ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

শরণখোলায় খুঁজে পাওয়া ব্যক্তিই মুন্সীগঞ্জের জুয়েল

প্রকাশিত: ০৪:৫১, ২৫ নভেম্বর ২০১৮

 শরণখোলায় খুঁজে  পাওয়া ব্যক্তিই  মুন্সীগঞ্জের জুয়েল

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট ॥ অবশেষে পরিচয় মিলেছে সিডরের ১১ বছর পর ফিরে পাওয়া শরণখোলার কথিত সেই শহিদুল মোল্লার। মানসিক ভারসাম্যহীন ওই ব্যক্তির নাম জুয়েল সরদার। মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার যশলদিয়া গ্রামের আমিন উদ্দিন সরদারের ছেলে। উভয় পরিবার নিশ্চিত হওয়ার পর শনিবার জুয়েলকে তার পরিবারের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। হারানো স্বজনকে ফিরে পেয়ে খুশিতে আত্মহারা ওই পরিবার। এ নিয়ে খবর প্রকাশিত হলে গত ২০ নবেম্বর রাতে মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার যশলদিয়া গ্রাম থেকে শরণখোলায় ছুটে আসে জুয়েলের পরিবার। তারা কথিত সেই শহিদুলকে দেখেই চিনতে পারে ৮-৯ বছর আগে নিখোঁজ হওয়া তাদের মানসিক ভারসাম্যহীন জুয়েলকে। এ সময় তারা জুয়েলকে নিতে চাইলে কোনভাবেই দিতে রাজি হয়নি শহিদুলের পরিবার। দীর্ঘ বছর পর হারানো স্বজনের দেখা পেয়েও তাকে রেখে অশ্রুসিক্ত হয়ে ফিরে আসেন জুয়েলের বাবা আমিন উদ্দিন সরদার, স্ত্রী হাসি বেগম, ছেলে শামীম সরদার, ভাইপো সামাদ সরদার ও চাচাত ভাই স্বপন সরদার । তারা ওই রাতে স্থানীয় প্রশাসন ও সাংবাদিকদের কাছে গেলে তাদের পরামর্শ অনুযায়ী হারানো স্বজনকে পেতে আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এদিকে, খুঁজে পাওয়া ওই ব্যক্তির সঙ্গে হুবহু মিল থাকায় দীর্ঘ বছর পর তাকে পেয়ে উচ্ছ্বসিত হয়েছিল শহিদুলের পরিবার। একপর্যায়ে তার আচার-আচরণে ফুটে ওঠে এ তাদের শহিদুল নয়। এরপর কথিত শহিদুলের পরিবার তাকে ফিরিয়ে দিতে সম্মত হয়। সে অনুযায়ী শুক্রবার রাত ৯টার দিকে খোন্তাকাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন খান মহিদউদ্দিনের মাধ্যমে দুই পরিবারের সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে জুয়েলকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ সময় ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর তালুকদার, সাবেক ইউপি সদস্য স্কুলশিক্ষক জাকির হোসেন, শ্রমিক লীগ নেতা সুলতান ফরাজী, নূরুল ইসলাম মীর, মৎস্যজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মজিবর তালুকদার, মৎস্য ব্যবসায়ী কবির আড়তদারসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। জুয়েলের বাবা আমিন উদ্দিন সরদার সন্তানকে ফিরে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা। তিনি জানান, দুই ছেলে, এক মেয়ের মধ্যে জুয়েল তার বড় সন্তান। ২০১০ সালে সে নিখোঁজ হওয়ার পর বহু জায়গায় খুঁজেও আর পাননি। পরিবারের সবাই ভেবেছে ও আর বেঁচে নেই। পেপারে না উঠলে তাকে আর কোনদিনও পাওয়া যেত না বলে জানান তিনি। স্ত্রী হাসি বেগম বলেন, আমার তিন ছেলে। স্বামীকে হারিয়ে সন্তানদের নিয়ে অনেক কষ্ট করেছি। তাকে পাওয়ার জন্য বহু ওঝা-কবিরাজের কাছেও গিয়েছি। যাদের মাধ্যমে আমার স্বামীকে পেয়েছি, আমি ও আমার পরিবার তাদের সবার কাছে কৃতজ্ঞ। জুয়েলকে খুঁজে পাওয়া (কথিত শহিদুলের বড় বোন) মঞ্জু বেগম বলেন, জুয়েলের সঙ্গে আমার হারিয়ে যাওয়া ভাই শহিদুলের অনেক মিল। আমরা এখন থেকে মনে করব জুয়েলই আমাদের হারিয়ে যাওয়া ভাই। দুই পরিবারের মধ্যে জুয়েলের মাধ্যমে একটা আত্মীয়তার সম্পর্ক হয়ে গেল। শরণখোলার ইউএনও লিংকন বিশ্বাস ও থানার ওসি দিলীপ কুমার সরকার হারিয়ে যাওয়া ওই ব্যক্তিকে তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, শরণখোলা উপজেলার দক্ষিণ আমড়াগাছিয়া গ্রামের ফুলমিয়া মোল্লার ছেলে শহিদুল সুন্দরবনে মাছ ধরতে গিয়ে ২০০৭ সালের ১৫ নবেম্বর প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডরে নিখোঁজ হন।
×