ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অজয় দাশগুপ্ত

নির্বাচনে আমরা কি চাই, কেন চাই?

প্রকাশিত: ০৬:৫৭, ২৫ নভেম্বর ২০১৮

নির্বাচনে আমরা কি চাই, কেন চাই?

আমরা আসলে কি চাই? কেমন দেশ কেমন সমাজ চাই আমরা? মনে হয় না এ নিয়ে আমজনতার কারও তেমন স্বচ্ছ কোন ধারণা আছে। যাদের আছে তাদের কথা মানুষ শুনতে পায় না। কারণ, তারা নিভৃতচারী। আর এখন এমন এক সমাজ হয়েছে যেখানে কথা শোনার মানুষ বড় কম। মানুষের হাতে যতটুকু সময় তার সিংহভাগ এখন সামাজিক মিডিয়ার দখলে। সকাল থেকে মধ্যরাত বাংলাদেশে গভীর রাত কেউই এর বাইরে থাকে না। থাকতে চায় না। এই সামাজিক মিডিয়া আমাদের কতটা অসামাজিক করছে তার প্রমাণ হাতে নাতে পাবার পরও আমরা এ নেশার বাইরে থাকতে পারছি না। আপনি বাসে ট্রেনে গাড়িতে উড়োজাহাজে এমনকি পানিতে ও দেখবেন মানুষের ঘাড় নিচু। কেউ কারও দিকে তাকায় না। তাকালেই হাতের পর্দায় যদি কিছু মিস হয়ে যায়? তাই দিনরাত মাথা নিচু করে বাটন টিপে চলেছে। আমি এই জেনারেশনের নাম দিয়েছি হেড ডাউন জেনারেশন। ঘাড় নিচু আমাদের রাজনীতি বা সমাজ চিন্তাও যে তেমন হবে এতে আর আশ্চর্যের কি? সমাজ এমন এক বিষয় যার মূল ভাল না হলে ভাল ফল ফলবে না। কোন ফল আমরা চাই? মুক্তিযুদ্ধ নামের অলৌকিক প্রায় গল্প থেকে আজ অনেকদূরে দাঁড়ানো বাংলাদেশের মানুষের জীবন বদলে গেছে। বদলে গেছে স্বভাব চরিত্র। বদলানো খারাপ কিছু না। বরং না বদলানোই অচলায়তন। কিন্তু কোন বদলের কথা বলছি আমরা? যে বদলে মানুষ কেবল পোশাক আহারে সঙ্কীর্ণ হবে? যে পরিবর্তনে মানুষ রাজনীতির নামে মৌলবাদ আর প্রতিক্রিয়াশীলদের কাছে টানবে? এত কিছুর পরও তারেক জিয়াই নাকি বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্টের বিধাতা। আপনি কখনও স্বপ্নে ভেবেছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকী কিংবা পতাকা উত্তোলক আসম রব কিংবা ড. কামাল হোসেনের মতো মানুষ তার পেছনে লাইনে দাঁড়াবেন? কিসের নেশায়? কী পেতে চান তারা? রাজনীতি করতে হলে এমপি হতেই হবে? বাম ডান সবদলের কত মানুষ আছেন যারা আমাদের জাতিকে বদলে দিয়েছেন তারা সংসদে যাননি। এমপিও হননি। ইয়াবা বদি বা সেলিম ওসমানের মতো এমপি বাবরের মতো মন্ত্রী হওয়ার চাইতে কমরেড ফরহাদ হতে পারা মনি সিংহ কিংবা হাজী দানেশতে পারা উত্তম হওয়ার কালে আমরা যে দেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম আজ তা আকাশ কুসুম কল্পনা। যত নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে আমাদের লেখাপড়া জানা কথিত সুশীলদের চেহারা ততই উন্মোচিত হচ্ছে। সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহকে আমরা চাইনিজ মার্কা বলে জানতাম। মুক্তিযুদ্ধে চীন পাকিস্তানের মিত্র থাকায় এরা যুদ্ধ এবং বিজয় কোনটাই সহজভাবে নিতে পারেননি। স্বাধীন দেশেও কিছুকাল লড়াই টড়াই অব্যাহত রেখে তারপর লেজ গুটিয়ে যার যার ঘরে ঢুকে গিয়েছিলেন। নানা তত্ত্ব হাজির করে মুক্তিযুদ্ধকে দুই কুতুরের লড়াই এসব বানোয়াট অভদ্র কথা বলে পরে সুড়সুড় করে জেনারেল জিয়ার গর্তে ঢুকে পড়া এদের মূল চরিত্র হলো আওয়ামী বিরোধিতা। তারা এতটাই বেপরোয়া দুধ আর পানিও তাদের কাছে সমান সমান। শেখ হাসিনার ওপর ছবি নির্মাণের খবর রাতে ঘুম হারাম করা এরা বই লিখে ফেলেছে। তাও নাকি সাতশ পাতার বই। যাকে নিয়ে লেখা তিনি চান কি চান না সেটা মুখ্য না। তিনি বোঝেন কি বোঝেন না তাও ব্যাপার না। ব্যাপার স্বার্থ আর যেনতেন প্রকারে জাতির নাক কেটে শেখ হাসিনার যাত্রা ভঙ্গ করা। দেশের মানুষ ইংরেজীতে লেখা এই কিতাবের মানে বুঝবে না এটা জানার পরও লেখার কারণ বিদেশী প্রভুদের মনোযোগ আকর্ষণ এবং সেটাই তারা করে আসছে বছরের পর বছর। নির্বাচনের প্রাক্কালে এমন বই বাজারে আসার কারণ সবাই জানেন। তাই বলছিলাম আসলে কি চাই আমরা? উন্নয়নের পাশাপাশি আওয়ামী সরকারের কিছু নেতা-মন্ত্রীর খাই খাই মনোভাব পরিবেশ ভাল রাখেনি। নানা কারণে মানুষের মনে রাগ আছে। কিন্তু তার মানে কি এই যে, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে ধরাশায়ী করতেই হবে? যারা দেশের মঙ্গল চায় তারা কোনভাবেই বিলেতে পালিয়ে থাকা ফেরারি আসামির জন্য মায়াকান্না কাঁদতে পারে না। ঐক্যফ্রন্টের নামে যে ফ্রন্ট তার মূল কাজ কিন্তু একটাই। যে কোনভাবে এই সরকারকে হটিয়ে তারেক জিয়া আসবার পথ সুগম করা। ড. কামাল হোসেন নামকরা আইনজীবী। তার নামের ওজন আছে। কিন্তু শাহবাগ থেকে যুদ্ধাপরাধীর বিচার বা দেশে নানা দুঃসময়ে কি তার ভূমিকা? কোন্ কালে তিনি এসবের হয়ে মাঠে নেমেছিলেন বা আইনী সহায়তা দিয়েছেন? তারপরও তিনি নেতা। আর এখন সরাসরি মাঠে নেমেছেন দেশের ওপর চেপে বসা তাদের ভাষায় দুঃশাসন দূর করতে। কিভাবে তা করবেন? দীর্ঘকাল বঞ্চিত নতুনভাবে ভাগ বসাতে আগ্রহী পুরনো বিএনপির নেতা-মন্ত্রীদের দিয়ে এদেশ উদ্ধার করবেন তিনি। এই আষাঢ়ে গল্প আমাদের শুনিয়ে লাভ নেই। মূলত এসবই ষড়যন্ত্রের অংশ। সুব্রত চৌধুরী নামের এক ভদ্রলোক নয়া গয়েশ্বর হওয়ার সংগ্রামে ধানের শীষে লড়বার খায়েশ জানিয়েছেন। আজকাল বিভেদ রেখা মুছে যাচ্ছে প্রায়। এককালে এবং এখনও বিএনপি মানেই ছিল সংখ্যালঘুদের জন্য ত্রাস। তারা স্বাধীন দেশে মা-বোনের ইজ্জত লুণ্ঠিত হতে দেখেছে। একবার নির্বাচনের পর দলে দলে সংখ্যালঘু দেশ ছাড়তেও বাধ্য হয়েছিল। তবু আমাদের রক্তে যে বেইমানি তার বাইরে যাতে পারে না অনেকে। বদলে যাও বদলে দাও নামের মিডিয়ায় এরাই দেশের হিরো। কারণ. এরা সবাই মিলে বাংলাদেশকে বদলে দিতে চায়। যে বাংলাদেশে হিন্দু থাকবে পানিতে জিইয়ে রাখা মাছের মতো। যেন ইচ্ছে হলেই খাওয়া যায়। বৌদ্ধ থাকবে রামু আতংকে। খ্রীস্টান জানবে তার ধর্মযাজক যে কোন সময় রোস্ট হতে পারেন আগুনে। আর মুসলমান? তারাও ঠিক যেন ছায়া পাকিস্তান। এই তাদের মনোগত চাওয়া। কারণ তাদের কিছই হবে না। তারা দেশের টাকায় জনগণের টাকায় নিরাপত্তার চাদরে থেকে সুখে-শান্তিতে জীবনযাপন করবেন। এই কি আমাদের চাওয়া? এবারের নির্বাচনে এটাই কিন্তু ঠিক করতে হবে। শেখ হাসিনার দোষ-ত্রুটি নাই বলছি না। আওয়ামী লীগের সংযত আচরণও মানুষের কাম্য। তাদের বাড়াবাড়ি বা অতিকথন কমানোর পাশাপাশি প্রয়োজনে মানুষের কাছে মাফ চেয়ে নেয়াও জরুরী। জনতা কঠিন কঠোর কিছু ভালবাসেন না। তারচেয়ে নরম আর বিনীত হলেই তারা খুশি। যেটুকু আয় উন্নতি অগ্রগতি তার ফসল ঘরে তুলতে এখন চাই আত্মসমালোচনা। সঙ্গে সঠিক প্রার্থী নির্বাচন ও ত্যাগীদের মূল্যায়ন ও জরুরী। শেখ হাসিনার মতো প্রাজ্ঞ অভিজ্ঞ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নেতা থাকার পরও যদি তারা তা করতে ব্যর্থ হয় বাংলাদেশ কখনও ভাল থাকবে না। নেতার সঙ্কট আর বিএনপির ষড়যন্ত্র মোকাবেলাই এবারের চরম পরীক্ষা। যার ওপর নির্ভর করছে আগামী দিনের বাংলাদেশ ও তার চরিত্র। মানুষ যেন ভুল না করে। এই ভুলের মাশুল দেয়ার সময় নাই আমাদের। এ কথাটা বোঝানো ব্যতিরেকে ঝগড়া করে উত্তর প্রত্যত্তুরে সময় কাটানো মানে পায়ে কুড়াল মারা। ঝানু নেতারা নিশ্চয়ই তা বোঝেন? [email protected]
×