নিখিল মানখিন ॥ সরকারী হাসপাতালের চিকিৎসা উপকরণ ব্যবহার করে অনেক বেসরকারী ক্লিনিক ও হাসপাতাল পরিচালিত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, সরকারী হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকের ব্লাড এবং বিভিন্ন রোগ জীবাণু শনাক্ত করার দামী কেমিক্যাল পাচার হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকে। এই পাচারকারী চক্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সরকারী হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংক বিভাগের কিছু অসাধু চিকিৎসক ও কর্মকর্তা কর্মচারী জড়িত রয়েছেন। বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে সরকারী হাসপাতালের কিছুসংখ্যক অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারী এমন অবৈধ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। আর রক্ত সম্পর্কিত বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য সরকারী হাসপাতালের রোগীদের পাঠিয়ে দেয়া হয় নিজেদের চুক্তিবদ্ধ বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে। এতে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
সরকারী হাসপাতাল থেকে ওষুধ পাচার হওয়ার ঘটনা বেশ পুরনো। বর্তমান সরকারের বিভিন্ন কার্যকর উদ্যোগে ওষুধ পাচার অনেকটা হ্রাস পেয়েছে। এবার নতুন করে আলোচনায় এসেছে সরকারী হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকের ব্লাড এবং বিভিন্ন রোগ জীবাণু শনাক্ত করার দামী কেমিক্যাল পাচারের ঘটনা। রাজধানীর সরকারী হাসপাতালসমূহ সরেজমিন ঘুরে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। সরকারী হাসপাতালের অনেক কর্মকর্তা কর্মচারী জনকণ্ঠকে জানান, সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর প্রয়োজনে অনেক সময় রক্ত চাওয়া হয়। রোগীর অভিভাবকরা দাতাসংগ্রহ করে রক্ত দেয়ার ব্যবস্থা করেন। অনেক সময় সংগৃহীত রক্তের ব্যাগের সব ক’টি দরকার পড়ে না। রক্তের এই বাড়তি ব্যাগ তখন সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকে সঞ্চিত থাকে। একই গ্রুপের কোন অসহায় রোগীর জন্য রক্তের দরকার হলে ব্লাড ব্যাংকে সঞ্চিত ওই বাড়তি রক্ত নামমাত্র ফি নিয়ে প্রদান করার বিধান রয়েছে। কিন্তু হাসপাতালের অসাধু চক্রের সদস্যরা ওই সব রক্তের ব্যাগ বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকে সরবরাহ করে ব্যবসা করেন। প্রতিটি রক্তের ব্যাগ ন্যূনতম ১ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। আর অল্প টাকায় কিনে দ্বিগুণে মূল্যে বিক্রি করেন বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের মালিকরা। শুধু তাই নয়, হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’, এইচআইভি, ম্যালেরিয়াসহ বিভিন্ন রোগ জীবাণু শনাক্ত করার কেমিক্যালও পাচার হয়ে থাকে। সরকারী হাসপাতালের উর্ধতন কর্মকর্তারা এ বিষয়ে কোন মনিটরিং করেন না। আবার তাদের কেউ কেউ আর্থিক সুবিধার ভাগ নিয়ে দেখেও না দেখার ভান করে থাকেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশে অসংখ্য অবৈধ ও নিম্নমানের হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। নিকটস্থ সরকারী হাসপাতালের ওপর নির্ভর করেই ওই সব প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। এমন অনেক প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো থাকে খুবই দুর্বল। রক্ত সম্পর্কিত জটিল রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর পর্যাপ্ত ও উন্নত মেডিক্যাল যন্ত্রাংশ থাকে না। সরকারী হাসপাতালে নিজেদের দায়িত্ব সম্পন্ন করার পর অনেক চিকিৎসক ও মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট ওই সব প্রতিষ্ঠানে বসেন। তাদের মধ্যে অনেকেই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ব্যবসার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন। এক্ষেত্রে সরকারী হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংক বিভাগের চিকিৎসক ও মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টদের অনেক চাহিদা থাকে। আর তাদের মাধ্যমেই সরকারী হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকের ব্লাড এবং বিভিন্ন রোগ জীবাণু শনাক্ত করার দামী কেমিক্যাল পাচার হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকে। বিনিময়ে সরকারী হাসপাতালের অসাধু চিকিৎসক ও কর্মচারীরা পেয়ে থাকেন মোটা অংকের টাকা।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ জনকণ্ঠকে জানান, এখন পর্যন্ত এ ধরনের অভিযোগ আমার কাছে আসেনি। সরকারী হাসপাতালের মেডিক্যাল যন্ত্রণাংশ ও বিভিন্ন উপকরণ সংরক্ষণে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের কর্মকর্তাদের কঠোর নির্দেশনা দেয়া রয়েছে। এমন ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পিছ পা হব না। সরকারী চিকিৎসা উপকরণসমূহ কোনভাবেই বেসরকারী চিকিৎসা ও ক্লিনিকসমূহের স্বার্থে ব্যবহার করার অনুমতি নেই বলে জানান মহাপরিচালক।