ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পাখিদের মুক্তরাজ্য- অভিনন্দন জানাচ্ছে সুরেলা কণ্ঠে

প্রকাশিত: ০৫:১১, ২৫ নভেম্বর ২০১৮

পাখিদের মুক্তরাজ্য- অভিনন্দন জানাচ্ছে সুরেলা কণ্ঠে

মাকসুদ আহমদ ॥ রঙ্গিন পাখিতে রাঙ্গা হয়েছে পক্ষীশালা। সেখানে পাখিরা মনের আনন্দে ডানা মেলে উড়ছে। কখনও গাছের ডালে বসে আবার কখনও বা গাছের মগডালে উড়ে বসছে রঙ্গিন প্রজাতির পাখিগুলো। পক্ষীশালার নিচে দুর্বাঘাসে লুটোপুটি খাচ্ছে পায়রা আর ঘুঘু। গাছের গুড়ি আর ডালে বসে রাঙ্গা টিয়ে ময়না আর তোতা যেন আগতদের অভিনন্দন জানাচ্ছে সুরেলা কণ্ঠে। চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় প্রায় সাড়ে তিন শ’ পাখির সমন্বয়ে গড়া এই পক্ষীশালা যেন পাখিদের মুক্তরাজ্য। পক্ষীশালার ভেতরে শুধু পাখি আর পাখি। সুন্দরী পাখি আর খুদে পাখিরাও ভালবাসার আলিঙ্গনে মিলছে সদা। বন্দীশালায় থাকলেও যেন মুক্ত বিহঙ্গের মতোই বসবাস। আগতদের অভিব্যক্তিতে প্রকাশ পেয়েছে গুটিকয়েক পাখি ছাড়া বাকি সবগুলো পাখি যেন অচেনা তাদের। বইয়ের পাতায় পাতায় আর এ্যানিম্যাল ও ডিসকভারি চ্যানেলে দেখা পাখিগুলোর সমাগম ঘটানো হয়েছে এই আঙ্গিনায় এমনটাই বলছেন আগতরা। এক আঙ্গিনায় এত পাখি আগতদের কেউই দেখেনি। চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ৩০ বছরের জীবনে এই প্রথম কোন পক্ষীশালার জন্ম দেশে উদহারণ মাত্র। পক্ষীশালার স্থাপিত ভিত্তিপ্রস্তরে সাঁটানো রয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফয়েজ আহম্মদের নাম। গত বুধবার সকালে ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করতে গিয়ে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন সাংবাদিকদের জানান, আমাদের পরিসর স্বল্প হলেও আমাদের কালেকশন অনেক বেশি। আমরা দর্শকের টিকেটের টাকায় এত সবকিছু করতে পেরেছি। এ চিড়িয়াখানায় জিরাফ ও ক্যাঙ্গারু আনার চেষ্টা চলছে। তবে জিরাফের উচ্চতা অনেক বেশি হওয়ার কারণে এ্যারোপ্লেনে আনা যাচ্ছে না। তবে কখনও বড় কার্গো আসলে বা জাহাজে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা নির্বাহী কমিটির সদস্য সচিব ও হাটহাজারীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) মোহাম্মদ রুহুল আমিন জনকণ্ঠকে জানান, পক্ষীশালা শিশুদের জন্য নতুন আকর্ষণ। এ চিড়িয়াখানা শিশুদের বিনোদনের অন্যতম আঙ্গিনা। শুধু পশুপাখি কেন এ আঙ্গিনায় রয়েছে শিশু কর্ণার যেখানে দোলনা, স্লিপারসহ নানা আয়োজন রয়েছে। ফলে শিশুরা বারবার আসতে চায়। এলেও কোন অনীহা নেই তাদের মাঝে। দর্শকের টিকেটের টাকায় এই চিড়িয়াখানার উন্নয়ন অব্যাহত আছে। এর আগে জেব্রা ও সিংহসহ নানা প্রাণী এনে এ চিড়িয়াখানার আকর্ষণ বাড়ানো হয়েছে। চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা আবারও বর্ণিল আয়োজনে মেতেছে। শিশুদের আকর্ষণে যদিও পক্ষীশালা গড়ে তোলা হয়েছে, মূলত আগতদের আকর্ষণ কাড়বে এই বর্ণিল পক্ষীশালা। চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার এই পক্ষীশালা ঘুরে দেখা গেছে, ছোট্ট পরিসরে হলেও দেশের কোন চিড়িয়াখানা বা ইকো পার্কে এত বড় পক্ষীশালা নেই। প্রায় ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রায় সাড়ে তিন শ’ রঙ্গিন পাখির সমাবেশ একসঙ্গে করা হয়েছে। প্রাকৃতিক অবয়বে গড়া এই মিনি এভিয়ারী যেন অন্য চিড়িয়াখানার জন্য একটি দিক নির্দেশনা। কৃত্রিমভাবে অবকাঠামো তৈরি করা হলেও প্রথম দেখায় প্রকৃতই মনে হবে। এই পক্ষীশালায় ৬ প্রজাতির ৩৪২টি রঙ্গিন পাখি নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে এটি। প্রায় দেড় হাজার বর্গফুট আয়তনের এই পক্ষীশালা প্রায় ৩০ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট লোহার নেটের তৈরি। এই এভিয়ারীতে গাছ গাছালিসহ পাখিদের বসবাসে সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। শীত, গ্রীষ্ম ও বর্ষায় যেন পাখিদের কষ্ট না হয় সেজন্য কৃত্রিম আদলে কলসি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে পক্ষীকুলের আবাসস্থল। তবে এই আবাসনে পক্ষীকুল তাদের প্রজনন কার্যক্রম অব্যাহত রেখে বংশ বৃদ্ধি করতে পারবে। ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে অবকাঠামো তৈরি করে এতে প্রায় ২২ লাখ টাকার পাখি রাখা হয়েছে দর্শনার্থীদের জন্য। এসব পাখির মধ্যে রয়েছে ২০ জোড়া লাভবার্ড, ৫০ জোড়া লাফিং ডাভ, ১০ জোড়া ফিজেন্ট, রিংনেড প্যারোটও রয়েছে ১০ জোড়া, লম্বা লেজের কোকাটেইল রয়েছে ৫০ জোড়া এবং ম্যাকাও আছে একজোড়া। এছাড়াও আরও বেশ কয়েক রকমের পাখি রয়েছে এই পক্ষীশালায়।
×