ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আপনি তরুণ না বৃদ্ধ

প্রকাশিত: ০৬:৫২, ২৬ নভেম্বর ২০১৮

আপনি তরুণ না বৃদ্ধ

আপনার বয়স কত এখন? ধরা যাক ৪০। কিন্তু প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠলে আপনার এখনও ফুটবল খেলতে ইচ্ছে করে। সকালে ফ্রেশ হতে গিয়ে গলা ছেড়ে গান গান। মাঝ রাস্তায় ঝুম বৃষ্টি নামতে দেখলে নিজেকে আটকে রাখতে পারেন না, গাড়ির দরজা খুলে নেমে যান ভিজতে। তার মানে কি এই যে আপনার বয়স ৪০? বিজ্ঞানীরা বলছেন এর মানে আপনার মনের বয়স ১৫-১৬!! জানতে হবে মনের বয়স : মানসিকভাবে আপনি যা বোধ করছেন বা যা অনুভব করছেন অথবা নিজেকে যে বয়সের বলে ভাবছেন তাই আপনার মনের বয়স। এখন প্রশ্ন থেকেই যায় যে মনের বয়সই কি তাহলে আসল বয়স নয়? প্রথম যেদিন পৃথিবীতে এসেছেন তারপর পার হয়ে গেছে অনেকগুলো দিন, অনেকগুলো বছর। আপনার উচ্চতা কিংবা জুতার সাইজে যেভাবে পরিবর্তন আসে, তেমনি প্রতিবছর আপনার বয়সও বদলায়। প্রতিদিনের অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা যায় যে দিনে দিনে বয়স বৃদ্ধির ধারণা সবার জন্য একরকম নয়। বয়স যতই হোক না কেন মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য পুরোপুরি মনের ওপর নির্ভর করে। সেজন্যই মাঝে মাঝে আশি বছর বয়সী মানুষকে বাচ্চাদের মতো বায়না ধরতে দেখা যায়। আবার অল্প বয়সী অনেকের মধ্যে লক্ষ্য করা যায় গাম্ভীর্য। বিজ্ঞানীরা মনের এই বৈশিষ্ট্য ও বৈচিত্র্য নিয়ে দিন দিন আগ্রহী হয়ে উঠছেন। তারা ধারণা করছেন যে বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কিছু কিছু মানুষ কেন আরও উজ্জীবিত হয়ে উঠছে আবার কেউ কেউ ঝিমিয়ে পড়ছে এটা বুঝতে হলে আপেক্ষিক বয়স সম্পর্কে আমাদের জানা জরুরী। আমেরিকার ভার্জিনিয়া ইউনিভার্সিটির সাইকোলজির প্রফেসর Brian Nosek -এর ভাষ্যমতে, ‘যে সমস্ত প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিরা নিজেদের অনেক তরুণ ভাবেন, তারা তাদের দৈনন্দিন কাজে বা জীবনের পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।’ মনের তারুণ্যকে জয় করতে পারলে তার কাছে কোন প্রতিবন্ধকতাই বাধা হয়ে দঁাঁড়াতে পারে না। বিভিন্ন গবেষণায় এমনও দেখে গেছে যে আপেক্ষিক বয়স মৃত্যুঝুঁকির মতো অনেক গুরুত্বপুর্ণ স্বাস্থ্যবিষয়ক পূর্বাভাস দিতে পারে। আপেক্ষিক বয়স হচ্ছে বয়সের সেই মাত্রা যার মাধ্যমে কোন ব্যক্তির অভিজ্ঞতার বয়স বা মনের বয়স প্রতিফলিত হয়। সুস্বাস্থ্যের চাবিকাঠি এখন নিজের হাতে : এই চমৎকার ফলাফলগুলো থেকে গবেষকরা বিভিন্ন মানসিক এবং সামাজিক বিষয় বের করার চেষ্টা করছেন, যা বয়স বাড়ার অভিজ্ঞতাকে গঠন করে এবং কিভাবে এই জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে সুস্বাস্থ্যের সঙ্গে বেশিদিন বাঁচা যায় তাতে সাহায্য করে। বহু দশক ধরে এই প্রক্রিয়া এবং গবেষণার কাজ চালু আছে। কিন্তু আপেক্ষিক বা বৈষয়িক বয়সের সঙ্গে শারীরিক সুস্থতার মধ্যকার যোগসূত্র সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী। আপনি যদি বিষণ্ণতায় ভোগেন, প্রায়ই ভুলোমনা হয়ে যান, শারীরিকভাবে দুর্বলবোধ করেন, তার মানে অবশ্যই আপনি মনের বার্ধক্যে ভুগছেন। যার ফলস্বরূপ শারীরিক এবং মানসিক উভয় প্রকার ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন। এই ব্যাপারগুলো মাথায় রেখে বিজ্ঞানীরা ফিনিশ জনগোষ্ঠীর ওপর করা এক বিবৃতি প্রকাশ করেন। সদা হাসিখুশি থাকার ব্যাপারে এমনিতেই ফিনল্যান্ডবাসীদের সুনাম দুনিয়াজোরা। গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল ২টি- একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের সুস্থতা এবং কর্মক্ষমতার ক্ষেত্রে আপেক্ষিক বা বৈষয়িক বয়সের প্রভাব। -আপেক্ষিক বয়স একটি জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে প্রভাব ফেলে কিনা তা বের করা। পুরো গবেষণাটি মোট ৪টি মূল রিপোর্টে প্রকাশ করা হয়। প্রথম ২টি রিপোর্টের ক্ষেত্রে পুরুষ এবং মহিলা মিলিয়ে মোট ৪৫১ জন অংশগ্রহণ করেন। যাদের বয়স সীমা ৬৫ থেকে ৮৪-এর মধ্যে এবং তাদের ৮ বছরের ব্যবধানে ২ বার ইন্টারভিউ নেয়া হয়। ইন্টারভিউ-এর দুই স্তরেই তারা তাদের ধারাবাহিক বয়স অনুযায়ী নিজে কেমন বোধ করছেন সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। অর্ধেক মানুষ বলেন যে তারা তাদের বয়সের তুলনায় নিজেদের যথেষ্ট তরুণ বলে মনে করেন এবং বাকি অর্ধেক মনে করছেন যে তারা বয়স অনুযায়ী ঠিক আছেন, অর্থাৎ তারা কোন পার্থক্য আছে বলে মনে করছেন না। শুধু মাত্র ২-৪% মানুষ উত্তর দিয়েছেন যে নিজেদের বয়সের তুলনায় তারা কিছুটা বৃদ্ধ হয়ে যাচ্ছেন বলে তাদের মনে হয়! ভবিষ্যতকে নিন মনের মুঠোয় : গবেষণায় দেখা গেছে যে, এই ৩টি দলের মধ্যে প্রথম দল যারা নিজেদের তরুণ বা পজেটিভ ভাবেন তারা অন্য ২টি দলের তুলনায় শারীরিক, মানসিক, বাহ্যিক সব দিক থেকে দেখতে এবং বাস্তবে যথেষ্ট তারুণ। তাদের বয়স তাদের কাছে বার্ধক্যের বোঝা বলে মনে হয়নি এবং এ বিষয়ে তারা যথেষ্ট সন্তুষ্ট ছিলেন। ৫টি মানদন্ডের মাধ্যমে সফল বয়স্কালের মান নির্ধারণ করা যায়, কোন অসুস্থতা বা আঘাতজনিত সমস্যায় দৈনন্দিন জীবনের ব্যাঘাত না ঘটা, নিজের শখ পূরণের ক্ষেত্রে কোন স্বাস্থ্য সমস্যা বাধা না হওয়া, নিজের উপর কনফিডেন্ট থাকা, বয়সের তুলনায় নিজের কাজের প্রতি সন্তুষ্ট থাকা এবং বিষণ্ণ না থাকা- যার প্রতিটিই তাদের মধ্যে ছিল। তৃতীয় রিপোর্টের ক্ষেত্রে অংশগ্রহণকারী ছিলেন মোট ৩৯৫ জন পুরুষ এবং ৭৭০ জন মহিলা ছিলেন যাদের বয়স ৬৫ থেকে ৮৪। একইরকম সার্ভে তাদের উপরেও করা হয় ১৩ বছরের ব্যবধানে এবং ফলাফলে দেখা যায় যে, যারা মনের দিক থেকেও বার্ধক্যকে গ্রহণ করে নিয়েছেন, তাদের মৃত্যুঝুঁকি অনেক বেশি। বাহ্যিক বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা দূর করা সত্ত্বেও এই ঝুঁকি রয়েই যায়।
×