ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ধারাবাহিক উন্নয়ন

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ২৬ নভেম্বর ২০১৮

ধারাবাহিক উন্নয়ন

তৃতীয় বিশ্বের অনুন্নত দেশের তকমা দীর্ঘদিন কপালে সাঁটা ছিল বাংলাদেশের। হতদরিদ্র দেশের তালিকায় নামটি লেখা থাকত। বাঙালীর জীবনও ছিল দারিদ্র্যমথিত। অর্ধবেলা, কিংবা একবেলা খাবারের আয়োজন করাও ছিল কষ্টকর, প্রাণান্তকর। পশ্চাদপদ, অন্ধকারাচ্ছন্ন, দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চল ছিল এই বঙ্গদেশ। যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল অপ্রতুল। অভাব ছিল মানুষের নিত্যসঙ্গী। কার্তিকের মঙ্গায় মৃত্যুর ফাঁদে আটকা পড়ে যেত। খাদ্যশস্যের ঘাটতি, যথাযথ ফসল উৎপাদন না হওয়ায় খাদ্যাভাব ছিল তীব্র। এক করুণ অবস্থার শিকার ছিল বাংলাদেশের মানুষ। বিদেশী সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল ছিল দেশ। দাতাদের করুণার ওপর নির্ভর করে থাকত দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারা। লাঞ্ছিত, নিপীড়িত, বঞ্চিত, শোষিত বাংলাদেশের মানুষ একুশ শতকের দ্বিতীয় পর্বে এসে এক বিশাল জাগরণের ভেতর দিয়ে বেরিয়ে এসেছে। গত দশ বছরে শেখ হাসিনার সরকারের সুশাসন ও উন্নয়নের ধারায় দেশ হতশ্রী অবস্থা ও অবস্থান থেকে সরে গিয়ে উন্নয়নশীল দেশের পথে ধাবিত হচ্ছে। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। শেখ হাসিনা সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনায় দেশে এখন ধারাবাহিক উন্নয়ন হচ্ছে। গ্রামগুলো ক্রমশ শহরে পরিণত হচ্ছে। শিক্ষা-দীক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য, অবকাঠামো, মানবসম্পদসহ সর্বক্ষেত্রে উন্নয়নের গতি এমনই ত্বরান্বিত হয়েছে যে, বিশ্ববাসী এখন বাংলাদেশকে উন্নয়নের ‘রোল মডেল’ হিসেবে মনে করে। উন্নয়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে অর্থায়ন। এ ছাড়া জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ একটি বড় সমস্যা। কিন্তু এই চ্যালেঞ্জও মোকাবেলা করা সম্ভব, যদি রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকে। জাতিসংঘের দেয়া টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) লক্ষ্য অর্জনে সমন্বিত উদ্যোগের বিকল্প নেই বলে বাংলাদেশ মনে করে। এসডিজি বাস্তবায়নে বছরে তিন ট্রিলিয়ন ডলার অর্থের প্রয়োজন। এই প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করা দরকার। ব্যবসা-বাণিজ্যে সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। কারণ, তাদের সম্পৃক্তি ছাড়া এসডিজি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর দেশে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। টেকসই উন্নয়ন বাস্তবায়নে বর্তমান সরকার যথেষ্ট আন্তরিক এবং সেই সঙ্গে চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছে। ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ২০৩০’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যে দারিদ্র্যকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়ার পাশাপাশি পুষ্টির অভাব দূরীকরণে সর্বোচ্চ তাগিদ দেয়া হয়েছে। এই লক্ষ্যমাত্রায় এমডিজি বেশ ভালভাবেই অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। এসডিজি অর্জনে বৈষম্যদূরীকরণে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদানের বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে আর্থিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক সব ধরনের বৈষম্য দূর করা প্রয়োজন। জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বড় চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশকে মোকাবেলা করতে হলেও এ খাতে দাতারা ন্যায্য অর্থায়ন করছে না। উন্নয়ন ও অধিকার এ দুটো একসঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। সরকার বাজেট প্রণয়নে এসব বিষয়ে নজর রেখেছে। কিন্তু সব কিছুতে নেতিবাচক মনোভাব যাদের, তারা বর্তমান সরকারের অগ্রগতিকে স্বীকারই করতে চায় না। আবার কেউ কেউ সব হয়ে গেছে ভেবে আত্মতুষ্টিতে ভুগতে থাকেন। এখন দেশে ধারাবাহিক উন্নয়ন হচ্ছে। বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর দেশে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হচ্ছে। জিডিপি সাতের ওপর অবস্থান করছে। এই প্রবৃদ্ধির সুফল পেতে হলে বণ্টন ব্যবস্থা সবার আগে নিশ্চিত করা ছাড়া অন্য কোন পথ ও পন্থা নেই। অবশ্য এসডিজি অর্জনে প্রবৃদ্ধি দেখানো বড় কোন বিষয় নয়। বাংলাদেশে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষা প্রয়োজন। নতুবা উন্নয়ন মাঝপথে খেই হারিয়ে ফেলবে। আগামী ৩০ ডিসেম্বরে নির্বাচনে জনগণ যদি উন্নয়নের পক্ষে রায় প্রদান করেন, তাহলে বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশের পথে এগিয়ে যেতে পারবে। ধারাবাহিক উন্নয়নের লক্ষ্যে জনগণকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
×