ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনে এক লাখ সেনা ও বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হবে

প্রকাশিত: ০৫:০২, ২৫ নভেম্বর ২০১৮

  নির্বাচনে এক লাখ সেনা ও বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হবে

শংকর কুমার দে ॥ একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রায় এক লাখ সেনা ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্য মোতায়েন করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রায় এক সপ্তাহ আগে থেকেই সেনা ও বিজিবি মোতায়েন করা হতে পারে। প্রতিটি জেলা শহরে ক্যাম্প স্থাপন করবে সেনাবাহিনী ও বিজিবি। জেলা সদর থেকে উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে তারা স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সেনাবাহিনী ও বিজিবি মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনের সময়ে ভোটাররা যাতে নিরাপদে নির্বিঘেœ ভোট দান করতে পারে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পুলিশ, র‌্যাব, গোয়েন্দা সংস্থা, কোস্টগার্ড, আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও বিজিবি নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করলে মানুষজনের মধ্যে নিরাপত্তা সম্পর্কে নিশ্চয়তার আস্থা চলে আসবে এবং নির্বাচনী পরিবেশও উৎসব মুখর হবে। নির্বাচন কমিশন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ খবর জানা গেছে। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি, ঐক্যফ্রন্টসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও জোট ভোটে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়েই সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি করে আসছে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও সেনা মোতায়েনের পক্ষে সম্মত। তবে নির্বাচন কমিশন ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার বদলে স্টাইকিং ফোর্স হিসেবেই মোতায়েন করবে সেনাবাহিনী ও বিজিবি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে কোন পরিস্থিতিতে প্রতিরক্ষাবাহিনীর সদস্যদের নিয়োগ করা যাবে ১৮৯৮ সালের প্রণীত ফৌজদারি কার্যবিধির ১২৯ থেকে ১৩১ ধারায় এবং সেনা বিধিমালা ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ শিরোনামে সুস্পষ্টভাবে তার উল্লেখ থাকায় সেনাবাহিনী মোতায়েনে কোন বাধা নেই। সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে সশস্ত্রবাহিনী নিয়োগ দেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সেনাবাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারের কাছে ইসির সিদ্ধান্তের বিষয়ে চিঠি পাঠায় ইসি সচিবালয়। সশস্ত্র বাহিনীর কর্মপরিধি এবং কত সময় তারা নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করবে- সে বিষয়গুলো উল্লেখ করে দেয়া হবে চিঠিতে, নির্বাচনের সময়ে মোতায়েন করা সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যরা নির্বাচনী কাজে ম্যাজিস্ট্রেটের পরিচালনায় বেসামরিক প্রশাসনকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়তা করবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯১ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত নির্বাচনে দেখা গেছে, সেনাবাহিনী থাকলে বরং পুলিশ তার সঠিক ভূমিকাটি পালন করে। সেনাবাহিনী শুধু স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নিয়োগ করা হলে বেআইনী সমাবেশ, গোলযোগ বা অরাজকতা হলে প্রয়োজনবোধে কেবল প্রশাসনিক ম্যাজিস্ট্রেট তাদের ডাকতে পারবেন। নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভাল থাকলে মানুষ ভোটকেন্দ্রে আসে। এই সুযোগে ব্যালট বাক্সে ভুয়া ভোট ভরে নির্বাচনে জেতাটা কঠিন হয়ে পড়ে। সেনাবাহিনী নির্বাচনের কয়েক দিন আগে থেকে ভোটকেন্দ্রে মোতায়েন থাকলে, মস্তানি, রংবাজি, জুলুম, অত্যাচার, অন্যায় কমে গিয়ে মানুষজনের মধ্যে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা, ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার আস্থা অর্জন, স্বতঃস্ফূর্ততা ফিরে আসে। ফৌজদারি কার্যবিধির ১২৯-১৩১ ধারা অনুসারে সামরিক বাহিনীকে এভাবে ডাকলে এ জন্য অন্য কোন আইন পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই। এভাবে ডাকা সামরিক বাহিনী ১৩১ ধারা অনুসারে উপযুক্ত ক্ষেত্রে কাউকে গ্রেফতার পর্যন্ত করতে পারে। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচনে ১৫ দিন মোতায়েন ছিল সেনাবাহিনীর সদস্যরা। ২০১৩ সালের ২০ ডিসেম্বর আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ২৬ ডিসেম্বর থেকে ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন রাখা হয়। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৩০ ও ১৩১ ধারা এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা ‘ইন্সট্রাকশন রিগার্ডিং ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ এর সপ্তম ও দশম অনুচ্ছেদের ক্ষমতা ও নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচনের সময় সশস্ত্র বাহিনী পরিচালিত হয়ে আসছে বলে জানা গেছে। সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের প্রতিটি জেলা, উপজেলা, মহানগর এলাকার নোডাল পয়েন্ট এবং অন্যান্য সুবিধাজনক স্থানে অবস্থান নেবেন এবং স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নিয়োজিত থাকবেন। রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে সমন্বয় করে উপজেলা, থানায় সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানে সহযোগিতার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, মহাসড়কে নিরাপদ যান চলাচল নিশ্চিত করতে এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কাজ করবেন সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যরা। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা গত ৮ নবেম্বর প্রথম দফা তফসিল ঘোষণার দিন জাতির উদ্দেশে ভাষণে বলেছেন, এবার সেনা মোতায়েন হবে আগের মতোই। অর্থাৎ সেনাবাহিনীর বিচারিক ক্ষমতা থাকবে না। নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দুই থেকে দশ দিন আগে সেনা মোতায়েন করা হবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন ভবনের অডিটরিয়ামে চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল বিভাগের সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেছেন তিনি। ইসি সচিব বলেন, নির্বাচনের এক সপ্তাহ বা দশ দিন আগে সেনাবাহিনী ও বিজিবি মোতায়েন করা হবে। তাদের জন্য থাকার ব্যবস্থা থাকতে হবে, সে অনুযায়ী আপনাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রসঙ্গত : আগামী ৩০ ডিসেম্বর সারাদেশের ৩শ’ জাতীয় সংসদ আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ২৮ নবেম্বর পর্যন্ত মনোনয়ন দাখিল করা যাবে। আগামী ২ ডিসেম্বর বাছাইয়ের পর প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা যাবে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ১০ ডিসেম্বর প্রতীক পাওয়ার পর আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু করতে পারবেন প্রার্থীরা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, সারাদেশে জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিভিন্ন বাহিনীর ৫ লাখেরও বেশি সদস্য প্রয়োজন হয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সশস্ত্রবাহিনী ও বিজিবির প্রায় ১ লাখ সদস্য মোতায়েন করা হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ৭ লাখ সদস্য মোতায়েন করা হতে পারে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করার চেষ্টা করা গেলে বিশ্ববাসীর কাছে আমরা মাথা তুলে তাকাতে পারব। বিশ্ববাসী আমাদের নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে। সেনাবাহিনী অতীতের চারটি নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে থাকার কারণে দেশে বা বিদেশে তাদের ইমেজের কোন ক্ষতি হয়নি। এমনকি এসব নির্বাচন ও সেনাবাহিনী আন্তর্জাতিকভাবেও প্রশংসিত হয়েছে।
×