ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

গবেষণায় তথ্য

জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে বড় উপায় নারীর উচ্চ শিক্ষা

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ২৪ নভেম্বর ২০১৮

 জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে বড় উপায় নারীর উচ্চ শিক্ষা

সমুদ্র হক ॥ জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ৮০’র দশকের তুলনায় কমেছে। তবে এখনও বেশি। বাংলাদেশ বিশে^র অষ্টম জনবহুল দেশ। ২০৫০ সাল পর্যন্ত এই জনসংখ্যা ২২৬ মিলিয়নে (প্রায় ২৩ কোটি) ঠেকবে। তারপর দ্রুত কমে পরবর্তী একশ’ বছরের মধ্যে বিংশ শতকের পঞ্চাশের দশকের সংখ্যায় গিয়ে ঠেকবে। পপুলেশন কন্ট্রোলের মতো যাই হোক দেশের গবেষকগণের মতে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে বড় উপায় নারীর উচ্চ শিক্ষা। নারীদের শিক্ষিত করে তোলার সঙ্গেই দেরিতে বিয়ে এবং পরিকল্পিত উপায়ে সন্তান গ্রহণের সম্পর্ক রয়েছে। অর্থাৎ একজন শিক্ষিত নারী বিয়ের বয়স বুঝে নিজেকে এস্টাবলিশ করার পর বিয়ের পিঁড়িতে বসতে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠছে। তবে মেয়েদের কিশোরী বেলা থেকে যৌবনের প্রারম্ভিক (টিনএজ প্লাস) অতি আবেগের সময়টি পারিবারিক বন্ধনে (ফ্যামিলি বন্ডিং) রাখতে পারলে প্রেমের বিয়ে ও বাল্যবিয়ে কমে সন্তান জন্মগ্রহণের হার কমে আসবে। দেশে প্রতি মিনিটে গড়ে ৪ জন, প্রতিদিন অন্তত ৫ হাজার ৪৭৯ জন এবং প্রতিবছর প্রায় ২০ লাখ মানুষ বাড়ছে। দেশে নারী শিক্ষার হার বেড়েছে। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত নারী শিক্ষা বেড়েছে। উচ্চ শিক্ষাক্ষেত্রে নারীর এগিয়ে যাওয়া এখনও কাক্সিক্ষত পর্যায়ে আসেনি। বাল্যবিয়ে এখনও সম্পূর্ণ প্রতিরোধ না হওয়ায় অনেক বালিকা মা হচ্ছে। দেশে ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীর হার ২১ দশমিক ৮ শতাংশ। ১৫ থেকে ২৪ বছর পর্যন্ত তরুণ-তরুণীর হার প্রায় ২০ শতাংশ। দেখা যায়, দেশে মোট জনসংখ্যার অন্তত ৩৪ শতাংশ কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণীর প্রথম অধ্যায়ের বয়সী। এদের বিয়ের হারের সঙ্গে সন্তান জন্মদানের হার সম্পর্কিত। দেশে প্রজনন হার ১৯৭০ সালের তুলনায় অনেক কমেছে। আরেকদিকে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহারকারীর হার এখনও আশাব্যঞ্জক নয়। এই চিত্রের সঙ্গে আশার কথা হলো- অধিক শিক্ষিত নারীরা দেরিতে বিয়ে করে কম সন্তান নিচ্ছে। ‘ফাইভ বেনিফিটস অব গার্লস সেকেন্ডারি এডুকেশন’ নামের এক গবেষণায় মে এ রায়হানী দেখিয়েছেন, মাধ্যমিক শিক্ষালাভের মাধ্যমে নারী ৫টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অবদান রাখতে পারে। মেয়েদের মাধ্যমিক শিক্ষা দ্বারা সমাজ উপকৃত হয়। উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক শিক্ষা মেয়েদের স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদান করে যেমন- দেরিতে বিয়ে এবং দেরিতে গর্ভধারণ, কম সন্তান গ্রহণ, শিশু টিকার হার বাড়ানো, উন্নত পারিবারিক পুষ্টি ও কম পারিবারিক নির্যাতন। মেয়েদের অধিকতর শিক্ষা এইচআইভি ও এইডস থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে। আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে মেয়েদের উচ্চশিক্ষা বিলম্বে যৌনক্রিয়া শুরু এবং এইচআইভির ঝুঁকি থেকে রক্ষা করে। মেয়েদের শিক্ষার সঙ্গে একটি কথা সংযোজিত হয়েছে তা হলো- মেয়েরা শিক্ষিত হলে দারিদ্র্যমোচন সহজ হয়। জাতীয় মাথাপিছু আয় বেড়ে যায়। জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ার অন্যতম একটি কারণ হলো বালিকাদের বধূ হওয়া। দেশের ৮ বিভাগের মধ্যে কম বয়সে মা হওয়ার প্রবণতা বেশি রাজশাহী বিভাগে ও সবচেয়ে কম সিলেট বিভাগে। বালিকা বধূ হওয়ার হার কমাতে বগুড়া ও জামালপুর জেলার ১৭টি উপজেলায় ৭২টি ইউনিয়ন পরিষদের প্রাথমিক স্কুলে এ্যাকসিলারেটিং এ্যাকশন টু এ্যান্ড চাইল্ড ম্যারেজ ইন বাংলাদেশ নামের একটি পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। ইউএনএফপিএ ও ইউনিসেফ’র জরিপে দেখা গেছে পৃথিবীর ১২টি দেশে বাল্যবিয়ের হার বেশি। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় ভারত নেপাল ও বাংলাদেশে বাল্যবিয়ের হার বেশি। এক জরিপে দেখা গেছে ২০ থেকে ২৯ বছর বয়সে সন্তান জন্মদানকারী মায়েদের তুলনায় ২০ বছরের কম বয়সে সন্তান জন্মদানকারী মায়েরা ৫০ শতাংশ মৃত শিশু জন্ম দেয় এবং নানাভাবে শিশুর মৃত্যু ঘটে। নারীদের মাধ্যমিক শিক্ষার পর উচ্চ মাধ্যমিক স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে নিয়ে গেলে দেশে বাল্যবিয়ে ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমে আসবে। জাতিসংঘ শিশু তহবিলের এক জরিপে বলা হয়েছে দেশে এখনও ১৮ বছরের আগে ৬০ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হচ্ছে। এই কারণে উচ্চ শিক্ষার আগেই তারা ঝরে পড়ে। উচ্চ শিক্ষায় মেয়েদের হার বাড়ানো গেলে এবং স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসলে দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমবে।
×