ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাম্পকে শিক্ষা দিলেন যে তরুণী

প্রকাশিত: ০৩:৫২, ২৭ নভেম্বর ২০১৮

ট্রাম্পকে শিক্ষা দিলেন যে তরুণী

৭২ বছরের এক ব্যক্তিকে আবহাওয়া ও জলবায়ুর ফারাক বুঝিয়েছেন ১৮ বছরের মেয়েটি। সেটাই বদলে দিয়েছে তার জীবন। রাতারাতি আন্তর্জাতিক খ্যাতি। ফোন। টুইট। মেসেজের বন্যা। কারণ, যাকে টুইটারে প্রকৃতির পাঠ দিয়েছেন আস্থা শর্মা, তিনি খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট। বুধবার ওয়াশিংটনের তাপমাত্রা শূন্যের চেয়ে ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস নিচে নেমেছিল। ট্রাম্প টুইট করেন, ‘হিংস্র ও দীর্ঘায়িত শীত সব রেকর্ড ভেঙ্গে দিতে পারে। কোথায় গেল বিশ্ব উষ্ণায়ন!’ আবহাওয়ার রেকর্ড অবশ্য বলছে, ১৮৮০ সালে ওয়াশিংটনের তাপমাত্রা নেমেছিল শূন্যের চেয়ে ১১ ডিগ্রী সেলসিয়াস নিচে। আনন্দবাজার পত্রিকা। কিছুক্ষণের মধ্যেই ট্রাম্পের ওই টুইট লক্ষাধিক বার রি-টুইট হয়। যার বেশিরভাগটাই ট্রাম্পের জ্ঞানের বহর নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রƒপ। বারাক ও মিশেল ওবামার ভক্ত যোরহাটের ১৮ বছরের ছাত্রী আস্থা ট্রাম্পের টুইটের জবাবে লেখেন, আমি আপনার থেকে ৫৪ বছরের ছোট। মোটামুটি নম্বর পেয়ে সবে হাইস্কুলের পরীক্ষায় পাস করেছি। কিন্তু আমিও আপনার জ্ঞাতার্থে জানাতে পারি, কাকে বলে আবহাওয়া আর কাকে বলে জলবায়ু। চাইলে আপনার বোঝার সুবিধার জন্য আমার এনসাইক্লোপিডিয়া বইটি আপনাকে ধার দিতে পারি। ওটা দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে আমার কাছে আছে। বইটায় ছবি ও তথ্য দিয়ে সব ভাল করে বোঝানো আছে। সঙ্গে সঙ্গে ‘হিট’ আস্থার টুইট। পরে আস্থা ফের লেখেন, আমার মনে হয় প্রেসিডেন্ট বোঝাতে চেয়েছেন, এই ‘আর্কটিক কোল্ড ব্লাস্ট’ বিশ্ব উষ্ণায়নের তত্ত্বকে ভুল প্রমাণ করে। কিন্তু আমার মতে, একবার ‘আর্কটিক কোল্ড ব্লাস্ট’ হওয়া মানেই বিশ্ব উষ্ণায়ন মিথ্যে হয়ে যায় না। আমি ভুল হতে পারি। কিন্তু নিজের মতটা জানালাম মাত্র। ছোট্ট মেয়ের এমন সাহস নেটিজেনদের খুবই মনে ধরেছে। কেউ আবার আস্থার উদ্দেশে টুইট করে বুঝিয়েছেন, অত বিনয়ী হওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। এটা প্রমাণিত বৈজ্ঞানিক সত্য। বিশেষজ্ঞরা এই সূত্রে ফের বুঝিয়ে ছেড়েছেন, আবহাওয়া মানে বিশেষ কোন দিনের তাপমাত্রা, জলীয়বাষ্প, বায়ুচাপ ইত্যাদি। আর জলবায়ু হলো দীর্ঘদিনের আবহাওয়া পরিস্থিতির গড় ও সামগ্রিক চিত্র। বিশ্বের জলবায়ু বদলেরই একটি দীর্ঘকালীন লক্ষণ হলো বিশ্ব উষ্ণায়ন। এসব বিজ্ঞানের কথা ছাপিয়ে চলছে আস্থার প্রশংসা। বেশিরভাগই ট্রাম্পের দেশের মানুষ। আস্থার সাহসী টুইটের প্রশংসায় পঞ্চমুখ তারা। কালিওপা ডেভ যেমন লিখছেন, ওই টুইটের সঙ্গে একটা কার্টুন থাকলে আরও জমত। ব্র্যাড অসবর্ণের টুইট, ‘আমার নতুন হিরো আস্থা শর্মা।’ ডন জোনস লেখেন, এতক্ষণে নিশ্চয়ই ওয়াশিংটন ডিসির তাপমাত্রা কয়েক ডিগ্রী বেড়ে গেছে। কারণ ট্রাম্পকে টুইটের আগুনে রোস্ট করে ফেলেছেন আস্থা শর্মা। গত ৪৮ ঘণ্টায় টুইটারে আস্থার বিদেশী ফলোয়ার লাফিয়ে দু’ শ’ ছাপিয়ে গেছে। প্রশ্ন হলো, ট্রাম্পের কাজকর্ম, কথাবার্তায় মজা তো অনেকেই পাচ্ছেন। বিরক্তও হচ্ছেন অনেকে। হঠাৎ যোরহাটে বসে একটা মেয়ে কেন বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাবান শাসকটিকে জ্ঞান দেয়ার স্পর্ধা দেখাতে গেলেন? এতশত ভাবেনি আস্থা। ভাবেইনি, এক অখ্যাত মেয়ের একটা কমেন্টে এমন প্রতিক্রিয়া হবে। আসলে আঠারো বছর বয়সেই তো স্পর্ধারা মাথা তোলার ঝুঁকি নেয়। তাই নিজের সম্পর্কে আস্থার মন্তব্য, আমার সমস্যা হলো, এই কঠোর বাস্তবের দুনিয়ায় আমি রূপকথার চরিত্র হয়ে থাকতে চাই।
×