ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিদ্যুতে বেসরকারী খাত

প্রকাশিত: ০৩:৪৪, ২৭ নভেম্বর ২০১৮

বিদ্যুতে বেসরকারী খাত

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয় বিদ্যুত উৎপাদনে। এ জন্য তারা সরকারী খাতের পাশাপাশি বেসরকারী খাতকেও বিদ্যুত উৎপাদনে এগিয়ে আসার জন্য উৎসাহিত করে ব্যাপকভাবে। গত কয়েক বছরে দেশের বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি রেন্টাল পাওয়ার স্টেশন কাজ শুরু করে উৎপাদনে যায়। স্বভাবতই এতে বিদ্যুত উৎপাদনের খরচ বেশি পড়ে। সংশ্লিষ্ট মহল ও গ্রাহকদের ওজর আপত্তি সত্ত্বেও বর্তমানে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র একটি বাস্তবতা, যা সংযুক্ত হচ্ছে জাতীয় গ্রিডে। বিদ্যুত উৎপাদনও বেড়েছে অনেক। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র বিনির্মাণের পথে গেলেও সরকার আপাতত সবিশেষ জোর দিয়েছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত উৎপাদনে। সরকারী খাতের পাশাপাশি বেসরকারী খাতও এগিয়ে এসেছে আগ্রহভরে। বর্তমানে আমদানি, ক্যাপটিভ ও অন্যান্য খাতসহ মোট বিদ্যুত উৎপাদন সক্ষমতা ২০ হাজার মেগাওয়াট। মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২১ সালে এ সক্ষমতা ২৪ হাজার এবং ২০৩০ সালে ৪০ হাজার মেগাওয়াটে দাঁড়াবে। সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ১১ হাজার ৩৩ সার্কিট কিলোমিটার। সরকার বর্তমানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা থেকে বিদ্যুত আমদানি করছে এবং অদূর ভবিষ্যতে নেপাল ও ভুটান থেকেও বিদ্যুত আমদানিতে ইচ্ছুক। বাস্তবতা হলো, যে হারে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ ও বিদ্যুত উৎপাদন বাড়ছে সেই হারে সঞ্চালন লাইন টানা সম্ভব হচ্ছে না। বিদ্যুত উৎপাদন ও সরবরাহের সঙ্গে সঞ্চালন লাইনের সমন্বয় ও সংযুক্তি নিয়মিত না হলে বিদ্যুতের সুফল ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে না। এই কাজে নিয়োজিত রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সঞ্চালন কোম্পানি পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) কারিগরি সীমাবদ্ধতার পাশাপাশি লোকবল ও অর্থ সংস্থানের অভাবে যথাসময়ে সঞ্চালন লাইনের সংযোগ দিতে পারছে না। সরকারী প্রতিষ্ঠান হওয়ার কারণে আমলাতান্ত্রিক জটিলতাও আছে বৈকি। সে অবস্থায় এবার বিদ্যুত সঞ্চালনেও বেসরকারী উদ্যোক্তাদের সম্পৃক্ত করতে চায় সরকার। বিদ্যুত বিভাগ ইতোমধ্যে দুটি সঞ্চালন লাইন বেসরকারী কোম্পানির মাধ্যমে নির্মাণের পরিকল্পনাও গ্রহণ করেছে। এর একটি কক্সবাজারের মহেশখালী থেকে মদুনা ঘাট এবং অন্যটি চট্টগ্রামের রাউজান থেকে মীরসরাই পর্যন্ত। প্রকল্প দুটির একটি বিডার ফিন্যান্সিং কোম্পানি এবং অন্যটি আইপিপি প্রক্রিয়ায় করার প্রস্তাব রয়েছে। পিজিসিবি তদারক করবে প্রকল্প দুটি। উল্লেখ্য, কয়েক বছর আগে সুইজারল্যান্ড ও ভারতভিত্তিক দুটি কোম্পানি বাংলাদেশে সঞ্চালন লাইন নির্মাণের আগ্রহ দেখিয়েছিল। তবে এ নিয়ে ভিন্ন মত আছে বিভিন্ন মহলে। ভুক্তভোগীদের মতে, দেশে এমনিতেই বিদ্যুতের দাম বেশি। আমদানিকৃত কয়লা ও জ্বালানি তেলের দাম বেশি হওয়ায় কুইক রেন্টালের বিদ্যুতের দাম বেশি হবে। এ নিয়ে সমালোচনা আছে। বেসরকারী খাতে সঞ্চালন লাইনের ক্ষমতা গেলে খরচও বেশি পড়বে। অভিজ্ঞ মহলের মতে, মাত্র ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত সঞ্চালনের জন্য বেসরকারী খাতের ওপর নির্ভর করা যৌক্তিক হবে না। তা করা হলে রেন্টাল মডেলে উৎপাদন খাতের মতো সঞ্চালন খাতও তুলে দেয়া হবে বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের হাতে। সেক্ষেত্রে ক্যাপাসিটি চার্জ আরোপ করা হবে, যা জনস্বার্থবিরোধী। এর ফলে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। বিদ্যুতের দাম মানুষের নাগালের বাইরে গেলে ব্যয় বেড়ে যাবে সব ক্ষেত্রে। উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারাবাহিকতাকে আরও এগিয়ে নিতে বিদ্যুতের সাশ্রয়ী মূল্য থাকা বাঞ্ছনীয়, তা সরকারী বা বেসরকারী যে খাতেরই হোক।
×