ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রার্থী তালিকা নিয়ে চলছে শেষ মুহূর্তের নানা মেরুকরণ

প্রকাশিত: ০৫:০১, ২৫ নভেম্বর ২০১৮

 প্রার্থী তালিকা নিয়ে চলছে শেষ মুহূর্তের নানা মেরুকরণ

শরীফুল ইসলাম ॥ আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় বাকি আছে আর মাত্র তিনদিন। তাই প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করতে বড় বড় দল ও জোটের মধ্যে শেষ মুহূর্তে চলছে নানা মেরুকরণ। প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে গোপনে কাউকে কাউকে মনোনয়ন নিশ্চিত করা হলেও অধিকাংশ সম্ভাব্য প্রার্থীই এখনও নিশ্চিত হতে পারেননি। এ কারণে মনোনয়ন নিশ্চিত করতে বিরামহীন দৌড়ঝাঁপ অব্যাহত রেখেছেন। যে যার মতো করে লবিং তদবির অব্যাহত রেখেছেন। এদিকে মনোনয়নপত্র দাখিলের আগেই প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করতে গিয়ে বড় বড় রাজনৈতিক দল ও জোটের সিনিয়র নেতাদের চোখের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। দিন-রাত দফায় দফায় বৈঠক করেও প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করতে পারছে না। এবার প্রতিটি আসনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগে গড়ে প্রায় ১৫ জন করে মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকায় তালিকা প্রকাশ করলে বিরূপ পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয় কি না এমনটি মনে করে উভয় দলের হাইকমান্ডই চিন্তিত। যদিও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও জোটের নেতারা বলেছেন, তাদের প্রার্থী তালিকা শীঘ্রই প্রকাশ করা হবে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে রাজনৈতিক দলগুলো আরও আগেই দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাতকার শেষ করেছে। কিন্তু তারপরও প্রার্থী তালিকা তৈরি করতে হিমশিম খাচ্ছে। এর মূল কারণ, আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটগুলো এবারের নির্বাচনকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। এ ছাড়া বড় বড় রাজনৈতিক জোটগুলোর নয়া মেরুকরণ। কাদের নিয়ে জোট করলে ক্ষমতায় যাওয়া যাবে এমন চিন্তা করে প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এসেছে। এ কারণে আদর্শ ভুলে গিয়ে যে দলকে পাচ্ছে সে দলকেই জোটে বেড়াচ্ছে। এ কারণে রাজনৈতিক মেরুকরণও পাল্টে গেছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে ছোট ছোট রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকার রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে তা জমাও দিয়ে দিচ্ছেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ ও বিএনপির যেসব প্রার্থী দলীয় টিকেট পাওয়ার গ্রীন সিগন্যাল পেয়েছেন তারাও চুপেচাপে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে ফেলছেন। কিন্তু বড় দল ও জোটের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত না হওয়ায় শেষ মুহূর্তে চলছে নানান হিসাব-নিকাশ। কেউ কেউ দল থেকে মনোনয়ন পাওয়ার আশ্বাস পেলেও জোটের শক্তিশালী প্রার্থী থাকায় তাদের মনোনয়ন পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আবার একই জোটের একাধিক শক্তিশালী প্রার্থী একই সংসদীয় এলাকায় প্রার্থী হওয়ায় আসন বণ্টন জটিলতা দেখা দিয়েছে। নানান হিসাব-নিকাশ শেষ করে আজকালের মধ্যেই প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করতে পারে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের শরিক দলগুলো। তবে বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দলগুলোর প্রার্থী তালিকা ২৭ নবেম্বর রাতের আগে চূড়ান্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ২৮ নবেম্বর হওয়ায় তার আগে ২৭ নবেম্বর রাতেই তারা প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করে সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দেবে। তারপরও কোন কোন আসনে জোটের শরিক দলগুলোর সমঝোতা না হওয়ায় সেসব আসনে জোটের একাধিক প্রার্থী থাকবে। তবে ৯ নবেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন হওয়ায় তার আগেই প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। আর কোন কারণে দু’একটি আসনে সমঝোতা না হলে সে আসন উন্মুক্ত রাখা হবে। প্রাপ্ত তথ্য মতে, বড় দল বিএনপি ও আওয়ামী লীগের কাছ থেকে তাদের রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ১৪ দলীয় জোটের শরিকরা শতাধিক আসন দাবি করছে। কিন্তু বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সকল সংসদীয় আসনে একাধিক যোগ্য প্রার্থী থাকায় তারা ৬০ থেকে ৭০টির বেশি আসন ছাড়তে পারছে না। এ কারণে বিভিন্ন জোটে আসন বণ্টন নিয়ে এখনও মনকষাকষি চলছে বলে জানা গেছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনৈতিক জোট ১৪ দল ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রত্যেক মনোনয়ন প্রত্যাশীই মনে করেন, নিজ নিজ আসন থেকে টিকেট পেলে তাদের বিজয় নিশ্চিত। আর এ কারণেই এবার এ দুটি জোটের শীর্ষস্থানীয় দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী বেড়ে গেছে। এবার আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন ফরম কিনেছে ৪ হাজার ২৩ জন। আর বিএনপি থেকে এবার মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন ৪ হাজার ৫৮০ জন। যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেকর্ড। আর মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে অনেকেই নির্বাচন করতে চাচ্ছেন বলে কেউ কাউকে ছাড় দিতে চাচ্ছেন না। সবাই চাচ্ছেন সংসদ সদস্য হতে। জানা যায়, মনোনয়নপত্র দাখিলের অন্তত দুদিন আগে আওয়ামী লীগ ও তাদের রাজনৈতিক জোট ১৪ দল প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করে তা জাতির সামনে তুলে ধরতে চায়। আর বিএনপি ও তাদের রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের প্রার্থী দেখে নিজেদের তালিকা চূড়ান্ত করতে চায়। তবে আওয়ামী লীগ দু’একদিন আগে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করলেও তা সংশোধনের সুযোগ রেখে দিচ্ছে। সাক্ষাতকারকালেই প্রত্যেক প্রার্থীর কাছ থেকে প্রত্যাহারপত্র লিখিয়ে রেখেছেন। শেষ মুহূর্তে কোন প্রার্থী পরিবর্তন করতে চাইলে সে সুযোগ রেখে দিচ্ছে। সে ক্ষেত্রে আগে থেকেই বিকল্প প্রার্থীকেও মনোনয়নপত্র দাখিল করিয়ে রাখা হচ্ছে। শুধু একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনই নয়, প্রতিটি নির্বাচনের আগেই দেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করতে হিমশিম খেতে হয়েছে। অতীতে দেখা গেছে আগে থেকে সঠিক করে রাখার পরও শেষ মুহূর্তে এসে অনেক কিছুই লড়চড় হয়ে গেছে। আর এবার দল ও জোটের সংখ্যা বেশি হওয়ায় এ সমস্যা আরও প্রকট হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনেক দল অংশ না নেয়ায় এবারের নির্বাচনটি একটি ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে। সরকারী দল চাচ্ছে সকল আসনে ভাল প্রার্থী দিয়ে নির্বাচনে বিজয় লাভ করে ক্ষমতা ধরে রাখতে। আর বিরোধী দল চাচ্ছে এ সরকারকে ভোটের মাধ্যমে বিদায় করে আবারও ক্ষমতায় যেতে। আর এ কারণেই এবার জোট-মহাজোট গঠনে নানান মেরুকরণ হয়েছে। যে জন্য প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করতে বিভিন্ন দল ও জোট হিমশিম খাচ্ছে। আর মাত্র তিনদিন পর মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে। তারপরও নেতাদের দল ও জোট বদল অব্যাহত রয়েছে। কোন জোট বা দলে গেলে মনোনয়ন নিশ্চিত হবে এমন চিন্তাভাবনা থেকে শেষ মুহূতে দল ও জোট বদল চলছে। আর দল ও জোটগুলোর শীর্ষ নেতারাও কোন বাছবিচার না করেই সবাইকেই নিয়ে নিচ্ছেন। এই দলবদল নিয়েও আবার চলছে নানা মেরুকরণ। তিনদিন পর আর সুযোগ থাকছে না এমনটি মাথায় রেখেই বিভিন্ন দলে যোগ দিচ্ছেন প্রার্থীরা।
×