ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অমল সাহা

গৌরবের ২৮ বছর ॥ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ২৫ নভেম্বর ২০১৮

গৌরবের ২৮ বছর ॥ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়

হাঁটি হাঁটি পা পা করে শিক্ষা কার্যক্রমের ২৮ বছর পেরিয়ে ২৯ বছারে পদার্পণ করেছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জনগণের নিরলস প্রচেষ্টা। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পর ১৯৮৯ সালের ৯ মার্চ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ১৯৯০ সালের জুন মাসে জাতীয় সংসদে ‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় আইন-১৯৯০’ পাস হয়, যা গেজেট আকারে প্রকাশ হয় ওই বছরের ৩১ জুলাই। এর পর ১৯৯০-৯১ শিক্ষাবর্ষে ৪টি ডিসিপিনে ৮০ জন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করা হয়। ১৯৯১ সালের ৩০ আগস্ট প্রথম ওরিয়েন্টেশন এবং ৩১ আগস্ট ক্লাস শুরুর মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রমের সূচনা হয়। পরে একই বছরের ২৫ নবেম্বর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। ২০০২ সালের ২৫ নবেম্বর ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা ও আড়ম্বরপূর্ণ পরিবেশে পালিত হয় প্রথম খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। খুলনা মহানগরী থেকে ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক সংলগ্ন ময়ূর নদীর পাশে এক মনোরম পরিবেশে গলামারীতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ও সংলগ্ন এলাকাটি ছিল ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়কার এক বধ্যভূমি। প্রতিষ্ঠাকালের দিক থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান নবম। সময়ের চাহিদা অনুযায়ী এখানে বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তিবিদ্যা, চারুকলাসহ অন্যান্য বিষয়ের প্রতিও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বর্তমানে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬টি স্কুল (অনুষদ) ও ২টি ইনস্টিটিউট রয়েছে। এখানে মোট ২৯টি ডিসিপ্লিনে (বিভাগ) শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়মিত ব্যাচেলর ডিগ্রী, ব্যাচেলর অব অনার্স ডিগ্রী, মাস্টার্স ডিগ্রী, এম ফিল এবং পিএইচডি প্রদান করা হয়। স্কুলগুলোর (অনুষদ) মধ্যে কলা ও মানবিক স্কুলের আওতায় রয়েছে ইংরেজী, বাংলা এবং ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপিন। আইন স্কুলের আওতায় রয়েছে আইন ডিসিপিন। জীব বিজ্ঞান স্কুলের আওতায় এগ্রোটেকনোলজি, বায়োটেকনোলজি এ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স, ফিশারিজ এ্যান্ড মেরিন রিসোর্স টেকনোলজি, ফরেস্টি এ্যান্ড উড টেকনোলজি, ফার্মেসি ও সয়েল ওয়াটার এ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ডিসিপিন। ব্যবস্থাপনা ও ব্যবসায় প্রশাসন স্কুলের আওতায় রয়েছে ব্যবসায় প্রশাসন এবং হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট ডিসিপিন। বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তিবিদ্যা স্কুলের আওতায় আর্কিটেকচার, আরবান এ্যান্ড রুরাল প্লানিং, কম্পিউটার সায়েন্স এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেক্ট্রনিক্স এ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নবিজ্ঞান এবং পরিসংখ্যান ডিসিপ্লিন। সমাজ বিজ্ঞান স্কুলের অধীনে অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞান, ডিভেলপমেন্ট স্টাডিজ ও গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিন। চারুকলা ইনস্টিটিউটের আওতায় রয়েছে, ড্রইং এ্যান্ড পেইন্টিং, প্রিন্ট মেকিং ও ভাস্কর্য ডিসিপিন। শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধীনে এবারই প্রথম চার বছর মেয়াদী অনার্স কোর্স চালু করা হয়েছে। এছাড়া এর আগেই মাস্টার অব এডুকেশন (এমএড) এবং পোস্টগ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন এডুকেশন (পিজিডিএড) প্রোগ্রাম চালু করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যমান সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড স্টাডিজ অন দি সুন্দরবনস (সিআইএসএস) কে ইনস্টিটিউটে রূপান্তরের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে শিক্ষক সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪শ’। ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে প্রায় সাত হাজার। এছাড়া কর্মকর্তা আড়াই শতাধিক এবং কর্মচারী রয়েছে দুই শতাধিক। শিক্ষা কার্যক্রমের গত ২৮ বছরে ২৪টি ব্যাচে থেকে উত্তীর্ণ গ্র্যাজুয়েট সংখ্যা ১০ সহস্রাধিক। যারা দেশে-বিদেশে দক্ষতা, সুনাম ও সাফল্যের সঙ্গে নানা পেশায় কাজ করছেন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ বিশেষ করে নবীন শিক্ষকবৃন্দ যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশসমূহ, অস্ট্রেলিয়া, জাপানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেত্রে উলেখযোগ্য সংখ্যায় স্কলারশিপ পাচ্ছেন। দেশী-বিদেশী সংস্থার গবেষণা সহায়তাও বাড়ছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রয়েছে ৩টি একাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন, ভাইস-চ্যান্সেলরের বাসভবন, পাঁচটি আবাসিক হলো, মেডিক্যাল সেন্টার, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ৫টি বাসভবন, অগ্রণী ব্যাংক ভবন, ডাকঘর ও মসজিদ। ছাত্র-ছাত্রী এবং শিক্ষকদের জ্ঞান সহায়তায় রয়েছে সমৃদ্ধ কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ভবন ও শার্লী ইসলাম গ্রন্থাগার ভবন। এছাড়া ১৮৮ কোটি ৪০ লাখ টাকার নতুন প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন ভবনের সম্প্রসারণ নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। চলতি অর্থবছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুউচ্চ এবং সর্ববৃহৎ আয়তনের দশ তলাবিশিষ্ট জয়বাংলা একাডেমিক ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হবে বলে কর্তপক্ষ আশা করছেন। এর জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় দিবস প্রকৃতঅর্থে বিগত সময়ের কার্যক্রম মূল্যায়নের দিন। আমাদেরকে অতীতের অভিজ্ঞতায় বর্তমানের প্রচেষ্টায় আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নতুন উদ্যমে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
×