো চট্টগ্রামেও ১৪ দলীয় জোটের মধ্যে আওয়ামী লীগের অবস্থান ইতিপূর্বেকার চাইতে অনেকাংশে মজবুত অবস্থানে পৌঁছে গেছে। ইতোমধ্যে যারা মনোনয়নের টিকেট পেয়েছেন তারা সবই পুরনো। শুধু মহানগরীর প্রধান আসনে (কোতোয়ালি-বাকলিয়া) নতুন মুখ হয়েছেন ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। পিতা চট্টলবীর আলহাজ এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ইমেজ এবং ইতোমধ্যে দলীয় পর্যায়ের কার্যক্রমে নিজের যে দক্ষতা দেখিয়েছেন তা চট্টগ্রামে বহুলভাবে সমাদৃত হয়েছে। যে কারণে নগরীর এই প্রধান আসনটিতে নওফেলের অবস্থান প্রতিনিয়ত মজবুতই হচ্ছে। বিগত নির্বাচনে এই আসনে জাতীয় পার্টির জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু নির্বাচিত হয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ এবার নিজেদের প্রার্থী হিসেবে নওফেলকে মনোনয়ন দিয়েছে। এতে আওয়ামী লীগ শিবির যেমন উল্লসিত তেমনি ভোটার মহলও আনন্দিত। অনুরূপভাবে মীরসরাই, সন্দ্বীপ, সীতাকু-, চট্টগ্রাম মহানগরীর আরও তিনটি আসন এবং রাঙ্গুনিয়া, আনোয়ারা, বাঁশখালী, সাতকানিয়া, চন্দনাইশ, রাউজান, পটিয়ায় আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়নকে ভোটাররা ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করেছে। ভোটের মাঠে এসব আসনের প্রার্থীরাও বিরোধীদের চেয়ে বহুলাংশে এগিয়ে গেছে। ফলে গেল নির্বাচনের মতো এবারও চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের ব্যাপক সাফল্য আসবে বলে জোর আলোচনা চলছে। তিনটি আসনে আওয়ামী লীগ জোটের শরিকদের দিয়েছে সেগুলো হচ্ছে- হাটহাজারী, ফটিকছড়ি, বোয়ালখালী। গেল নির্বাচনে চারটি আসন ছেড়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। এবার একটি কমেছে। অর্থাৎ কোতোয়ালি আসনটি গেল নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে দেয়া হলেও এবার তা দেয়া হয়েছে দলের নবীন প্রার্থী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে। দলের এই সিদ্ধান্ত নেতা ও কর্মী মহল ইতোমধ্যে স্বাগত জানিয়েছে। ফলে নির্বাচনের জন্য এটি একটি ইতিবাচক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
×