ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জামায়াতের কর্মীরা যে কোন অঘটন ঘটাতে পারে

নির্বাচন নিয়ে গোপনে কলকাঠি নাড়াচ্ছে আইএসআই

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ২৬ নভেম্বর ২০১৮

 নির্বাচন নিয়ে গোপনে কলকাঠি নাড়াচ্ছে আইএসআই

শংকর কুমার দে ॥ বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গোপন তৎপরতার মাধ্যমে কলকাঠি নাড়াচ্ছে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থাটির পরামর্শেই বিএনপির ধানের শীষ মার্কা নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। এই বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যেই বৈঠক করেছে লন্ডনে। লন্ডনে বসবাসকারী যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা লন্ডনে অবস্থানরত ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক। জামায়াত নেতা রাজ্জাকের মাধ্যমে বিএনপির নেতা তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেছে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। এভাবেই পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থাটি বাংলাদেশের একাদশ নির্বাচনে জড়িয়ে পড়ে তৎপরতা চালাচ্ছে। ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা এই ধরনের তথ্য পেয়ে ঢাকার গোয়েন্দা সংস্থাকে জানিয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে এ খবর জানা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, ঐক্যফ্রন্টের প্লাটফরমে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটভুক্ত হয়ে জামায়াতে ইসলামীর ধানের শীষ মার্কা নিয়ে নির্বাচনে অংশ গ্রহণের বিষয়টি ভালভাবে নেয়নি ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ও ঢাকার গোয়েন্দা সংস্থা। নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠ জমে উঠলে জামায়াত শেষ পর্যন্ত কোন অঘটন ঘটায় কিনা সেই আশঙ্কার বিষয়টি মাথায় রেখে জামায়াতে ইসলামীকে পর্যবেক্ষণে রাখছে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। জামায়াতে ইসলামী একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত সংগঠন হিসেবে স্বীকৃত হয়ে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন থেকে বাদ পড়ে এখন বিএনপির প্রতীক ধানের শীষ মার্কা নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস না করেও পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থাটির পরামর্শেই জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের রাজনীতিতে এতদিন জঙ্গী সংগঠনগুলোকে মদদ দিয়ে নাশকতা, নৈরাজ্য চালিয়ে আসছে। স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে বছরের পর বছর জামায়াতী তৎপরতা ব্যর্থ হওয়ার পর এবার বেছে নিয়েছে তারা নির্বাচনী মাঠকে, যা উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও আতঙ্ক এনে দিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাকে। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানায়, বিএনপির সঙ্গে ঐক্যফ্রন্টের জোটে জামায়াতে ইসলামীকে রাখার পক্ষে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে অনেক যুক্তি দেখানো হয়েছে লন্ডন বৈঠকে তারেক রহমানকে। নির্বাচনে ভোটের মাঠে শক্তি প্রদর্শনের জন্য জামায়াতের ক্যাডার আছে, যা কাজে লাগানো যাবে। এ ছাড়াও জামায়াতের সঙ্গে জঙ্গী গোষ্ঠীর গোপন কানেকশন আছে বলে দীর্ঘদিনের অভিযোগ। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটকে ভোটের মাঠে ঠেকাতে বিএনপি একা পেরে উঠবে না এটা বুঝিয়েছে আইএসআই। ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে বিএনপির ধানের শীষ মার্কায় অন্য দল ও ব্যক্তির সঙ্গে এখন নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছে জামায়াতে ইসলামীও। জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনী মাঠে নেমে বিএনপির জোটভুক্ত হয়ে ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে যোগ দিলে ভোটের মাঠের শক্তি তো পাবেই, এমনকি জামায়াত সাংগঠনগত না হলেও জামায়াতের নেতারা ব্যক্তি হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের নেতাকর্মীদের সঙ্গে প্রচারে নেমে যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তারা একাত্তরে মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীর অপবাদ ঘোচাতে অনেকটাই সহায়ক হবে। জামায়াতে ইসলামী তাদের জোটে আছে, বিএনপি এই জানের-জান দোস্তকে কখনও হারাতে চায় না। কখনও এই বন্ধুত্বে ফাটল ধরবে না। কারণ, তাদের অবস্থা এমন হচ্ছে যে জামায়াতের শক্তির ওপর নির্ভর করছে। আওয়ামী লীগকে ঠেকাতে হলে জামায়াতের সেই জঙ্গী শক্তিটা দরকার আছে। তাদের ছাড়বে না এটাই স্বাভাবিক। বিএনপি ক্রমেই তাদের নেতিবাচক রাজনীতির কারণে শক্তিহীন হচ্ছে। এই শক্তিটা প্রদর্শনের জন্য প্রয়োজন জামায়াতকে। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, গত অক্টোবরে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এর পরামর্শে লন্ডনে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে গোপন বৈঠক হয়েছে, যার মধ্যে বিএনপির নেতৃত্ব দেন তারেক রহমান ও জামায়াতের নেতৃত্ব দেন ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থাটির পরামর্শেই বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাতকার নিয়েছেন তারেক রহমান, যা আসলে এটা হচ্ছে লোক দেখানো (আইওয়াশ) বিষয়। নির্বাচনে বিএনপির পক্ষে এবং বিএনপির ধানের শীষ মার্কা নিয়ে জামায়াতের কারা নির্বাচনে অংশ নেবে এটা আগে থেকেই ঠিক করে রাখা হয়েছে লন্ডন বৈঠকে। লন্ডনের ওই গোপন বৈঠকে নিজে উপস্থিত থেকে সব কিছুর আয়োজন করেন পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের প্রতিনিধি নাভিদ মোকতার। আইএসআই প্রতিনিধি নাভিদ মোকতার প্রস্তাব দেন বৈঠকে যেকোন মূল্যে শেখ হাসিনা সরকারকে আগামী ডিসেম্বরের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে উৎখাতের যে সুযোগ এসেছে তা কাজে লাগানোর প্রস্তাব দেয় পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা গোপন প্রতিবেদন পাঠিয়েছে ঢাকার গোয়েন্দা সংস্থাকে। ওই প্রতিবেদনে নির্বাচনের মাঠে জামায়াতে ইসলামীর নির্বাচনী প্রচারণা, তৎপরতা সবকিছু মনিটর করতে বলা হয়েছে। কারণ জামায়াতকে সহায়তা করছে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। বাংলাদেশ ও ভারত-দুই দেশের ওপর দীর্ঘ দিনের বৈরিতার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য পাকিস্তান এখন বেছে নিয়েছে জামায়াতকে। বিএনপি-জামায়াত জোট যতদিন ক্ষমতায় ছিল ততদিন ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফাকে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে ভূ-খ- ব্যবহার করে ভারতের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়া হয়েছে, আর এটা পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার মদদেই করা হয়েছে। এ জন্যই বাংলাদেশের নির্বাচনে জামায়াতের অংশ গ্রহণের পর কি ভূমিকা হবে তা নিয়ে সন্দেহ, অবিশ্বাসের জন্ম দিয়েছে। কারণ ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে বিএনপি-জামায়াত যেভাবে পেট্রোল বোমার নামে অগ্নিসন্ত্রাস চালিয়ে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা, জখম, আগুন, ভাংচুরসহ সহিংস সন্ত্রাসের তান্ডাবলীলা চালিয়েছে তার পুনরাবৃত্তি ঘটনায় কিনা তা নিয়ে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠার আশঙ্কায় আছে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তার দাবি।
×