ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নিরাপদ সড়ক এবং কিছু পরামর্শ

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ২৪ নভেম্বর ২০১৮

 নিরাপদ সড়ক এবং কিছু পরামর্শ

‘নিরাপদ সড়ক চাই’ নিয়ে অনেক লেখালেখি পত্রিকার পাতায় আসে প্রায়শই। এ নিয়ে সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে অনেক আলাপ-আলোচনা সভা-সমিতিতে হয়েছে। সরকারের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধাররণী কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন রকম পদক্ষেপ হাতে নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন, ফলাফলও মিলতে শুরু হয়েছে। তাছাড়া নিরাপদ সড়ক চাই/নিশ্চিত করার জন্য সংসদে সড়ক নিরাপত্তা আইন পাস হয়েছে, যেখানে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ড্রাইভারকে জেল-জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে এবং ৫০ হাজার টাকা আর্থিক জরিমানা করার নিয়ম করা হয়েছে। তবে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে একটি বিষয় কারও নজরে আসেনি, তা হলো দেশের অধিকাংশ শহর ও গ্রামাঞ্চলের যে সকল রাস্তা রেললাইন ক্রস করেছে, সেখানে অসংখ্য সচল ও অচল রেলগেট বিদ্যমান, যে সকল রেলগেটে সব সময় দুর্ঘটনা লেগেই থাকে। কোন কোন রেলগেট দেখা যায় সচল এবং ট্রেন আসার পূর্বেই বন্ধ করে দেয়া হয়। সেখানে একজন রেলওয়ে পাহারাদার অবস্থান করে তা প্রধানত ঢাকা, চট্টগ্রামসহ কিছু কিছু শহরের গেটগুলোতে দেখা যায়। বাকি পুরো দেশের অসংখ্য রেলগেট আছে যেগুলোর অধিকাংশ নষ্ট, কোন পাহারাদার নেই। ওই সকল স্থানে প্রায়ই দুর্ঘটনার কথা শোন যায়। বিষয়টি সরেজমিনে জরিপ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে দুর্ঘটনা ঘটতে থাকবে, কেউ তা বন্ধ করতে পারবে না। তাছাড়া রেলওয়েকে গতিশীল ও বিশ্বাসযোগ্য যাতায়াত ব্যবস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে বাসের ওপর জন সাধারণের নির্ভরশীলতা কমবে এবং দুর্ঘটনা কম হবে। গাড়ির সংখ্যা ৩৩ লাখ ॥ ড্রাইভারের সংখ্যা ১৮ লাখ চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের বক্তৃতা থেকে উদ্ধৃত- বাংলাদেশে মোট গাড়ি/যানবাহনের সংখ্যা ৩৩ লাখ এবং ড্রাইভারের সংখ্যা ১৮ লাখ, তাহলে প্রশ্ন থেকে যায়, বাকি ১৫ লাখ গাড়ি কারা চালায়। ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া ১৫ লাখ গাড়ি চালায় অদক্ষ ড্রাইভাররা। যার ফলে দুর্ঘটনা ঘটছে। যদি পরিস্থিতি তাই হয়, তাহলে বুঝতে হবে এক শ্রেণীর সরকারী কর্মকর্তার যোগসাজশে এবং উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তার সহায়তায় দীর্ঘদিন ধরে ভুয়া লাইসেন্স অর্থের বিনিময়ে সরবরাহ করা হয়েছে। যখনই কোন অভিযান চালানো হয়, তখন ওই সব অবৈধ লাইসেন্সধারীদের পুলিশ ধরে না। কারণ, তারা জানে এই লাইসেন্স কে বা কারা ইস্যু করছেন। এবারে যখন স্কুলের ছাত্ররা ‘নিরাপদ সড়ক চাই’- এর দাবিতে ড্রাইভারের লাইসেন্স চেক করতে লাগল, তখন দেখা যায় পুলিশ কর্মকর্তা মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন, তার কাছে ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। অনেকের কাছে লাইসেন্স পাওয়া যায়নি। এতে এটাই প্রমাণ হয় যে, ১৮ লাখ ড্রাইভার অবৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্সধারী এবং তারা এক শ্রেণীর পুলিশ কর্মকর্তার ছত্রছায়ায় থেকে অপরাধ করে চলছে এবং সে কারণে দেশের কোন না কোন এলাকায় প্রত্যেক দিন দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে। ঢাকা শহরে রিক্সা আমার পূর্বের লেখায় উল্লেখ করেছি যে, দ্রুতগতিসম্পন্ন গাড়ি ও ধীরগতিসম্পন্ন গাড়ি এক রাস্তায় চলতে পারে না। তাই জাতীয় বৃহত্তর স্বার্থে কিছু কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবেÑ যা আপাতদৃষ্টিতে অমানবিক বলে মনে হলেও বাস্তবে এটা হবে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। রিক্সাচালকদের বিকল্প পেশা সৃষ্টির জন্য আর্থিক সহায়তা দিতে হবে এবং গ্রামে-ফিরে যাওয়ার জন্য একটি নতুন প্রকল্প শুরু করতে হবে। বাংলাদেশ যেখানে ডিজিটাল হচ্ছে সবকিছু, সেখানে অমানবিক পরিশ্রম করে একজন দুর্বল মানুষ টাকার জন্য মাইলের পর মাইল শরীরের শক্তি শেষ করে দিয়ে পরিবার চালায় এরা যখন ৫০ বছরের হবে, তখন নানা শারীরিক জটিলতা শুরু হবে। তাই রিক্সাওয়ালাদের ভাবা উচিত নিজের স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা চিন্তা করে অগ্রিম সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার কি-না। ডিজিটাল যুগে মানুষ টানার পেশা ত্যাগ করুন, তাতে আপনারও লাভ হবে এবং দেশেরও উন্নতি হবে। ফুটপাথ এবং রেললাইনের ওপর বাজার ঢাকার মালিবাগ রেলাইন, মগবাজার রেলক্রসিংয়ের ওপর বাজার, কাওরান বাজারসহ সারা দেশের রেলাইনের ওপর কাঁচাবাজারসহ যেখানে যেখানে বাজার আছে তা উঠিয়ে দিতে হবে। ফুটপাথের ওপর ব্যবসায়ীদের দ্রব্য-সামগ্রী তথা কাপড়, দৈনন্দিন জিনিসপত্র ইত্যাদি বিক্রয় করা চিরতরে বন্ধ করতে হবেÑ যারা এগুলোর পৃষ্ঠপোষকতা করে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। রাস্তার ফুটপাথের ওপর দিয়ে বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল চালানো আইন করে বন্ধ করে দিতে হবে। ৩ মাস পর যদি তার পারফরমেন্স ভাল হয় বোঝা যায়, তা হলে তাকে তার লাইসেন্স ফেরত দেয়া হবে বলে নিয়ম চালু করা দরকার। ট্রাফিক পুলিশ ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব এবং কর্তব্য বুঝিয়ে দিতে হবে। যারা ঢাকা শহরে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করবেন, তাদের সড়ক নিরাপত্তা আইন ভাল করে বুঝিয়ে দিতে হবে। প্রত্যেকটি ট্রাফিক পয়েন্টে ট্রাফিক পুলিশের সাথে ২ জন করে আনসার সদস্য যোগ করতে হবে, তারা যানবাহন নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশকে সহায়তা করবে। ট্রাফিক পুলিশের কার্যক্রম মনিটরিং করার পদ্ধতি আরও যুগোপযোগী করা দরকার। এক একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে এক একটি এলাকা চিহ্নিত করে সেই এলাকার জন্য তাকে দায়বদ্ধ করতে হবে, যদি তার এলাকায় কোন দুর্ঘটনা ঘটে তবে তাকে দায়িত্ব নিতে হবে। কেউই কিন্তু দায়বদ্ধতা এড়াতে পারেন না। গাড়ি পার্কিং ঢাকা শহরের যে দিকে তাকাবেন দেখবেন ডানে-বাঁয়ে গাড়ি পার্ক করা। মার্কেটের সামনে, যে কোন দোকানের সমানে গাড়ি পার্ক করে গাড়ির ড্রাইভার/মালিক বাজার করতে চলে গেছেন। ঢাকা শহরের যেখানে-সেখানে গাড়ি পার্কিং বন্ধ করলে দুর্ঘটনার সংখ্য একেবারে কমে যাবে। পার্কিংয়ের কারণে রাস্তা ছোট হয়ে আসে, তাই যানজট, মানুষজট লেগে থাকে। তাই পার্কিংয়ের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা দরকার। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া এখনই প্রয়োজন। লেখক : আমেরিকা প্রবাসী
×