ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বরেকর্ড গড়ে টেস্টে যাত্রা শুরু নাইমের

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ২৪ নভেম্বর ২০১৮

 বিশ্বরেকর্ড গড়ে টেস্টে যাত্রা শুরু নাইমের

মোঃ মামুন রশীদ ॥ শুরুটা দুর্দান্ত হওয়া বাংলাদেশের ক্রিকেটে স্পিনারদের জন্য এখন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনার মতোই হয়ে গেছে। অতীতে নাঈমুর রহমান দুর্জয়, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, ইলিয়াস সানি, সোহাগ গাজী, তাইজুল ইসলাম ও মেহেদী হাসান মিরাজদের টেস্ট যাত্রার শুরুটাই ছিল ঈর্ষণীয় সাফল্যের মধ্য দিয়ে। অভিষেকে এই স্পিনাররা যে নৈপুণ্য দেখিয়েছেন তাতে করে টেস্ট ইতিহাসের রেকর্ডের পাতায় অনেক ওলট-পালট হয়েছে। কিন্তু দুর্জয়, সোহাগ, সানিরা বেশিদিন টিকতে পারেননি। এমনকি স্পিনার পরিচয় নিয়ে দুর্দান্ত শুরু করা মাহমুদুল্লাহ এখন অনিয়মিত বোলার। সর্বশেষ চমক হিসেবে মিরাজ দুই বছর আগে পদার্পণেই বেশ কিছু রেকর্ড গড়েছিলেন। গত ফেব্রুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট দলে ডাক পেলেও খেলার সুযোগটা হাতছাড়া হয়েছিল ১৭ বছর বয়সী নাঈম হাসানের। দীর্ঘদেহী এ চট্টগ্রামের ডানহাতি অফস্পিনার এবার সুযোগ পেয়েই কাজে লাগিয়েছেন। নিজের ঘরের মাঠ সাগরিকার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে মাত্র ৬১ রান দিয়ে নিয়েছেন ৫ উইকেট। ল-ভ- করে দিয়েছেন সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং লাইন। মাত্র ১৭ বছর ৩৫৫ দিন বয়সে এ কীর্তি গড়ে অভিষেকে সর্বকনিষ্ঠ বোলার হিসেবে ৫ উইকেট শিকারের বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন তিনি। পদার্পণটা দুর্দান্ত হওয়ার পর এখন নাঈমের সামনে টিকে থাকার চ্যালেঞ্জ। গত ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ সফরে দুই টেস্টের সিরিজ খেলে শ্রীলঙ্কা। চট্টগ্রামের মাটিতে প্রথম টেস্টে নামার আগে দলের চমক ছিল সবচেয়ে বয়সী বাঁহাতি স্পিনার আব্দুর রাজ্জাক ও সর্বকনিষ্ঠ নাইমের অন্তর্ভুক্তি। অনুর্ধ-১৯ বিশ্বকাপ খেলতে তখন নিউজিল্যান্ডে ছিলেন ১৭ বছর বয়সী নাঈম। সেই মিশন শেষ হওয়ার আগেই তাকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। সবাই আশায় ছিলেন হয়তো এবার মিরাজের মতোই নতুন চমক হিসেবে লঙ্কানদের বিপক্ষে নাঈমের মোড়ক খুলে লঙ্কানদের বিস্ময় উপহার দেবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওই ম্যাচে ৩৫ বছর বয়সী রাজ্জাক নতুন করে শুরু করলেও নাঈমের শুরুটাই হয়নি। ১০ মাস পর আবার টেস্ট দলে ডাক পেয়েই একাদশে ঢুকে গেছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চলমান এ টেস্টে তিনিসহ চারজন স্বীকৃত স্পিনার। সবসময়ের জন্য সেরা সাকিব আল হাসানের সঙ্গে ফর্মের তুঙ্গে থাকা তাইজুল ও মিরাজ। এর মধ্যেই নাঈম সবাইকে পেছনে ফেললেন। তিনি বাকিদের পেছনে ফেলে পেয়ে গেলেন ৫ উইকেট। চট্টগ্রামের ছেলে নাইম প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট দিয়ে সব পর্যায়ের ক্রিকেটে পথচলার শুরু করেছিলেন এ মাঠেই। এখন জাতীয় দলেও তার শুরুটা হলো জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। স্বপ্ন ছিল টেস্ট খেলার, লঙ্গার ভার্সনটাও বেশি পছন্দের। স্বপ্ন পূরণ হয়েছে নাঈমের মূলত এবার জাতীয় ক্রিকেট লীগে (এনসিএল) দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়ে। একটি ম্যাচে ৮ উইকেট শিকারের মাধ্যমে নির্বাচকদের নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছেন তিনি। ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মিরাজকে এভাবেই চমক হিসেবে উপস্থাপন করেছিল বাংলাদেশ দল। তখন সবেমাত্র অনুর্ধ-১৯ দলের গ-িটা অতিক্রম করেছিলেন মিরাজ। এবার তাই নাঈমেরও দারুণ কিছু করার চ্যালেঞ্জ ছিল। কিন্তু ২৫ ওভার গড়ানোর আগে বোলিংই পাননি অন্য তিন অভিজ্ঞ স্পিনারদের সুযোগ দিতে গিয়ে। শেষ পর্যন্ত সুযোগ পেতেই নিজের তৃতীয় ওভারে রসটন চেসকে আউট করে প্রথম আন্তর্জাতিক উইকেটের স্বাদ পান সাগরিকার সন্তান নাঈম। এরপর একে একে তিনি তার ঘূর্ণিতে সাজঘরে ফিরিয়েছেন সুনীল এ্যামব্রিস, দেবেন্দ্র বিশু, কেমার রোচ ও জোমেল ওয়ারিক্যানকে। পূর্ণ করেছেন ৫ উইকেট যা প্রতিটি বোলারের জন্য স্বপ্নের অর্জন। ইনিংস শেষে ১৪ ওভারে ৬১ রানে তার উইকেট ৫টি। অভিষেকে সবচেয়ে কম বয়সে ৫ উইকেটের আগের রেকর্ড ছিল অস্ট্রেলিয়ার পেসার প্যাট কামিন্সের। ২০১১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৭৯ রানে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি ১৮ বছর ১৯৩ দিন বয়সে। অর্থাৎ টেস্ট ইতিহাসের ১৪১ বছরে সর্বকনিষ্ঠ বোলার হিসেবে অভিষেকে ৫ উইকেট নেয়ার অনন্য নজির স্থাপন করলেন নাইম। এই বিশ্বরেকর্ড গড়ে শুরু করার পর তিনি মনে করিয়ে দিলেন বাংলাদেশেরও পুরনো ইতিহাস। বাংলাদেশের হয়ে শুধু অভিষেকে নয়, সবমিলিয়েই সবচেয়ে কম বয়সে ৫ উইকেট নেয়ার রেকর্ড এটিই। রেকর্ডটি এতদিন ছিল এনামুল হক জুনিয়রের। ২০০৫ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে ৪৫ রানে নিয়েছিলেন ৬ উইকেট। বাঁহাতি স্পিনারের বয়স ছিল ১৮ বছর ৩২ দিন। আর অভিষেকে বাংলাদেশের পক্ষে সবচেয়ে কম বয়সে ৫ উইকেট শিকারের রেকর্ডটি এতদিন ছিল মিরাজের। ২০১৬ সালের অক্টোবরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এই সাগরিকাতেই ৮০ রানে ৬ উইকেট নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন তিনি। তখন তার বয়স ছিল ১৮ বছর ৩৬১ দিন। তবে অভিষেকে সেরা বোলিং দেশের পক্ষে এখনও ডানহাতি অফস্পিনার সোহাগের। তিনি মিরপুরে ২০১২ সালের নবেম্বরে ৭৪ রানে নিয়েছিলেন ৬ উইকেট। পরবর্তীতে বোলিং ত্রুটির কারণে সোহাগের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারই শেষ হয়ে গেছে। সবমিলিয়ে অভিষেকে ৫ উইকেট নেয়া বাংলাদেশের অষ্টম বোলার নাঈম। আট জনের ৫ জনই ছিলেন অফস্পিনার। দুর্জয় অবসরে গেছেন ১৩২ রানে ভারতের বিপক্ষে অভিষেক টেস্টে ৬ উইকেট নেয়ার পর। বাকিরা হারিয়ে গেছেন, শুধু ২ বছর আগে শুরু করাতে টিকে আছেন মিরাজ। তার সঙ্গে এবার যোগ হলেন নাঈম। মাহমুদুল্লাহ ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অভিষেকে কিংসটাউনে ৫১ রানে ৫ উইকেট নিয়ে রাঙ্গিয়েছিলেন নিজেকে। এখন তিনি অনিয়মিত বোলার হিসেবে দলেই আছেন। এ ৫ জন অফস্পিনারের দুর্দান্ত অভিষেক হয়েছে। নাইম সর্বশেষ যোগ হলেন রেকর্ডের পাতায়, তবু নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করে।
×