ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে-

প্রকাশিত: ০৩:৪৪, ২৭ নভেম্বর ২০১৮

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে-

রাজধানীর সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাঠামোতে নতুন করে ‘ট্রাফিক কারিগরি ইউনিট’ গঠন করা হচ্ছে। স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই ইউনিট কার্যকর হলে পর্যায়ক্রমে পুরো মেট্রোপলিটন এলাকায় স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থা চালু হবে বলে আশা করা যায়। ফলে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে আসার ক্ষেত্রে ইতিবাচক অগ্রগতি সাধিত হবে। যানজটের কারণে নগরবাসীকে কী পরিমাণ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তা নতুন করে বলার কিছু নেই। প্রতিদিনই অসহায়ভাবে যানজট সহ্য করে যেতে হচ্ছে নগরবাসীকে। ঢাকা শহরের আয়তন ও লোকসংখ্যা অনুযায়ী যে পরিমাণ রাস্তা থাকা উচিত তার অভাব ও গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধিকে যানজটের স্বাভাবিক কারণ হিসেবে ধরে নেয়া হয়। এটা বাস্তব, কিন্তু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় ত্রুটির বিষয়টিও একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নিয়েও স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল-ব্যবস্থা কার্যকর করতে পারেনি ট্রাফিক পুলিশ। ঢাকা শহরের যানবাহনের সংখ্যা, কোন মোড়ে মিনিটে কী পরিমাণ গাড়ি অতিক্রম করেÑ এ ধরনের নানা পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ব্যাপক আয়োজন করে ঢাকায় স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল পদ্ধতি চালু করা হয়েছিল। কিন্তু এর পর আমরা দেখলাম, একই সঙ্গে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি ও ট্রাফিক পুলিশের হাতÑ দুটোই চলছে। সবুজ বাতি জ্বলে আছে, এর পরও গাড়ি থেমে আছে বা ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকে রেখেছেন। আবার লাল বাতি জ্বলা অবস্থায় পুলিশ গাড়ি যেতে ইশারা করছে। কোন সভ্য দেশ বা আধুনিক নগরে এমনটা অকল্পনীয়। পেছন ফিরে দেখা যাক। যানজট নিরসনে ২০০১-০২ অর্থবছরে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ‘ঢাকা আরবান ট্রান্সপোর্ট’ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮৮টি সড়ক-মোড়ে আধুনিক ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি বসানো হয়। নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ (কেইস) প্রকল্পের মাধ্যমে সিগন্যাল বাতিগুলো স্থাপন করে সিটি করপোরেশন। কিন্তু নানা ধরনের ত্রুটির কারণে নির্মাণ শেষে এর ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়নি। বেশ কয়েকবার পরীক্ষামূলকভাবে চালু করার পর সফলতা না পাওয়ায় তা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় পুলিশ। ২০০৮ সালের শেষের দিকে প্রকল্পটির কাজ শেষ হয়। সে সময় উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গে পুরো ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা আরও ভেঙ্গে পড়ে। পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে কিছু সময় পরই আগের মতো হাত দিয়ে সিগন্যাল ব্যবস্থায় ফিরে যায় ট্রাফিক পুলিশ। বিদেশীরা ঢাকায় এসে বিস্মিত হন। বিশ্বের সব আধুনিক শহরেই স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ট্রাফিক সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণ করা হয়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে রয়েছে ব্যতিক্রম। স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থাও আছে, আবার ট্রাফিক পুলিশ হাত দিয়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করে। পথচারী, গাড়ি চালকসহ সবারই ট্রাফিক আইন যথাসম্ভব মেনে চলা জরুরী। তবে মূল কাজটা তো ট্রাফিক পুলিশের। সারা দেশে প্রায় ১০ হাজার ট্রাফিক পুলিশের মধ্যে প্রায় ৪ হাজার ঢাকাতেই দায়িত্ব পালন করছে। যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশকে উন্নত দেশের মতো আধুনিক কৌশলে প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তোলার আবশ্যকতা রয়েছে। ঢাকাবাসীর প্রত্যাশা, ‘ট্রাফিক কারিগরি ইউনিট’ দায়িত্বশীলতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করলে সড়ক পরিস্থিতি বদলে যাবে।
×