ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মধ্যপ্রাচ্য থেকে কয়েক লাখ কর্মীকে দেশে ফিরে আসতে হবে

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ২৫ নভেম্বর ২০১৮

 মধ্যপ্রাচ্য থেকে কয়েক লাখ কর্মীকে দেশে ফিরে আসতে হবে

ফিরোজ মান্না ॥ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ বিদেশী কর্মী নির্ভরতা কমাতে পর্যায়ক্রমে ১৫ লাখ কর্মী ছাঁটাই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সৌদি আরব গত বছর থেকেই এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন শুরু করেছে। আরব আমিরাত ৬ বছর ধরে বাংলাদেশ থেকে কোন কর্মীই নিয়োগ করছে না। কুয়েতের শ্রমবাজার থেকেও দেশে ফিরতে হবে কয়েক লাখ কর্মীকে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সরকার নিজ নিজ দেশের লোকজনের কর্মসংস্থান বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়ার ফলে বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশের কর্মীদের আগামী কয়েক বছরের মধ্যে দেশে ফেরত আসতে হবে। সূত্র জানিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ যেসব বড় বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছে তা আগামী কয়েক বছরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। বিশেষ করে নির্মাণ খাতে কর্মীর খুব একটা প্রয়োজন হবে না। কারণ, দেশগুলো ইতোমধ্যেই হাজার হাজার স্থাপনার নির্মাণ কাজ শেষ করে ফেলেছে। দেশগুলোর হাতে নেয়া প্রকল্পগুলোর মেয়াদকাল প্রায় শেষ পর্যায়ে। তাছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বেকারত্বের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। নিজেদের নাগরিকের কর্মসংস্থানের জন্য বিদেশী কর্মী নির্ভরতা কমানোর সিদ্ধান্ত সৌদি আরব বেশ আগে থেকেই বাস্তবায়ন করছে। তারা বিভিন্ন সেক্টরে বিদেশী কর্মীদের কাজের ওপর নিষেধজ্ঞা জারি করেছে। এর ফলে লাখ লাখ বাংলাদেশীসহ বিদেশী কর্মীরা বেকার হয়ে পড়েছে। তারা ছোটখাটো কাজ খুঁজেও পাচ্ছে না। অনেকে বাধ্য হয়ে দেশে ফিরে আসছে। সৌদি আরবে প্রবাসী কর্মীদের কাজের ক্ষেত্র ছোট করে দেয়ায় দেশটিতে লাখ লাখ বাংলাদেশী কর্মী বেকার হয়ে পড়েছে। দেশটিতে প্রবাসী কর্মীদের ১২ ধরনের কাজের ওপর নিষেধজ্ঞা জারি করেছে সৌদি সরকার। সম্প্রতি সৌদি শ্রম মন্ত্রণালয় এই নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করেছে। ব্যবসাবাণিজ্য ও দোকানপাট থেকে তাদের চাকরি চলে গেছে। ইতোমধ্যে সৌদিতে ব্যবসাবাণিজ্য থেকে বাংলাদেশী নাগরিকদের অনেক সঙ্কুচিত করে দেয়া হয়েছে। তারা যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ না পেলে তাদের দেশে ফেরা ছাড়া কোন বিকল্প নেই। ইতোমধ্যে সৌদিতে অনেক বাংলাদেশী নাগরিক ব্যবসাবাণিজ্য গুটিয়ে নিয়েছে। বাংলাদেশী কর্মীরা মনে করছেন, তাদের অনেককেই কাজ হারাতে হতে পারে। এদিকে, সৌদি আরবের মতো কুয়েতও একই নীতি গ্রহণ করেছে। তারা ঘোষণা করেছে, আগামী সাত বছরে দেশটির সরকার ১৫ লাখের বেশি বিদেশী কর্মী কমিয়ে ফেলবে। কুয়েতের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম খবর দিয়েছে, কুয়েতে প্রবাসীদের মধ্যে ভারসাম্য আনতেই সরকার একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে। ‘পাবলিক অথরিটি ফর সিভিল অথরিটি’র হিসাব অনুযায়ী কুয়েতে এখন প্রবাসীর সংখ্যা ৩০ লাখের বেশি। অথচ কুয়েতের নিজস্ব জনসংখ্যা মাত্র ১৪ লাখ। নিজ দেশের জনসংখ্যার চেয়ে প্রবাসীর সংখ্যাই সেখানে দ্বিগুণের বেশি। কুয়েতের জনগণ প্রবাসীদের সংখ্যা কমিয়ে অর্ধেকে আনার পক্ষে মত দিয়েছে। এই হিসাবে বিভিন্ন দেশের ১৫ লাখের বেশি প্রবাসীকে কুয়েত থেকে তাদের দেশে ফেরত পাঠাতে হবে। আগামী ৭ বছরের মধ্যে তারা এটা বাস্তবায়ন করবে। এটা অর্জন করতে যদি দেশটিতে আর কোন প্রবাসী নাও প্রবেশ করে, তাও অন্তত ১৫ লাখ প্রবাসী কমানোর দাবি তুলেছে দেশটির নাগরিক। কুয়েতের পরিকল্পনা অনুযায়ী, নিজস্ব নাগরিকের ২৫ শতাংশের বেশি হতে পারবে না প্রবাসীর সংখ্যা। এটা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে ভারতের অন্তত ৬ লাখ ও মিসরের ৩ লাখ মানুষকে তাদের দেশে ফেরতে যেতে হবে। এই দুই দেশের জনসংখ্যা কুয়েতে সবচেয়ে বেশি। দেশটিতে বাংলাদেশী কর্মী রয়েছে ৫ লাখের ওপর। এখান থেকেও প্রায় ২ লাখ কর্মীকে দেশে ফিরতে হতে পারে।
×