ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ

আপীল বিবেচনাধীন থাকা অবস্থায় দণ্ড স্থগিতের বিধান নেই

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২৭ নভেম্বর ২০১৮

আপীল বিবেচনাধীন থাকা অবস্থায় দণ্ড স্থগিতের বিধান নেই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিচারিক (নিম্ন) আদালতের দ-ের বিরুদ্ধে করা আপীল আবেদন বিচারাধীন থাকা অবস্থায় দ- স্থগিতের বিধান নেই বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে হাইকোর্ট। আদালত পর্যবেক্ষণে আরও বলেছে, ‘চাইলে আবেদনকারী আপীল বিভাগে যেতে পারে। আপীল বিভাগ এ বিষয়ে একটি প্রিন্সিপাল সেটেল (নীতি নিষ্পত্তি) করতে পারে। পরবর্তীতে হাইকোর্ট তা অনুসরণ করতে পারে।’ সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর রায় ফাঁসের মামলায় তার আইনজীবী দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলামের দ- স্থগিত চেয়ে করা আবেদন খারিজ করে দিয়ে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ সোমবার পর্যবেক্ষণসহ এ আদেশ দেন। আদালতের আদেশের পর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ইউসুফ মাহমুদ মোর্শেদ ও সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহম্মেদ বলেছেন , আদালতের এই আদেশের ফলে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াসহ বিচারিক আদালতে যাদের দ- হয়েছে তাদের কেউই আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। জামিন নিতে পারেন কিন্তু দ- তো মওকুফ হলো না। আদালতে আবেদনের পক্ষে ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম নিজেই শুনানি করেন। আর রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন সহকারী এ্যাটর্নি জেনারেল ইউসুফ মাহমুদ মোর্শেদ। আদালতের আদেশের পর সহকারী এ্যাটর্নি জেনারেল ইউসুফ মাহমুদ মোর্শেদ সাংবাদিকদের বলেন, ব্যারিস্টার ফখরুলের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে হাইকোর্ট। ফলে তার দ- বহাল আছে। যদি আজকে তার সাজাটা স্থগিত হতো তাহলে রাজনৈতিকভাবে যারা দ-প্রাপ্ত আসামি আছে তারা আসন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারত। এই আদেশের ফলে তাদের আর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সুযোগটা থাকল না। এর মধ্যে যাদের সুপ্ত ইচ্ছা ছিল যে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ খালেদা জিয়াসহ অন্যরা নির্বাচন অংশগ্রহণ করতে পারবেন। সেই ইচ্ছাটা আপাতত বাতিল হয়ে গেল। ফৌজদারি কার্যবিধির এমন কোন সেকশন নেই যেটা অনুসরণ করে সাজাটা স্থগিত করা যাবে। যার কারণে আদালত পর্যবেক্ষণ দিয়ে তার আবেদন খারিজ করেছেন। সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহম্মেদ জনকণ্ঠকে বলেন, হাইকোর্ট যেহেতু একটি রুলিং হয়েছে, তাদের দুই বছরের দ- হয়েছে তারা নির্বাচন করতে পারবে না। খালেদা জিয়াসহ অন্যান্য বিচারিক আদালতে যাদের দ- হয়েছে তাদের কেউই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণ করতে পারবে না। হাইকোর্টের রায় মানতে হবে সবাইকে। ন্যূনতম ২ বছর দ-প্রাপ্ত হলে এবং তার পর ৫ বছর অতিবাহিত না হলে সে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। এ ছাড়া সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদে সংসদে নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতা ও অযোগ্যতার বিষয়ে বলা হয়েছে, যদি কেউ নৈতিক স্খলনজনিত কোন ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দুই বছরের কারাদ-ে দ-িত হন এবং তার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বছরকাল অতিবাহিত না হয়ে থাকে, তবে তিনি সংসদ সদস্য থাকার যোগ্য হবেন না। উল্লেখ্য, মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদ- কার্যকর হওয়া সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায় ফাঁসের মামলায় ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর রায় ফাঁসের মামলার ১০ বছর কারাদ- দিয়ে রায় দেন বাংলাদেশ সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালের বিচারক কে এম শামসুল আলম। রায়ে সাকা চৌধুরীর আইনজীবী ব্যারিস্টার এ কে এম ফখরুল ইসলামকে ১০ বছর কারাদ- ও দশ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাস কারাদ- এবং ম্যানেজার মাহবুবুল হাসান, ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলামের জুনিয়র আইনজীবী মেহেদী হাসান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কর্মচারী ফারুক আহমেদ ও নয়ন আলীকে সাত বছর করে কারাদ- দেয়া হয়। অন্য দুই আসামি সাকা চৌধুরীর স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী ও ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী খালাস পান এবং অন্য চারজনকে দশ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে ছয়মাস করে কারাদ-ও দেয়া হয়। এ দ-ের বিরুদ্ধে আপীলের পর ২০১৬ সালের ৪ এপ্রিল কারাদ-প্রাপ্ত আইনজীবী ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলামকে জামিন দিয়েছিল হাইকোর্ট। এদিকে তার আপীল বিচারাধীন রয়েছে। এ অবস্থায় তিনি দ- স্থগিত চেয়ে আবেদন করেন। যেটা সোমবার খারিজ হয়ে যায়। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মৃত্যুদ-াদেশ প্রদান করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। তবে রায়ের আগেই সাকা চৌধুরীর স্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্য এবং আইনজীবীরা রায় ফাঁসের অভিযোগ তোলেন। তারা ‘রায়ের খসড়া কপি’ সাংবাদিকদের দেখান এবং স্পাইরাল বাইন্ডিং করা কপি নিয়ে ট্রাইব্যুনালের এজলাস কক্ষে যান। এ রায় ফাঁসের অভিযোগে তৎকালীন ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করেন।
×