ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

যেন রণক্ষেত্র

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ২৪ নভেম্বর ২০১৮

 যেন রণক্ষেত্র

জাহিদুল আলম জয় ॥ এক ম্যাচে চারটি সরাসরি লালকার্ড। দেশের ফুটবলে এমন ঘটনা বোধহয় আর নেই। শুক্রবার সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ফেডারেশন কাপ ফুটবলে ঢাকা আবাহনী ও বসুন্ধরা কিংসের মধ্যকার ঘটনাবহুল ও বিতর্কিত ফাইনাল ম্যাচে এমন হতাশাজনক ঘটনা ঘটেছে। দু’দলের খেলোয়াড়রা যেন ফুটবল খেলতে নয়, মাঠে এসেছিলেন হাত-পা দিয়ে হাতাহাতি ও মারামরি করতে। দফায় দফায় ফুটবলাররা ন্যক্কারজনকভাবে মারামারিতে লিপ্ত হন। বিশেষ করে ম্যাচের শেষদিকে যেভাবে দু’দলের ফুটবলাররা যুদ্ধাংদেহী মনোভাব নিয়ে প্রতিপক্ষের ওপর চড়াও হন তা রীতিমতো বিস্ময়কর। যে কারণে ম্যাচ রেফারি মিজানুর রহমান হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন ঢাকা আবাহনীর নাবিব নেওয়াজ জীবন ও মামুন মিয়া এবং বসুন্ধরা কিংসের সুশান্ত ত্রিপুরা ও তৌহিদুল আলম সবুজকে সরাসরি লালকার্ড দেখিয়ে মাঠ থেকে বের করে দেন। অনাকাক্সিক্ষত মারামারিতে ম্যাচ কালিমালিপ্ত হলেও নায়ক বনে গেছেন আবাহনীর নাইজিরিয়ান ফরোয়ার্ড সানডে চিজোবা। ৩-১ গোলের জয়ের ম্যাচটিতে তিনি করেন জোড়া গোল। বিশেষ করে প্রথমার্ধে দল পিছিয়ে পড়ার পর তার নৈপূণ্যেই আবাহনী ম্যাচে ফেরে। পুরো টুর্নামেন্টেই ঝলমলে পারফর্মেন্সের সুবাদে আসরের সেরা ফুটবলার নির্বাচিত হন। সেই সঙ্গে ৬ গোল করে আসরের সর্বোচ্চ গোলদাতাও তিনি। অবশ্য ফাইনালের সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন আবাহনীর মিডফিল্ডার সোহেল রানা। অসাধারণ ধারাবাহিক পারফর্মেন্স প্রদর্শন করলেও ম্যাচের শেষদিকে ২৯ বছর বয়সী সানডেকে আঘাত পেয়ে এ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে যেতে হয়। বসুন্ধরার ডিফেন্ডার নাসিরউদ্দিন চৌধুরীর কনুইয়ের আঘাতে বুকে মারাত্মক ব্যথা পান সানডে। জানা গেছে, নাইজিরিয়ান তারকার অবস্থা খুব একটা ভাল না। তিনি নাকি কাউকে ঠিকমতো চিনতে পারছেন না। এরপর সানডের পরিবর্তে মাঠে নামেন আবাহনীর জীবন। এরপরই মূলত ম্যাচে উত্তেজনার শুরু। নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষে যোগ করা সাত মিনিটের খেলায় পুরোটাই ছিল মারামারিতে ভরপুর। অতিরিক্ত সময়ের শুরুর দিকে মাঝমাঠে বসুন্ধরার সুশান্ত ত্রিপুরা ও আবাহনীর নাবিব নেওয়াজ জীবনের মধ্যে বল দখলের এক পর্যায়ে জীবন ধাক্কা মেরে বসেন সুশান্তকে। এরপর সুশান্ত চড়াও হন জীবনের ওপর। তিনি উপর্যুপরি কিল, ঘুষি ও লাথি মারেন আবাহনীর বদলি ফরোয়ার্ডকে। এ সময় আবাহনী ডিফেন্ডার মামুন মিয়া দৌড়ে এসে জোরালো ফ্লাইং কিক মারেন সুশান্তকে। মুহূর্তের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর মাঠ রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। দু’দলের ফুটবলাররা যে যেভাবে পারেন একে অপরের ওপর চড়াও হন। খেলা স্বাভাবিকভাবেই বন্ধ হয়ে যায়। মাঠে নেমে আসেন দু’দলের অফিসিয়ালরাও। আবাহনী ম্যানেজার সত্যজিৎ দাপ রূপু তার দলের মামুনকে চড় মারতে মারতে শান্ত করার চেষ্টা করেন। বসুন্ধরার অধিনায়ক সবুজ সতীর্থদের নিয়ন্ত্রণ না করে উল্টো আবাহনীর খেলোয়াড়দের সঙ্গে মারামারিতে লিপ্ত হন। প্রায় দশ মিনিট খেলা বন্ধ থাকার পর দু’দলের চারজনকে লালকার্ড দেখিয়ে ফের খেলা শুরু করেন রেফারি। কিন্তু শেষ মিনিটে আবারও ওয়ালী ফয়সালকে ফাউল করায় বসুন্ধরার বিশ্বকাপ তারকা কলিনড্রেসের সঙ্গে বাকযুদ্ধে লিপ্ত হন আবাহনী এই লেফটব্যাক। এ সময় আবাহনী গ্যালারি থেকে দর্শকরা বৃষ্টির মতো মাঠে পানির বোতল ছুড়ে মারতে থাকেন। ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজার সময় আবারও ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটে। আবাহনী ও বসুন্ধরা গ্যালারি থেকে স্রোতের মতো দর্শকরা মাঠে প্রবেশ করেন। ম্যাচ শেষে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বসুন্ধরা ডিফেন্ডার সুশান্ত ত্রিপুরা বলেন, আমি জীবনকে মেরেছি এটা ঠিক। কিন্তু সেই প্রথম আমাকে মেরেছে।
×