ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মুনতাহা ইসলাম

চাপ মোকাবেলা করবেন যেভাবে

প্রকাশিত: ০৬:৫২, ২৬ নভেম্বর ২০১৮

 চাপ মোকাবেলা করবেন যেভাবে

কাজের চাপ আমাদের সবাইকেই কমবেশি মোকাবেলা করতে হয়, আর বর্তমান সময়ের প্রতিযোগিতামূলক ব্যস্ত জীবনে এই কাজের চাপ হয়ে গেছে আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। সাধারণত দেখা যায়, যে ব্যাপারগুলো আমাদের এই কাজের চাপকে অসহনীয় করে তোলে সেগুলো আসলে আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বা অফিসের কোন কাজের ডেডলাইন, বা পারিবারিক কাজ- এগুলো আমাদের করতেই হবে, চাইলেও এড়াতে পারব না, নিয়ন্ত্রণও করতে পারব না। কিন্তু একটু শান্ত হয়ে ভাবলে আমরা বের করতে পারব ঠিক কোন ব্যাপারগুলো আসলে আমাদের নিয়ন্ত্রণাধীন। আর সেগুলোকে ব্যবহার করেই আমরা মোকাবেলা করব আমাদের কাজের চাপ। দেখা যাক কাজের চাপের মোকাবেলার কিছু উপায়। শ্বাস ফেলা : এ লেখায় উল্লেখিত সবগুলো উপায় হয়ত আপনার নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে কার্যকর হবে না। কিন্তু নিজে থেকে মন্থর ও গভীরভাবে শ্বাস নেয়ার কাজটা যে কোন সময়ই করা যায়, এবং সবসময়ই এটা কার্যকরী হবে। যদি ব্যস্ত থাকা অবস্থায় এভাবে শ্বাস নিতে সমস্যা হয়, তবে এক থেকে দশ পর্যন্ত গুনে তার সঙ্গেও শ্বাস ফেলে দেখতে পারেন। আরেকটি কার্যকরী উপায় হচ্ছে যে কক্ষে আছেন সে কক্ষের বিভিন্ন জিনিসের নাম বলে সঙ্গে সঙ্গে শ্বাস নেয়া। এই পদ্ধতি কার্যকর হওয়ার কিন্তু বৈজ্ঞানিক ভিত্তি রয়েছে। আমাদের দেহ বিপদ দেখলে ‘ফাইট অর ফ্লাইট রেসপন্স’ দিয়ে মোকাবেলা করে। অর্থাৎ হয় বিপদ থেকে পালাবে, না হয় যুদ্ধ করবে। কাজের অসহনীয় চাপ পড়লে আমাদের এই রেসপন্স সক্রিয় হয়ে যায়, আমরা বিচলিত হয়ে পড়ি। ধীরে ধীরে শ্বাস ফেললে রেসপন্সটি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে, আমরা একটু শান্ত হতে পারি। ফলে আমরা ধীরস্থিরভাবে যে কাজটা করছিলাম সেটায় মনোনিবেশ করতে পারি। ছোট্ট বিরতি নেয়া : কাজের অতিরিক্ত চাপের মধ্যেই, যদি সুযোগ থাকে, আমাদের উচিত ছোট একটি বিরতি নেয়া। পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে একটু বাইরে থেকে হেঁটে আসা যেতে পারে। প্রসাধনকক্ষে ঘুরে আসাও কার্যকর। যদি কাজ করতে ঘর্মাক্ত এবং ক্লান্ত হয়ে পড়েন, ঠান্ডা পানিতে একটু মুখ ধোয়াটাও বেশ কাজে দেয়। অনেক বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দেন দাঁত ব্রাশ করবার, ব্যাপারটা অদ্ভুত শোনালেও ফলপ্রদ হয়। আর কাজের মাঝখানে কফি বা কোন পানীয় পান করলে, গবেষকরা পরামর্শ দেন কাজের জায়গা ছেড়ে অন্য কোথায় গিয়ে পান করতে। একটি তালিকা তৈরি করা : যদি একসঙ্গে অনেক অনেক কাজ দেখে বিচলিত হয়ে পড়েন, প্রথম ধাপ হতে পারে সেই কাজগুলোকে একটি তালিকায় সাজিয়ে ফেলা। আর যদি মনে হয় আপনার শুধু বড়সড় একটি কাজই করতে হবে, সেই কাজটিই কিছু ছোট ছোট ধাপে ভাগ করে একটি তালিকা বানিয়ে ফেলতে পারেন। এরপর একেকটি কাজ সম্পন্ন করে তালিকা থেকে একেকটি কাজ কেটে দিতে থাকুন। তালিকা এভাবে ছোট করার মাঝে প্রচুর মানসিক শান্তি রয়েছে, স্বীয় অগ্রগতির একটি বাহ্যিক রূপ পাওয়া যায়। তাছাড়া তালিকাটি আপনার চিন্তার সংরক্ষণাগার হিসেবেও কাজ করতে পারে। বার বার নিজের একগাদা কাজ স্মরণ করাটা আমাদের বিচলিত করে ফেলে। তাই সব কাজ মনে বার বার মাথায় না এনে, একটি তালিকা থেকে নির্দিষ্টভাবে একটি একটি করে কাজ করা আমাদের মানসিক চাপ অনেক কমিয়ে দিতে পারে। সেটা আপনি অগ্রাধিকার অনুযায়ীও করতে পারেন, আবার সহজ কাজটি আগে করে আস্তে আস্তে কঠিনগুলোর দিকে যেতে পারেন, আপনার যেটাতে সুবিধা হয়। অন্যদের মতামত নেয়া : যে কোন সমস্যায় অন্যদের মতামত নেয়াটা সে সমস্যার সমাধানের চাবিকাঠি হিসেবে কাজ করতে পারে। প্রত্যেকটা মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা। তাই অন্যদের মতামতের প্রতি চোখ-কান খোলা রাখলে একটি সমস্যাকে সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিক থেকে দেখা সম্ভব। কিন্তু এ কাজটি আপনি কিভাবে করবেন? আপনার বিশ্বাস বা শ্রদ্ধাভাজন কারও সঙ্গে আপনি সরাসরি বা ফোনে যোগাযোগ করতে পারেন। সামাজিক জীব হিসেবে অপরকে সাহায্য করা মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তির মধ্যেই পড়ে। কারণ কাউকে সাহায্য করতে পারা একজন মানুষের ভাল সামাজিক অবস্থান নির্দেশ করে। তাই পরামর্শ চাইলে ভাল পরামর্শ পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। ব্যায়াম করা : ব্যায়াম আমাদের মানসিক চাপ কমায়, এ ব্যাপারটি বৈজ্ঞানিকভাবেই প্রমাণিত। তবে ব্যায়াম মানে এই নয় যে আপনি কাজের মাঝখানে হঠাৎ কসরত করে ঘাম ঝরিয়ে ফেলবেন। শুধু একটু অফিস বা রুমে হেঁটে বেড়ালেও সেটা অনেক বড়সড় পার্থক্য তৈরি করে দিতে পারে। এছাড়া সকালবেলা যোগব্যায়াম করার অভ্যাস তৈরি করাটাও বেশ উপকারী। কাজের মাঝখানে সহকর্মী বা বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে ছোটখাট খেলা বা একটু বিনোদন করা যেতে পারে। যদি লাঞ্চের সময় একটু বেশি অবসর পান, একটু হেঁটে আসুন। কাজের মাঝেই ব্যায়ামের ছোট ছোট লক্ষ্য ঠিক করুন। সেই লক্ষ্যগুলোতে পৌঁছাতে পারলে আপনি নিজস্ব একটি আত্মবিশ্বাস খুঁজে পাবেন যে, শুধুমাত্র আপনার পেশার আয় বা রেজাল্টের গ্রেড পয়েন্টই আপনাকে সংজ্ঞায়িত করে না।
×