ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বরিশালে মহাজোটের আসন বৃদ্ধিতে আওয়ামী লীগে হতাশা

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ২৭ নভেম্বর ২০১৮

বরিশালে মহাজোটের আসন বৃদ্ধিতে আওয়ামী লীগে হতাশা

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ আওয়ামী লীগের ঘোষিত মনোনয়নে বরিশালের একটি আসন ব্যতীত বাকি আসনে শুধু প্রার্থীর ব্যক্তি ইমেজ সঙ্কটে ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। আওয়ামী লীগের দুই সংসদ সদস্যকে বাদ দিয়ে আরও একটি আসন মহাজোটের জন্য বৃদ্ধি করায় হতাশা বিরাজ করছে আওয়ামী লীগের দুর্গে। নির্বাচনী জরিপে দেখা গেছে, নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশালের ছয়টি আসন ছিল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের দখলে। এর মধ্যে চারটি আসনে আওয়ামী লীগ, একটিতে জাতীয় পার্টি ও একটিতে ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছিলেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশালের ছয়টি আসনই নিজেদের ঘরে নেয়ার জন্য দশ বছর ধরে তৃণমূল পর্যায়ে ব্যাপক ভূমিকা রেখে ভোটারদের কাছে নিজেদের ইমেজ সৃষ্টি করার মাধ্যমে নৌকার জোয়ার তুলেছিলেন মনোনয়ন প্রত্যাশী বর্তমান সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে সম্ভাব্য প্রবীণ ও নবীন প্রার্থীরা। দীর্ঘদিন থেকে মাঠে কাজ করা ওই সব প্রবীণ ও নবীন প্রার্থী তো দূরের কথা জনপ্রিয় এক সংসদ সদস্যসহ দুজনকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত করা হয়েছে। সূত্রমতে, রবিবার সকালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে দলীয় মনোনীত প্রার্থীদের চিঠি দেয়া শুরু হয়। সে সময় প্রার্থী তালিকায় বরিশালের চারটি আসনের আওয়ামী লীগের বর্তমান চার সংসদ সদস্যের নাম ছিল। রাতের মধ্যে দুজন সংসদ সদস্যের নাম পরিবর্তন হয়ে যায়। এরমধ্যে এবারই সর্বপ্রথম মহাজোটের জন্য আরও একটি আসন বৃদ্ধি করে বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) নির্বাচনী এলাকা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ফলে দলীয় মনোনয়ন থেকে ছিটকে পড়তে হয়েছে ওই আসনের বর্তমান জনপ্রিয় সংসদ সদস্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ মুক্তিযোদ্ধা এ্যাডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুসকে। গত পাঁচ বছরে বর্তমান সংসদ সদস্যের ব্যক্তি ইমেজের কারণে আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া ওই আসনে সাংগঠনিক কোন কার্যক্রম কিংবা ভোটব্যাংক না থাকা সত্ত্বেও মহাজোটের প্রার্থী হচ্ছেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও অভিনেতা সোহেল রানা। বর্তমান সংসদ সদস্য ছাড়া অন্য কাউকে এ আসনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে মেনে নিতে নারাজ আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় অগ্রভাগে রয়েছেন শক্তিশালী প্রার্থী এস সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু। একইভাবে বরিশাল-৫ (সদর) আসন থেকে ছিটকে পড়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য জনপ্রিয় মেয়র প্রয়াত শওকত হোসেন হিরনের স্ত্রী জেবুন্নেছা আফরোজ। ওই আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম। তৃণমূল ভোটারদের পছন্দের তালিকায় এ আসনে অগ্রভাগে ছিলেন, বঙ্গবন্ধু পরিষদের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন আহম্মেদ বীরবিক্রম, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল ও তরুণ নেতা সালাহউদ্দিন রিপন। এখানে বিএনপির প্রার্থী হতে পারেন দলের যুগ্ম মহাসচিব প্রভাবশালী নেতা এ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার। বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনে এবারও মনোনয়ন পেয়েছেন ওই আসনের জনপ্রিয় সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে শক্তিশালী অবস্থানের কারণে সেখান থেকে হাসানাত আব্দুল্লাহর বিপক্ষে দল থেকে কেউ মনোনয়ন সংগ্রহ করেননি। ব্যক্তি ইমেজ থেকে শুরু করে সর্বগুণে এগিয়ে থাকা আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর জয়ের ব্যাপারেও নেতাকর্মী ও সমর্থকরা শতভাগ আশাবাদী। এখানে বিএনপির প্রার্থী হতে পারেন দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহান। বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ) আসনে দলীয় মনোনয়নের চিঠি পেয়েছেন বর্তমান এমপি স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ নাথ। দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল চরম আকার ধারণ করায় ওই আসনে ১০জন দলীয় মনোনয়নের আশায় মাঠে নেমেছিলেন। শেষ পর্যন্ত তাদের কেউ তালিকায় ঠাঁই পাননি। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকার অগ্রভাবে ছিলেন, আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি আফজালুল করিম, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাহেব আহম্মেদ, ২০০১ সালে মনোনয়ন পাওয়া মেজর (অব.) মহসিন সিকদার। ওই আসনে বিএনপির মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সাবেক এমপি ও জেলা উত্তর বিএনপির সভাপতি মেজবা উদ্দিন ফরহাদের। মহাজোটকে ছেড়ে দেয়া বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনটি এবারই সর্বপ্রথম আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দিতে চেয়েছিলেন আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় সহসম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান। এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকা-ের মাধ্যমে দলকে সুসংগঠিত করে তৃণমূলের চাওয়া-পাওয়ার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মিজানুর রহমান দলীয় মনোনয়ন ফরমও জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু ওই আসনে এবারও মহাজোটের শরিক দল ওয়ার্কার্স পার্টির বর্তমান সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট টিপু সুলতানকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বেশ শক্ত অবস্থানে রয়েছেন বরিশাল বিভাগ উন্নয়ন ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান। এখানে বিএনপির প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী বেগম সেলিমা রহমান। বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে ছিলেন, দলের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা ম-লীর সদস্য মেজর জেনারেল আব্দুল হাফিজ মল্লিক (অব.) ও বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুরুল হক মঞ্জু। তবে আসনটিও অতীতের ন্যায় মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয়ায় এখানে প্রার্থী হয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বতর্মান সংসদ সদস্য নাসরিন জাহান রতœা আমিন। বিএনপির শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন সাবেক এমপি আবুল হোসেন খান। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির নেতৃস্থানীয় একাধিক নেতা জানান, মহাজোট থেকে জনবিচ্ছিন্ন নেতাদের মনোনয়ন দেয়ায় জয়ের ব্যাপারে তারা শতভাগ আশাবাদী। তবে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুস বলেন, মহাজোটের প্রার্থী নিয়ে বিএনপির খুশি হবার কিছু নেই। বরিশাল জেলার ছয়টি সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগ থেকে অর্ধশতাধিক নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। তাদের মধ্যে দল থেকে যাদের যোগ্য মনে করেছে তাদেরই মনোনয়ন দিয়েছে। এখন দলের সবার উচিত হবে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করে তার বিজয় নিশ্চিত করা।
×