ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারী সেবা নিশ্চিত করায় কর প্রদানে মানুষ উৎসাহিত হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:১১, ২৭ নভেম্বর ২০১৮

সরকারী সেবা নিশ্চিত করায় কর প্রদানে মানুষ উৎসাহিত হচ্ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের কাছ থেকে ভাল সেবা পাচ্ছে বলে দেশের সাধারণ মানুষ আয়কর দিতে উৎসাহিত হচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল লক্ষ্য জনসেবা। আর জনসেবা যখন কর্ম হয়ে ওঠে, তখন জনগণ সেটা পছন্দ করে। তিনি বলেন, এখন আর আয়কর দিতে কেউ ভয় পায় না, বরং এটাকে গৌরবের বিষয় মনে করছে। সরকার তাদের সেবা দিচ্ছে, বিনিময়ে দেশের জন্য তারাও কিছু করতে পারছে। এ ধরনের একটি অনুভূতি থেকে মানুষ আয়কর দিতে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। তিনি বলেন, কর প্রদানে এদেশের মানুষের মধ্যে নাটকীয় পরিবর্তন এসেছে, আর এটা সম্ভব হয়েছে সরকারী সেবা নিশ্চিত করার কারণে। সোমবার সচিবালয়ের নিজ দফতরে অনলাইনের মাধ্যমে নিজের আয়কর বিবরণী দাখিল করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। পরে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। অর্থমন্ত্রী জানান, ২০১৭-১৮ করবর্ষের জন্য তিনি ২ লাখ ২৭ হাজার ৯২১ টাকার আয়কর দিয়েছেন। এছাড়া গত দশ বছরে তার সম্পদ বেড়েছে এক কোটি ১৩ লাখ ৩২ হাজর ৪৬১ টাকা। ওই সময় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য কালীপদ হাওলাদার ও অর্থমন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। মুহিত বলেন, আয়কর প্রদানে এদেশের মানুষের ফিলিংসের বিষয়টিতে নাটকীয় পরিবর্তন এসেছে। আগে ভয়ে কেউ আয়কর দেয়ার সাহস পেত না। কর কর্মকর্তাদের মানুষ পছন্দ করতো না। আর এখন ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে মানুষ কর প্রদান করছেন। সবচেয়ে ভাল লাগার জায়গা হচ্ছে, এদেশের তরুণ সমাজ কর প্রদানে এগিয়ে আসছেন। তাদের কারণে দ্রুত দেশে আয়কর প্রদানকারীর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, গত ২০০৯ সালে আমরা যখন ক্ষমতায় আসি তখন করদাতার সংখ্যা ছিল ৭ লাখ। এরপর ২০১৫ সালে দাঁড়ায় ১৫ লাখে। আর সেটা গত তিন বছরে দাঁড়িয়েছে ৩৮ লাখে। সে হিসাবে করদাতার সংখ্যা তিন বছরে বেড়েছে প্রায় তিন গুণ। এটা শীঘ্রই এক কোটি ছাড়িয়ে যাবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পরই বাজেটের আকার নিয়ে আমার দুঃশ্চিন্তা ছিল। এরপর থেকে বাজেটের আকার বাড়ানোর চেষ্টা করেছি। এ কারণে গত দশ বছরে বাজেটর আকার কয়েকগুণ বেড়েছে। এর সুফল পেতে শুরু করেছে সাধারণ জনগণ। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিনি আর আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন না। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে কোন দায়িত্ব নেয়ার বিষয়ে নিজের অনাগ্রহের কথা তুলে ধরেন তিনি। অর্থমন্ত্রী বলেন, আর কয়েকদিন পরই তিনি ৮৫ বছরে পা দিতে যাচ্ছেন। এখন অবসর গ্রহণেরই সময়। আর তাই তিনি অবসরে চলে যাচ্ছেন। তিনি জানান, তার মতো এই বয়সে অবশ্য মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ দায়িত্ব পালন করছেন। ঋণ খেলাপীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঋণখেলাপী, করখেলাপী এবং বিল খেলাপীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের কোন সুযোগ নেই। এটা আইনেই রয়েছে। তবে ঋণখেলাপীরা এখন ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ নিতে পারে। এতে খারাপ কিছু নেই। বরং সরকারের আয় বাড়বে। এছাড়া এটা ব্যাংক-গ্রাহকের বিষয়। বিষয়টি তারাই দেখবে। পরবর্তী অর্থমন্ত্রী কে হচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তার মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী নির্ধারণ করে থাকেন। এটা একমাত্র পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের বিষয়। নিজের প্রথম আয়কর প্রদানের বিষয়টি উল্লেখ করে মুহিত বলেন, ছাত্রবস্থায়ও তিনি আয়কর দিয়েছেন। চাকরি জীবনে কয়েকবার গ্যাপ হলেও দায়িত্ব গ্রহণের পর সচিবালয়ে বসেই তিনি নিয়মিত আয়কর রিটার্ন দাখিল করছেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালে যখন ক্ষমতায় আসি তখন সম্পত্তি ছিল এক কোটি ১৪ লাখ ৮৩ হাজার ৩৬ টাকা। গত দশ বছরে তা বেড়ে ২০১৮ সালে দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ২৮ লাখ ১৫ হাজার ৪৯৭ টাকা। আয়করের বিবরণী উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০১৭-২০১৮ করবর্ষে মোট আয় হয়েছে ১৭ লাখ ৯৭ হাজার তিন শ’ ৪৮ টাকা। এটা ট্যাক্সেবল ইনকাম। আর নন ট্যাক্সেবল ইনকাম হচ্ছে ১৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা। সবমিলিয়ে মোট আয় হয়েছে ৩৪ লাখ ২৮ হাজার টাকা। তিনি জানান, আমি সরকারের পক্ষ থেকে ১০ লাখ ৬৭ হাজার ৫৮০ টাকা পাই। কমিশন থেকে পাই ১ লাখ ২৫ হাজার ৩৪২ টাকা। মেইনটেনেন্স থেকে ২ লাখ ৬৮ হাজার ৯৭৮ টাকা, ইউএস ডলার বন্ড থেকে পাই ১ লাখ ৫৮ হাজার ১৭০ টাকা, ও ডিভিডেন্ট থেকে ১৬ হাজার ৯২৩ টাকা পেয়েছি। মোট আয় হয় ১৬ লাখ ৩০ হাজার ৯৯৩ টাকা। এর মধ্যে আয়কর হিসেবে বেতন থেকে নেয়া হয়েছে ১ লাখ ৫৪ হাজার ৪৪৩ টাকা। এছাড়া পে অর্ডারের মাধ্যমে দিলাম ৬৮ হাজার ৪৭৮ টাকা আয়কর পরিশোধ করা হলো। মুহিত বলেন, আয়কর প্রদান একটি গোপনীয় বিষয়। কার কত সম্পদ আছে, কে কত টাকা আয়কর দিচ্ছেন তিনি এটা প্রকাশ করলেও সবার জন্য এটা প্রযোজ্য নয়। তিনি বলেন, মন্ত্রীরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আয়কর বিবরণীর একটি কপি দিয়ে থাকেন। এটা সাংবাদিকদের পেতে হলে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করতে হবে।
×