ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শিল্প খাতের উন্নয়নে এলএনজির যৌক্তিক দাম নির্ধারণের তাগিদ

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ২৫ নভেম্বর ২০১৮

শিল্প খাতের উন্নয়নে এলএনজির যৌক্তিক দাম নির্ধারণের তাগিদ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশের শিল্প খাত উন্নয়নে এলএনজির যৌক্তিক দাম নির্ধারণের তাগিদ দেয়া হয়েছে। এলএনজি সহজলভ্য হলে নতুন বিনিয়োগ বাড়বে। এ কারণে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতসহ অন্যান্য দেশে এলএনজি (লিকুইফাইড ন্যাচারাল গ্যাস) কি দামে বিক্রি করা হয় তার ওপর জরিপ চালিয়ে একটি সঠিক মূল্য নির্র্ধারণ করা যেতে পারে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলতে এলএনজি আমদানি বর্তমান সরকারের একটি ভাল উদ্যোগ বলেও মন্তব্য করা হয়েছে। শনিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘এলএনজি মূল্য নির্ধারণ : ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প খাতে এর প্রভাব’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনটির সভাপতি আবুল কাসেম খানের সভাপতিত্বে ওই আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক প্রধান সমন্বয়কারী মোঃ আবুল কালাম আজাদ। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সদস্য রহমান মুরশিদ বিশেষ অতিথি হিসেবে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। বিদ্যুত বিভাগের সাবেক সচিব ড. মোহাম্মদ ফওজুল কবির খান বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এছাড়া এলএনজি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ও বাণিজ্য সংগঠনের প্রতিনিধিরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। মূল প্রবন্ধে বলা হয়, ১৯৯৮ সালের পর দেশে নতুন কোন গ্যাসক্ষেত্র আবিস্কার হয়নি। এ কারণে বর্তমানে যে পরিমাণ গ্যাস মজুদ রয়েছে তা আগামী ৬-৭ বছরের মধ্যে ফুরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই বাস্তবতায় এলএনজির পাশাপাশি অন্যান্য উৎস ব্যবহারে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। শুধু তাই নয়, এলএনজি আমদানির ক্ষেত্রে স্থলভিত্তিক টার্মিনাল এবং সমুদ্র এলাকায় ভাসমান টার্মিনাল স্থাপনের মধ্যে সমন্বয় করা প্রয়োজন বলেও মতামত দেয়া হয়েছে। মূলপ্রবন্ধে আরও বলা হয়, এলএনজি আমদানি ব্যয়বহুল হওয়ায় আমাদের গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাবে। তবে সেটা যেন কোনভাবেই আমাদের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে। এ কারণে এলএনজির যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করা প্রয়োজন হয়ে পড়ছে। প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, গত দশ বছরে বৈশ্বিকবাজারে বিদ্যুত ও গ্যাসের দাম বেড়েছে যথাক্রমে প্রায় ৬৩ ও ১১৫ শতাংশ পর্যন্ত। বিদ্যুত উৎপাদনে গ্যাসের উপর নির্ভরশীলতা প্রায় ৯০ ভাগ এবং এক্ষেত্রে বিদ্যুত উৎপাদনের উৎসের বহুমুখীকরণ আবশ্যক হয়ে পড়ছে। তিনি বলেন, দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরনের লক্ষ্যে পার্শ্ববর্তী দেশগুলো হতে একই দামে বিদ্যুত আমদানি করা সম্ভব। এটি করা গেলে স্বল্প সময়ের মধ্যে শিল্প-কারখানাসমূহে বিদ্যুত সংযোগ প্রদান করতে সরকার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সার্ক অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে যৌথভাবে ‘হাইড্রো পাওয়ার’ ও ‘সোলার পাওয়ার’ ব্যবহারের লক্ষ্যে একটি সার্ক সোলার গ্রিড স্থাপনের প্রস্তাব করেছেন। এলএনজি আমদানির পর দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে দেশের ব্যবসায়িক কর্মকা- পরিচালনায় যেন ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি না পায়, সেদিকে সরকার যতœবান হবে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) সদস্য রহমান মুরশিদ বলেন, জ্বালানি দাম বৃদ্ধিতে বিইআরসি আয়োজিত গণশুনানি সমূহে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের আরও বেশি হারে তথ্যভিত্তিক বক্তব্য উপস্থাপন করতে হবে। যার মাধ্যমে বিইআরসি বাস্তবমুখী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবে। তিনি বলেন, অর্থনীতিতে গ্যাসের ভূমিকার ওপর একটি গবেষণা পরিচালনা করা প্রয়োজন। এর ফলে কোন খাতে কি পরিমাণ গ্যাস বরাদ্দ করা হবে তা নির্ণয় সম্ভব হবে। তিনি বলেন, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে আমাদের অবশ্যই গ্যাসের পাশাপাশি অন্যান্য উৎসসমূহের প্রতি মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। এলএনজির নির্ধারত মূল্য আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর কি ধরনের প্রভাব ফেলবে তা খতিয়ে দেখার ওপর তাগিদ দেয়া হয়েছে। স্বাগত বক্তব্যে ডিসিসিআইয়ের সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, শিল্প-কারখানার জন্য যৌক্তিক মূল্যে জ্বালানি প্রাপ্তির বিষয়টি অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ। শিল্প-কারখানার অগ্রগতির চাকা সচল রাখার ক্ষেত্রে সম্প্রতি গ্যাসের স্বল্পতার বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি জানান, বর্তমানে প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন প্রায় ২,৭০০ মিলিয়ন কিউবিক ফিট যেখানে আমাদের চাহিদা রয়েছে ৩,৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট। চাহিদার এ ব্যবধান মিটানোর জন্য প্রাথমিকভাবে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, যা আশাব্যঞ্জক। তিনি বলেন, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারের মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন করা প্রয়োজন। স্থানীয় কয়লা উত্তোলনের ওপর জোর দেন তিনি। তিনি এলএনজি’র দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের কার্যক্রম পর্যালোচনা এবং সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডাদের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব করেন।
×