ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কাছ থেকে তিন ধরনের ইস্তফাপত্র গ্রহণ

নির্বাচন ঘিরে নানামুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বিএনপি

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ২৪ নভেম্বর ২০১৮

  নির্বাচন ঘিরে নানামুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বিএনপি

মোয়াজ্জেমুল হক ॥ আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি নানামুখী ষড়যন্ত্রের নীলনক্সা এঁটে আছে। অতীতে এ দলটি শরিকদের নেতৃত্ব দিয়েছে। এবার সে দৃশ্য পাল্টে গেছে। দলটির আসল রূপ দিনে দিনে খোলাসা হচ্ছে। ফলে সমর্থনও হ্রাস পাচ্ছে। এ অবস্থায় গত সংসদ নির্বাচন তারা বয়কট করেছে। যার অর্থ দাঁড়ায় নিশ্চিত পরাজয় জেনে তারা ওই নির্বাচনে যায়নি। এবারের নির্বাচন নিয়েও দলটির বহুমুখী সংশয় রয়েছে। ফলে নানা ষড়যন্ত্র নিয়েই এরা এগুচ্ছে। রাজনৈতিক অঙ্গনের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর মতে, দলটির চেয়ারপার্সন এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দুজনই দুর্নীতির মামলায় দন্ডিত হয়ে একজন জেলে এবং অপরজন বিদেশে পালিয়ে অবস্থান করছেন। তবে জেল ও পলাতক জীবন থেকে দুজনই দলের কর্মকান্ড নিয়ে তৎপর রয়েছেন। এ অবস্থায় এ দলটি আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে নবপ্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক সংগঠনের পতাকাতলে নিজেদের নিয়ে গেছে। ফ্রন্টের প্রধান নেতৃত্বে রয়েছেন এক সময়ের আওয়ামী লীগ নেতা পরবর্তীতে গণফোরামের প্রধান ড. কামাল হোসেন। আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে শরিক অন্য দলগুলোকে নিয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীদের দিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মতো বিএনপিও তাদের আগ্রহী প্রার্থীদের মাঝে মনোনয়নপত্র বিতরণ ও গ্রহণ কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে। বিএনপির মনোনয়ন পেতে আগ্রহী এমন একাধিক প্রার্থী জানিয়েছেন, তাদের কাছ থেকে তিন ধরনের সম্মতিমূলক কাগজে আগেভাগেই স্বাক্ষর গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথমত দলীয় মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় ইস্তফাপত্র, দ্বিতীয়ত নির্বাচন কমিশন থেকে মনোনয়নপত্র গ্রহণ করার পর তার ইস্তফাপত্র এবং তৃতীয়ত হচ্ছে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সেক্ষেত্রেও আগাম একটি ইস্তফাপত্র নিয়ে রাখা হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক এমন একাধিক সূত্র জানিয়েছে, প্রথম দুটি প্রক্রিয়া অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোও করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে সেক্ষেত্রেও ইস্তফাপত্র আগেভাগে নিয়ে রাখার ঘটনা বিএনপি নতুনভাবে সংযোজন করল। যা আগ্রহী প্রার্থীদের যুগপৎ ক্ষুব্ধ ও বিস্মিত করেছে। এক্ষেত্রে সূত্রগুলো জানিয়েছে, আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শুরুতে এ দলটি চেষ্টা চালিয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। সেক্ষেত্রে তারা ব্যর্থ হয়েছে। দ্বিতীয় চালিয়েছে, বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়া। তাতেও দলটি সফল হয়নি। নানাভাবে হুংকার দিয়েও সবক্ষেত্রে তাদের ব্যর্থতার ঝুলিই পূর্ণ হয়েছে। শেষ পর্যন্ত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে গাটছড়া বেঁধে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এ ঘোষণার পর দলটি অন্যান্য দলের মতো মনোনয়নপত্র বিতরণ ও গ্রহণ কাজ সম্পন্ন করেছে। কিন্তু যেসব প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনী লড়াইয়ে বিজয়ী হতে পারেন- এমন সকলের কাছ থেকেও ইস্তফাপত্রে আগাম স্বাক্ষর নিয়ে রেখেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি একটি বড় ধরনের ষড়যন্ত্র। আগামী সংসদ নির্বাচন দ্রুত এগিয়ে আসছে। কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা ছাড়া নির্বাচন যদি সম্পন্ন হয় এতে যারা নির্বাচিত হবেন তাদের নাম ঘোষিত হবে। এক্ষেত্রে বিএনপির যেসব প্রার্থী নির্বাচিত হতে পারেন তাদের কাছ থেকে এ ধরনের ইস্তফাপত্র আগেভাগে নিয়ে রাখায় তারা রয়েছেন শঙ্কায়। বিশ্লেষকদের মতে, এটি ভবিষ্যতে নতুন সংসদ গঠিত হওয়ার পর সংসদ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগাম একটি ষড়যন্ত্র। সার্বিক পরিস্থিতি তাদের অনুকূলে না থাকলে তারা এ ধরনের আগাম ইস্তফাপত্রকে ট্রামকার্ড হিসেবে ব্যবহার করার লক্ষ্যেই এ কাজ করেছে। নাম প্রকাশ না করে বিএনপির কয়েকজন প্রার্থী জানিয়েছেন, জোটগত, দলীয় এবং নির্বাচন কমিশনের মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় চূড়ান্ত এবং শেষ পর্যন্ত তাদের যারা নির্বাচিত হতে পারেন এমন কেউ কেউ স্বস্তিতে নেই। কারণ ইস্তফার সব প্রক্রিয়া আগেভাগেই নিয়ে রাখা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাওয়া হলে তাদের বক্তব্য হচ্ছে, কলকাঠি কারা নাড়ছেন তা তাদের কাছে স্পষ্ট না হলেও এটি পরিষ্কার যে, দলটির রাজনৈতিক কর্মকান্ড দলীয় শীর্ষ নেতাদের ইচ্ছায় নয়, ভিন্ন স্থান থেকে পরিচালিত হচ্ছে। এতে নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করার কোন সুযোগ নেই। কারণ যারা এ ধরনের আচরণ করার সাহস দেখাবেন তাদের ওপর নেমে আসবে দলচ্যুত করার খড়গ।
×