ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বৃহত্তর রাজশাহীর সব আসনেই লক্ষ্য নৌকার জয়

প্রকাশিত: ০৩:৫৯, ২৫ নভেম্বর ২০১৮

বৃহত্তর রাজশাহীর সব আসনেই  লক্ষ্য নৌকার জয়

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আগের দুটি টার্মের মতো এবারও বৃহত্তর রাজশাহীর সব আসনেই হ্যাটট্রিক বিজয় টার্গেট করেছে আওয়ামী লীগ। আর বিএনপি বলছে এবার তারা জয়ী হবে বৃহত্তর রাজশাহীর সব আসনে। বর্তমানে জেলার ছয়টিসহ বৃহত্তর রাজশাহীর সবকটি আসনে সুবিধাজনক অবস্থায় আওয়ামী লীগ থাকলেও বিএনপির আসনে বাগড়া বসাতে চাইছে তাদের রাজনৈতিক মিত্র জামায়াতে ইসলামী। দলের নিবন্ধন হারানো জামায়াত এবার বৃহত্তর রাজশাহীর অন্তত ১৮ আসনে প্রার্থী দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা না হলে শেষ পর্যন্ত স্বতন্ত্র হয়ে ভোটের মাঠে থাকবে বলে ঘোষণাও দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। ফলে এখনও দলের মনোনয়ন নিশ্চিত না হলেও জামায়াতকে নিয়ে শুরুতেই বিপাকে পড়েছে বিএনপি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দলের নিবন্ধন না থাকলেও বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চলে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। ইতোমধ্যে রাজশাহী জেলার দুটি আসন ছাড়াও উত্তরের বিভিন্ন জেলায় ভোটের মাঠে নেমে পড়েছে দলটির নেতাকর্মীরা। এ জেলাগুলোর ৩০ আসনে তারা মনোনয়নপত্র উত্তোলন করেছে। এসব জেলায় তারা ১৮ আসনে প্রার্থী দেয়ার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। বিএনপিকে চাপে রাখতেই ভোটের মাঠে বেশ কৌশলী দলটির রাজনৈতিক মিত্র জামায়াত। এদিকে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও রাসিকের সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু বলেন, জামায়াতের সঙ্গে এখন বিএনপির আনুষ্ঠানিক সেই সাংগঠনিক সম্পর্ক আর নেই। তবে অনেক আসনে জামায়াতের উল্লেখযোগ্য ভোট রয়েছে। সেসব ভোট বিএনপির কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে বিএনপি নিজস্ব দলীয় কৌশলেই এগিয়ে যাবে এবং ওইসব আসনে বিএনপি প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিতে যা করা প্রয়োজন তাই করবে। মিনু বলেন, মানুষ এখন বিএনপিকে ভোট দিতে মুখিয়ে আছে। সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট গ্রহণ হলে শুধু রাজশাহী নয়, বৃহত্তর রাজশাহীর সব আসনেই তারা বিজয়ী হবেন। এদিকে জামায়াতের রাজশাহীর নেতারা বলেছেন, দু’একদিনের মধ্যেই জামায়াতের সঙ্গে আসন বণ্টন নিয়ে জোট প্রধান বিএনপির সঙ্গে চূড়ান্ত আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। তখনই ঠিক হবে জামায়াতকে কোন কোন আসন ছেড়ে দেয়া হবে। আর বিএনপির সঙ্গে বৈঠকের পরই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে জামায়াত স্বতন্ত্র প্রতীকে নাকি ধানের শীষে নির্বাচনে লড়বে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০১ সালে প্রথম বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করে জামায়াতের ১৭ জন প্রার্থী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপরে ২০০৮ সালে ৩৫ আসনে জোটগতভাবে অংশ নিয়েছিল জামায়াত। সেবার জামায়াতের মাত্র দু’জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। জামায়াতের রাজশাহী মহানগর নেতা আবু ইউসুফ সেলিম বলেন, নিবন্ধন বাতিল হলেও জামায়াত এখনও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটেই রয়েছে। দুই দলের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে সম্প্রতি ভেতরে ভেতরে কয়েক দফা বৈঠক হলেও এখনও চূড়ান্ত হয়নি আসন বণ্টন। তবে সারাদেশে ১০টি আসনে জামায়াতকে ছাড় দিতে চেয়েছে বিএনপি। এদিকে আসন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের টানাপোড়েন থাকলেও ভোটের মাঠে শক্ত অবস্থানে রয়েছে আওয়ামী লীগ। তারা এবারও বৃহত্তর রাজশাহীর সবকটি আসনে ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনের মতো হ্যাটট্রিক বিজয় ঘরে তুলতে চায়। রাজশাহী আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, গত ১০ বছরের দেশের সব সেক্টরে যে উন্নয়ন হয়েছে, তাতে দেশের চেহারা বদলে গেছে। মানুষের জীবনযাত্রার মান বেড়েছে। ঘরে ঘরে বিদ্যুত নিশ্চিত হয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও যোগাযোগ সব সেক্টরে লেগেছে উন্নয়নের ছাপ। এ ধারা অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলও মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। তারা নির্বাচনের মাঠে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন ফলে এবারও জয় তাদের ঘরেই আসবে। শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, গত ৩০ জুলাই যেভাবে রাসিকের নির্বাচনে নৌকার জয় হয়েছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও নৌকার জয় নিয়ে আসতে হবে। লিটন বলেন, রাজশাহীর উন্নয়নে অনেক কাজ করতে হবে। এজন্য তিনি সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশাকে সঙ্গে চান। শুধু বাদশা নন, রাজশাহী অঞ্চলের সব আসনেই নৌকার হয়ে কাজ করার জন্যই তিনি নির্দেশনা দেন। এ সভায় অতিথি হিসেবে রাজশাহী-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশাও উপস্থিত ছিলেন। লিটন বলেন, আমরা জেনেছি রাজশাহী সদর আসনে আবার বাদশাকে ১৪ দলের প্রার্থী করা হচ্ছে। এই নির্বাচনে আমরা সবাই এমনভাবে কাজ করব, যেভাবে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আমরা নৌকার বিজয় নিশ্চিত করেছিলাম। ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে নৌকার বিজয় আনতে হবে। রাজশাহী সদরে এবারও নিজের প্রার্থিতার নিশ্চিত জানান দিয়ে ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, দুই মেয়াদে এমপি থাকা অবস্থায় তিনি আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের পরামর্শ নিয়েছেন। রাজশাহীর উন্নয়নে তিনি সবার মতামত গ্রহণ করেছেন। এভাবে রাজশাহী এগিয়ে গেছে। অতীতের মতো আগামীতেও আওয়ামী লীগ ও ওয়ার্কার্স পার্টির এই সুসম্পর্ক বজায় থাকবে। ১৪ দল ঐক্যবদ্ধ থাকবে। পরে এ সভা থেকে আগামীকাল রাজশাহী ১৪ দলের সভা আহ্বান করা হয়েছে। সে সভায় নির্বাচন পরিচালনায় বিভিন্ন কমিটি-উপকমিটি গঠনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার বলেন, নৌকা যার তার পক্ষে সবাই তার পক্ষে কাজ করবেন। নৌকার বিজয় নিশ্চিতের জন্য আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সব শরিক দলই এখন ঐক্যবদ্ধ। রাজশাহী অঞ্চলের সব আসনেই জয়ের লক্ষ্যে তারা মাঠে আছেন এবং শেষ পর্যন্ত থাকবেন বলে জানান তিনি।
×