ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইউক্রেনের যুদ্ধজাহাজ জব্দ

প্রকাশিত: ০৩:৫২, ২৭ নভেম্বর ২০১৮

ইউক্রেনের যুদ্ধজাহাজ জব্দ

রাশিয়া অধিকৃত ক্রিমিয়া উপকূলে ইউক্রেন নৌবাহিনীর তিনটি জাহাজ জব্দ করেছে মস্কো। রবিবার জাহাজগুলো জব্দ করার আগে সেগুলোর দিকে গুলি ছুড়ে বেশ কয়েকজন ইউক্রেনীয় নাবিককে আহত করেছে রুশ নিরাপত্তা বাহিনী। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে ইউক্রেনের পার্লামেন্ট ওই অঞ্চলে সামরিক আইন জারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে অবস্থিত রুশ দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছে ইউক্রেনবাসী। এ সময় তারা একটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ইউক্রেন প্রশ্নে সোমবার জরুরী বৈঠকে বসেছে। খবর বিবিসি ও এএফপির। ক্রিমিয়া উপদ্বীপের জলসীমার মধ্যে জাহাজ আটকের ঘটনাটি দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। দুই দেশই ঘটনার জন্য একে অপরকে দোষারোপ করেছে। দুটি ছোট যুদ্ধজাহাজ ও একটি টাগবোট আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন ইউক্রেনের নাবিক আহত হয়েছে। পরে প্রায় ১৫০ জন রুশ দূতাবাসের বাইরে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখান। কিছু লোক দূতাবাসের ভেতরে আগুনের মশাল ছুড়ে মারে। এতে অন্তত একটি গাড়ি পুড়ে যায়। বিক্ষোভে অংশ নেয়া ওলেক্সি রাইয়াবোভ বলেন, রাশিয়া আমাদের সামরিক বাহিনীর ওপর যে ধরনের কাজ করেছে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতেই আজ আমরা এখানে জড়ো হয়েছি। আমরা খুব ক্ষুব্ধ হয়েছি। অনেক দিন আগেই আমরা দেশটির সঙ্গে সব ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছি। ইউক্রেনের ন্যাশনাল সিকিউরিটি এ্যান্ড ডিফেন্স কাউন্সিলের সঙ্গে এক বৈঠকে প্রেসিডেন্ট পেত্রো পোরোশেঙ্কো রাশিয়ার কাজকে অনর্থক ও উন্মত্ত কাজ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, এজন্য তিনি সোমবারের পার্লামেন্টকে অনুরোধ করেছেন সামরিক আইন জারি করতে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এর মানে এই নয় যে, ওই অঞ্চলে যুদ্ধ ঘোষণা করা হচ্ছে। ইউক্রেনের কখনই কারও সঙ্গে লড়াই করার পরিকল্পনা নেই। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেছে যে, সামরিক বাহিনীকে সম্পূর্ণ যুদ্ধের প্রস্তুতির জন্য আদেশ দেয়া হয়েছে। ক্রিমিয়া উপদ্বীপের কৃষ্ণ সাগর ও আজোভ সাগর এলাকায় সম্প্রতি উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৪ সালে রাশিয়া ক্রিমিয়া দখল করে নেয়। ইউক্রেনীয় জাহাজ অবৈধভাবে রুশ জলসীমায় প্রবেশ করেছে বলে রাশিয়া অভিযোগ করলে সঙ্কট শুরু হয়। সকালের দিকে ইউক্রেনের বেরডিনস্ক ও নিকোপোল যুদ্ধজাহাজ এবং ইয়ানা কাপা টাগ জাহাজ কৃষ্ণ সাগরের বন্দর ওডিসা থেকে আজোভ সাগরের মারিউপোল যাওয়ার চেষ্টা করে। দুই দেশই ওই জলসীমা সমানভাবে ব্যবহার করে আসছে। ইউক্রেন জানিয়েছে, রুশরা তাদের জাহাজের পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে। টাগ জাহাজকে ধাক্কা দিয়েছে। জাহাজগুলো দ্রুত সে স্থান থেকে কার্চ প্রণালী পার হওয়ার চেষ্টা করছিল। যা আজোভ সাগরে যাওয়ার একমাত্র পথ। তবে ট্যাঙ্কার জাহাজ সেতুর নিচে তাদের পথ আটকে দেয় রাশিয়ানরা। এছাড়াও আকাশে রাশিয়ার দুটি যুদ্ধবিমান ও দুটি হেলিকপ্টারও ওই এলাকায় টহল দিচ্ছিল। রাশিয়া অভিযোগ করেছে, জাহাজগুলো অবৈধভাবে তাদের জলসীমায় প্রবেশ করেছে। যেজন্য নিরাপত্তাজনিত কারণে ট্রাফিক তাদের আটকে দেয়। ইউক্রেনের নৌবাহিনী পরে জানায়, ওই এলাকাটি দ্রুত ছেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাদের জাহাজগুলোকে আঘাত ও নিষ্ক্রিয় করে দেয়া হয়। এতে ছয়জন নাবিক আহত হন। রাশিয়ার ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিস (এফএসবি) নিশ্চিত করেছে যে, তাদের একটি টহল জাহাজ তিনটি ইউক্রেনের জাহাজকে আটক করতে শক্তি প্রয়োগ করে। তিনজন নাবিক এতে আহত হয়েছে। ইউক্রেন জানায়, সাগরের মধ্যদিয়ে মারিউপোল নিয়ে যাওয়ার রাশিয়ার পরিকল্পনাটি তারা জানতে পেরেছে। কয়েক মাস ধরেই রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছিল। ২০০৩ সালের চুক্তি অনুসারে মস্কো ও কিয়েভ কের্চ প্রণালী ও অজোভ সাগরের আঞ্চলিক পানি ভাগাভাগি করে নেয়। কিন্তু সম্প্রতি রাশিয়া ইউক্রেনের বন্দর হতে যাওয়া বা তার উদ্দেশে যাত্রা করা সব নৌযান তদারকি শুরু করে। রাশিয়ার যুক্তি শক্তি প্রয়োগ করে ইউক্রেনের নৌযান জব্দ করা, হতাহতের ঘটনা উত্তেজনা বাড়িয়ে দিয়েছে। মস্কো কখনই নিজের ঘাড়ে দোষ নেবে না। যখনই রাশিয়া শক্তি প্রয়োগ করেছে প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন সাফাই গেয়ে বলেছেন, আমরা আগে শুরু করিনি। এরই প্রেক্ষাপটে ২০০৮ সালে রাশিয়া-জর্জিয়া যুদ্ধ পর্যন্ত গড়ায়। সুতরাং, রবিবার যা ঘটেছে এবং সামনে যা ঘটতে যাচ্ছে তার জন্য ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পোরোশেঙ্কোর সরকারের ওপর দোষারোপ করা হবে-মস্কোর কাছ থেকে এটাই অনুমেয়। ২০১৪ সাল থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ইউক্রেনের বিরুদ্ধে লড়াই শুরুর পর থেকে পূর্ব দানেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলে ১০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। রাশিয়া এই বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অস্ত্র দিয়ে এবং নিজেদের সৈন্য পাঠিয়ে সহায়তা করছে বলে ইউক্রেন ও পশ্চিমা শক্তিধর দেশগুলো অভিযোগ করে আসছে। মস্কো অবশ্য এমন অভিযোগ নাকচ করে আসছে, তবে রুশ স্বেচ্ছাসেবকরা বিদ্রোহীদের সহায়তা করছে বলে জানিয়েছে।
×