ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘পলাতক কোন আসামির সঙ্গে যোগাযোগ রাখাটাও দ-বিধি অনুযায়ী অপরাধ’

তারেক যাদের সঙ্গে কথা বলেছেন তাদের অযোগ্য ঘোষণার দাবি

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ২৬ নভেম্বর ২০১৮

 তারেক যাদের সঙ্গে কথা বলেছেন তাদের অযোগ্য ঘোষণার দাবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ তারেক রহমান যে সকল নেতা ও প্রার্থীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেছেন নির্বাচনে তাদের অযোগ্য ঘোষণার দাবি উঠেছে। রবিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এ দাবি জানিয়ে বক্তারা বলেছেন, পলাতক কোন আসামির সঙ্গে যোগাযোগ রাখাটাও দ-বিধি অনুযায়ী অপরাধ। সাজা হয়েছে তারেক জিয়ার। শুধু খুনের সাজা হয়েছে তা নয়, দুর্নীতির জন্যও তার সাজা হয়েছে দুটি মামলায়। দুটি অপরাধে সে এখন পলাতক। সেই ব্যক্তির ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ গ্রহণযোগ্য নয়। রবিবার জাতীয় প্রেসক্লাব কনফারেন্স লাউঞ্জে ‘তারেক রহমানের ইন্টারভিউ : নৈতিক ও আইনী অবস্থান’ শীর্ষক ‘আমাদের মতামত’ শিরোনামে এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম (বোয়াফ)। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি কবীর চৌধুরী তন্ময়ের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহম্মদ শফিকুর রহমান, সম্প্রীতি বাংলাদেশর সদস্য সচিব ডাঃ মামুন আল মাহতাব, নর্দান ইউনিভার্সিটির উপদেষ্টা শেখ মঞ্জুর মোর্শেদ, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের এ্যাডভোকেট ইয়াহিয়া জামান প্রমুখ। পলাতক আসামি তারেক রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা, ভিডিও কনফারেন্সে তার সাক্ষাতকার গ্রহণ নিয়ে ইতোমধ্যেই আপত্তি উঠেছে। পলাতক কোনও আসামির সঙ্গে যোগাযোগ রাখাটাও দ-বিধি অনুযায়ী অপরাধ- এ যুক্তি তুলে নির্বাচন কমিশনের কাছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ লিখিত অভিযোগও করেছে। খালেদা জিয়া দুর্নীতি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে জেলে যাওয়ার সময়ে তার পুত্র তারেককে বিএনপির অস্থায়ী চেয়ারম্যান করে যান। তবে আদালতের সমন অমান্য করে লন্ডনে ফেরার থাকা তারেক নিজেও দু’টি দুর্নীতির মামলায় ১০ ও ৭ বছর এবং ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার মামলায় যাবজ্জীবন কারাদ-ে দ-িত। দেশে তারেকের কোনও বিবৃতি প্রকাশেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে আদালত। অথচ এমন অবস্থার মধ্যেই সম্ভাব্য প্রার্থীরা বিএনপি দফতরে নেতাদের কাছে যে ইন্টারভিউ দিচ্ছেন, সেখানে লন্ডন থেকে তারেক রহমানও ভিডিও কল করে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। আওয়ামী লীগ কমিশনকে বলেছে, পলাতক আসামি হিসেবে তারেক এভাবে দেশের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারেন না। তবে নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলালুদ্দিন আহমদ জানিয়েছেন, ‘উনি দেশে না থাকায় আচরণবিধি ওঁর ওপর প্রযোজ্য হবে না। কমিশনের বিশেষ কিছু করণীয় নেই। কমিশনের সচিবের এই বক্তব্যে সন্তুষ্ট নন আওয়ামী লীগের নেতারা। এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আগেই বলেছেন, পলাতক আসামি তারেকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখাটাও অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। রবিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত আলোচনা সভায় তারেক রহমান যে সকল নেতা ও প্রার্থীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেছেন নির্বাচনে তাদের অযোগ্য ঘোষণার দাবি উঠেছে। অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেছেন, খুনের দায়ে সাজা হয়েছে তারেকের, শুধু খুনের সাজা হয়েছে তা নয়, দুর্নীতির জন্যও তার সাজা হয়েছে দুটি মামলায়। দুটি অপরাধে সে এখন পলাতক। সে ব্যক্তি যখন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করে তখন এর চেয়ে হতাশাজনক আর কিছু হতে পারে না। নির্বাচন কমিশন আপনারা দয়া করে দেখুন আপনাদের কী করার আছে? শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক আরও বলেন, লন্ডনের কিংসটাউন এলাকায় তারেক রহমান থাকেন। অত্যন্ত দামী এলাকা ওটা এবং যে বাড়িতে থাকেন এটা ঠিক বাড়ি বলা যাবে না। মনে হবে যে রানী এলিজাবেথের কোন আত্মীয়ের বাড়ি। পুরোপুরি রাজপ্রাসাদ। যেখানে কাজের লোক আছে ১৫ জন। রাজকীয় ব্যাপার। কিন্তু তাদের এ আয়ের উৎস কী ? তাদের তো আর আয়ের পথ নেই। কারণ তারেক রহমান এবং তার স্ত্রী দু’জনই বেকার। ড. কামাল হোসেনের প্রসঙ্গে টেনে তিনি বলেন, এ কামাল সাহেবের অতীত কী ? আমার কাছে দুটি বই আছে একটি লিখেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর নাসির উদ্দিন। আরেকজন পাকিস্তানের এক জেনারেল। সেখানে তিনি লিখেছেন, সে সময় ২৮ তারিখে কামালের অনুরোধে তাকে নিরাপদ হেফাজতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পরের দিন ২৯ তারিখে কার্গো বিমানে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল, এই হলো তার অতীত পরিচয়। নাসির উদ্দিন লিখেছেন, ২৫ মার্চের আগে শ্রীমঙ্গলে একটি সভায় তৎকালীন পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেলসহ আরেকজন মেজর জেনারেল ছিলেন। এই দু’জনই ভিআইপি লাউঞ্জে ছিলেন, সেখানে কামাল সাহেবও ছিলেন। যেখানে ২৫ মার্চ কীভাবে অপারেশন সার্চলাইট হবে সেই পরিকল্পনার মিটিং হয়েছিল। ফরাসউদ্দিন সাহেব যিনি বঙ্গবন্ধুর অতি ঘনিষ্ঠজন ছিলেন উনি বলেছেন, কামাল হোসেন বঙ্গবন্ধু হত্যার পরিকল্পনার ভূমিকায় ছিলেন। শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, তখন তার যে ভূমিকা ছিল সেটা আজ স্পষ্ট। কারণ উনি সেই দলের সঙ্গে আঁতাত করেছেন যে দলের নেতা জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যার নক্সায় ছিলেন বলে আপনারা শুনেছেন। আর জিয়াউর রহমানের ছেলে তারেক রহমান শেখ হাসিনার হত্যার জন্য গ্রেনেড হামলা চালিয়েছেন। সেই দলের সঙ্গে ড. কামাল হোসেন আজ আঁতাত করেছে। তাহলে তিনি যে আসলে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধ ছিলেন সেটা মোটেও খারাপ উক্তি হবে না। এটা একটা খাঁটি উক্তি। তার পুরো জীবনটাই কিন্তু রহস্যময় জীবন। আজ তিনি খুনীদের সঙ্গে জোট করেছেন। তিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন, আবার তারেক রহমানও নেতৃত্ব দিচ্ছেন। একজন এসএসসি পাস ছেলে তারেক রহমান নেতৃত্ব দিচ্ছে। আর ড. কামাল হোসেন যিনি অক্সফোর্ডের পিএইচডি করেছেন তাকেই নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারেক। এই অপমানে আত্মহত্যা করা উচিত ছিল। তিনি আরও বলেন, আজ রাজনীতি নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন বলছে, তাদের কিছুই করার নেই। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে ইসির দায়িত্ব তত বাড়ছে। তাই তাদের কী করার আছে, কী করার নেই, এসব বিষয়ে ইসিকে আরও সজাগ থাকতে হবে নিরপেক্ষ নির্বাচন দেয়ার জন্য। নির্বাচন কমিশনার মাহমুদ তালুকদার একটি আর্টিকেল লিখে পক্ষপাতদুষ্ট হয়েছেন। মাহবুব তালুকদার যে কমিশনে থাকবেন সেই কমিশন দ্বারা নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে না তাকে অপসারণ করা জাতির স্বার্থে অপরিহার্য। জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম বলেছেন, ক্রিমিনাল তারেক রহমানকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে উপযুক্ত বিচার করা হবে। জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহম্মদ শফিকুর রহমান বলেন, ক্রিমিনাল তারেক রহমানকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে উপযুক্ত বিচার করা হবে। তারেক রহমানকে দেশে কিভাবে ফিরিয়ে এনে শাস্তি নিশ্চিত করা যায়, সেজন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিভিন্ন বিশেষজ্ঞকে কাজে লাগিয়েছে। বক্তারা আরও বলেন, একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে আদালত উল্লেখ করার পরে এবং এটি রাষ্ট্রীয় হত্যা ও ষড়যন্ত্রের একটি জঘন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে জাতির সামনে উন্মোচিত হওয়ার পরেও এই ধরনের ব্যক্তি কী করে অনলাইনে দলীয় মনোনয়ন প্রার্থীদের ইন্টারভিউ গ্রহণ করে-এটি রাষ্ট্রকে খুঁজে দেখা উচিত। তারেক রহমান শুধু ব্যক্তি পর্যায়ের অপরাধী নয়, সে দেশ ও জাতির শত্রু। অথচ, সরকার ও নির্বাচন কমিশনারের নাকের ডগায় বসে তার অপরাধমূলক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে যা দেশ ও জাতির জন্য নিকৃষ্ট উদাহরণ।
×