ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতিমনা ব্যক্তি জঙ্গি হতে পারে না : মনিরুল ইসলাম

প্রকাশিত: ০৩:৪৪, ২৪ নভেম্বর ২০১৮

সংস্কৃতিমনা ব্যক্তি জঙ্গি হতে পারে না :  মনিরুল ইসলাম

অনলাইন রিপোর্টার ॥ যারা জাতীয় সঙ্গীত গায়, লালন-নজরুল সঙ্গীত শোনে এবং রবীন্দ্র নাথের লেখা পড়ে তারা কখনো উগ্রবাদ, জঙ্গীবাদে জড়াতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘যারা জঙ্গিবাদে জড়িয়ে ফের ভাল পথে ফিরতে চায় আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। কথা বলেছি যারা জঙ্গি অভিযানে নিহত হয়েছে তাদের পরিবারের সঙ্গেও। আসলে কেন তরুণরা জঙ্গিবাদে জড়ায়। সংস্কৃতিমনা, স্পোর্টসম্যান কিংবা মননশীলরা কখনো জঙ্গিবাদে জড়ায় না।’ রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে শনিবার দিনব্যাপী ‘সহিংস উগ্রবাদবিরোধী যুব সংলাপ’শীর্ষক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম। সহিংস উগ্রবাদ প্রতিরোধে যুবসমাজ তথা তরুণদের ভূমিকা, উগ্রবাদের এ সমস্যা সমাধানে তরুণরা কী ভাবছে তা জানতে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিট (সিটিটিসি) এ সংলাপের আয়োজন করে। ইউএনডিপি বাংলাদেশের সহযোগিতায় সংলাপে অংশগ্রহণ করে রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, শিক্ষক, পেশাজীবী ও সাংবাদিকরা সহিংস উগ্রবাদ নিরসনে বিভিন্ন পন্থা ও সমস্যা তুলে ধরেন। প্রধান আলোচক হিসেবে সিটিটিসির প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘তরুণদের একটি অভিযোগ তাদের কথা কেউ শোনে না। তাদের ওপর সবকিছু চাপিয়ে দেয়। সত্যিকার অর্থে আমরা তরুণদের কথা শুনতে চাই। তরুণরা সহিংস উগ্রবাদ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার বিষয়ে কী ভাবছে তা জানতে চাই।’ অনুষ্ঠানে লালবাগ মাদ্রাসার ছাত্র সামসুদ্দিন বলেন, ‘ধর্মের জায়গা আমাদের সবার দুর্বলতা রয়েছে। আমরা কোনো কিছু সঠিকভাবে না জেনে অন্ধের মতো বিশ্বাস করি। তাতে আমরা সহজে বিপথে চলে যাই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মটিভেট করতে হবে।’ ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী কাছিন সুলতানা চামেলী বলেন, ‘ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া এবং ইন্টারনেটে সমসাময়িক ঘটনা সম্পর্কে সঠিক তথ্য তরুণদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে।’ আরও মতামতে উঠে আসে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একটি উগ্রবাদ বিরোধী কাউন্সিলিং টিম থাকলে তারা উগ্রবাদ সম্পর্কে ধারণা দেবে। তরুণদের কথা শুনতে হবে যাতে তারা হতাশ না হয়। দেশের বেকারত্ব সমস্যা সমাধান করতে হবে। রাখি নামে বদরুন্নেসা কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ইন্টারনেটের অধিক ব্যবহার, তরুণদের মানসিক অবস্থা ও হতাশা উগ্রবাদে জড়িয়ে পড়ার অন্যতম কারণ। পর্যাপ্ত খেলাধুলা ও বিনোদনের সুযোগ বৃদ্ধি করতে হবে। সব ধরনের গুজব মোকাবেলা করতে হবে। একটি ভুয়া নিউজ যত দ্রুত তরুণদের স্পর্শ করে, অতটা সহজে সেই মিথ্যাকে সরানো যায় না।’ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী সাংবাদিকদের মধ্যে তিনজন জানান, জঙ্গিবিরোধী অভিযানের তথ্য আরও স্বচ্ছ হওয়া দরকার। জেল থেকে বের হয়ে জঙ্গিরা যেন ফের জঙ্গিবাদে না জড়ায় সেদিকে নজর রাখতে হবে। সামাজিক সচেতনতার পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ায় জঙ্গিবাদ বিরোধী বিজ্ঞাপন, প্রয়োজনে বুষ্ট করে প্রচার করতে হবে। অনুষ্ঠানে কাউন্টার টেররিজম প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘ভিডিও গেমও প্রভাবিত করে জঙ্গিবাদকে। ভিডিও গেমের মাধ্যমে বিভিন্ন অস্ত্র চালানো এবং পরবর্তী সময়ে বাস্তবে অস্ত্র চালাতে আগ্রহী হয়ে ওঠে তরুণরা। সাইবার স্পেস বা ইন্টারনেট রেডিকালাইজেশনের জন্য বড় প্লাটফর্ম। উগ্রবাদে জড়িয়ে যাওয়ার আরও একটি অন্যতম কারণ সামাজিক বঞ্চনা। তরুণরা সামাজিক বঞ্চনা থেকে উগ্রবাদে জড়িয়ে পড়ে।’ তিনি বলেন, ‘প্রিজন রেডিকালাইজেশন ঠেকানোর জন্য কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে উগ্রবাদের চিন্তার ভ্রান্ত ধারণা থেকে ফিরিয়ে আনা একটি চ্যালেঞ্জ। কেন আপনি লাদেন বা জঙ্গি তামিমের মতো ব্যক্তিকে আদর্শ মেনে জঙ্গীবাদ, উগ্রবাদের মতো সহিংস পথ বেছে নেবেন? আদর্শবান বা রোল মডেল আমাদের দেশে অনেক ব্যক্তি রয়েছে। যাদের অনুসরণ করা যায়। জিহাদের মিথ্যা ব্যাখ্যা দিয়ে, মরলে শহীদ বাঁচলে গাজী বলে তরুণদের উদ্বুদ্ধ করছে ভ্রান্তধারণাপুষ্ট কিছু সংখ্যক মানুষ।’ আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে ইউএনডিপি প্রতিনিধি রবার্ট স্টরম্যান বলেন, ‘জাতীয় ও বৈশ্বিকভাবে সহিংসতা ও উগ্রবাদ একটি ক্যানসার। একজন সন্ত্রাসী কিংবা উগ্রবাদীকে শুধু শাস্তির আওতায় আনলেই হবে না। কারণ সমাজে এদের প্রভাব রয়েছে। শাস্তির পাশাপাশি উগ্রবাদের চালিকা শক্তিগুলো কী কী তা সনাক্ত করে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’ বাংলাদেশে সহিংসতা কম উল্লেখ করে রবার্ট স্টরম্যান বলেন, ‘বাংলাদেশ বিশ্ব সহিংসতা জরিপে ২২ নম্বর অবস্থানে রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চ পর্যায় থেকে নিম্নস্তর পর্যন্ত কী ধার্মিক কী শিক্ষিত আর কী আধুনিক মননের অধিকারী কম বেশি সব স্তরের মানুষের সংশ্লিষ্টতা মিলেছে সহিংসতায়।’ অনুষ্ঠানে অন্যানের মধ্যে বক্তব্য দেন- ডিবিসি নিউজের সঞ্চালক নবনিতা চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. নিলয় রঞ্জন বিশ্বাস, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফারজানা রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শবনম আজিম ও অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন।
×