ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ধর্ষণের শিকার স্বর্ণজয়ী ভারোত্তোলক

প্রকাশিত: ০৪:৩৭, ২৭ নভেম্বর ২০১৮

ধর্ষণের শিকার স্বর্ণজয়ী ভারোত্তোলক

জিএম মোস্তফা ॥ শরীর ও মন একে অপরের পরিপূরক। একটিকে ব্যতিরেকে আরেকটির কল্পনা করা যায় না। শরীর হচ্ছে মনের আধার। মানসিক সুস্থতার জন্য প্রয়োজন শারীরিক সুস্থতা। আর শারীরিক সুস্থতার প্রধান বাহন খেলাধুলা। ব্যায়াম ও খেলাধুলা শুধু দেহের বৃদ্ধি ঘটায় না, মনের উন্নতি সাধন করে। কিন্তু দেশের খেলাধুলা নিয়ে যারা কাজ করেন, সেই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের ভবনে সন্ধান পাওয়া গেল বিকৃত মনের এক মানুষের! খোদ ক্রীড়া পরিষদ ভবনের ভেতরেই ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক নারী ভারোত্তোলক। ঘটনার পর থেকে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন জাতীয় ক্লাব ভারোত্তোলনে স্বর্ণজয়ী ওই নারী ভারোত্তোলক। তিনি এখন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ভর্তি। ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে খোদ ভারোত্তোলন ফেডারেশনের এক অফিস সহকারীর বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম সোহাগ আলী। গত ১৩ সেপ্টেম্বরের ঘটনা। ভারোত্তোলকের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পুরনো ভবনের চার তলায় ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ভারোত্তোলন ফেডারেশনের অফিস সহকারী সোহাগ আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে ওই ভারোত্তোলকের পরিবার। জানা যায়, ১৫ সেপ্টেম্বর খেলা ছিল। এ জন্য ১৩ সেপ্টেম্বর অনুশীলন ছিল। এ সময় চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে আলোচনার জন্য ওই তরুণীকে পুরনো জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের চার তলায় ডেকে নেন সোহাগ আলী। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাকে একটি রুমে ঢুকিয়ে দরজা আটকে দেয়া হয়। ধর্ষণের শিকার ওই ভারোত্তোলককে রুমে নিয়ে যেতে কর্মচারী মালেক ও আরেকজন নারী ভারোত্তোলক সহায়তা করেছেন বলে তার পরিবার অভিযোগ করেছে। ঘটনাটি তার পরিবারের লোকজন জেনেছেন অনেক পরে। বাড়ি ফিরলেও কাউকে কিছু বলেননি ধর্ষণের শিকার ওই নারী ভারোত্তোলক। কিন্তু তিনি মানসিকভাবে প্রচ- ভেঙে পড়েছিলেন। তার আচরণ ও কথাবার্তা অসংলগ্ন হয়ে গিয়েছিল। গেল অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে তিনি বাড়ির পেছনের পুকুরে ডুবে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করলে বিষয়টি পরিবারের লোকজন জানতে পারেন। এরপর থেকে গ্রাম্য কবিরাজ দিয়ে চিকিৎসা চলছিল। কিন্তু শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হয়ে পড়লে ২৩ অক্টোবর গ্রাম থেকে ঢাকায় এনে মানসিক হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয় তাকে। একদিন পরে নেয়া হয় শয্যায়। সেখানেই এখন চলছে তার চিকিৎসা। হাসপাতালের কর্তব্যরত একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, প্রচ- মানসিক শক পাওয়ায় এই অবস্থা হয়েছে মেয়েটির। তবে তার অবস্থা এখন উন্নতির পথে। এদিকে সামাজিক লজ্জা ও পুলিশী হয়রানির ভয়ে ওই নারী ভারোত্তোলকের পরিবার এখন পর্যন্ত কোন মামলা দায়ের করেনি। তবে ফেডারেশনে গিয়ে তারা অভিযোগ জানিয়েছেন। ফেডারেশনের সহ-সভাপতি উইং কমান্ডার মহিউদ্দিন আহমেদ পুরো বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। এ জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করার কথাও জানিয়েছেন তিনি। ফেডারেশন জানিয়েছে, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত অভিযুক্ত সোহাগের চাকরি স্থগিত থাকবে। এদিকে ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকে উধাও ধর্ষক সোহাগ। রবিবার পর্যন্ত তাকে দেখা গেলেও সোমবার থেকে লাপাত্তা অভিযুক্ত ওই কর্মচারী। এমনকি ফোনেও তাকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে ফেডারেশন।
×