ফিরোজ মান্না ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এক সিলেট বিভাগ থেকে প্রবাসী বাংলাদেশীরা নির্বাচনের দৌড়ে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে। সারা দেশে মনোনয়ন দৌড়ে প্রবাসী প্রার্থী খুব একটা নেই। সিলেট বিভাগে ১৯ টি আসনে এক শ’র বেশি প্রবাসী বাংলাদেশী নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য বিভিন্ন দল থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এসব প্রার্থীর বেশিরভাগই যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। প্রবাসী প্রার্থীরা এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন। বড় নেতাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন মনোনয়নপত্র ‘কনফার্ম’ করতে। বিভিন্ন দলীয় সূত্র জানিয়েছে, প্রবাসী অনেকেই চূড়ান্ত মনোনয়ন পেতে পারেন। এ ক্ষেত্রে দলের অনেক ত্যাগী নেতা বাদ পড়বেন।
সূত্র জানিয়েছে, সিলেট বিভাগের চার জেলায় সংসদীয় আসন রয়েছে ১৯টি। বেশিরভাগ আসনে মনোনয়ন পাওয়ার লড়াইয়ে নেমেছেন এক শ’র বেশি প্রবাসী। তারা দেশে ফিরে অনানুষ্ঠানিকভাবে গণসংযোগও শুরু করেছেন। হঠাৎ করে নির্বাচনের মাঠে তাদের দেখে ভোটাররা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। ত্যাগী নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে, টাকার জোরে তারা হয়ত কেউ কেউ প্রার্থী হয়ে যাবেন। এতে দলের নেতাকর্মীরা বঞ্চিত হবেন। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থীও রয়েছেন। প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেতে অনেকে আবার দলগুলোর কেন্দ্রীয় পর্যায়ে জোর তদবির করছেন। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে সিলেটের প্রায় ২৬ লাখ মানুষ বসবাস করেন। মনোনয়নপ্রত্যাশীরা বলছেন, তারা বিদেশে থাকলেও দেশের রাজনীতিতে গভীরভাবে সম্পৃক্ত। তারা নিজেদের অবস্থানস্থলে পছন্দের দলের জন্য কাজ করছেন। নিজ এলাকার সার্বিক উন্নয়নে অবদান রাখার মানসিকতা থেকেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী। বিদেশে থাকলেও কে না চায় নিজের দেশের সেবা করতে। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে অন্তত ১০নেতা বেশ কয়েক বছর ধরে নিয়মিত দেশে এসে স্থানীয়ভাবে দল গোছানোর পাশাপাশি রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ, সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে অংশ নিচ্ছেন। এলাকায় তাদের পরিচিতি ও গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।
সিলেট-২ (বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর) আসনে প্রবাসী মনোনয়নপ্রত্যাশীরা আওয়ামী লীগের যুক্তরাজ্য শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, কার্ডিফ শাখার সভাপতি কাজী মোহাম্মদ শাহজাহান, সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী।
সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা, বালাগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ) আসনে রয়েছেন যুক্তরাজ্যপ্রবাসী জুনায়েদ মোহাম্মদ মিয়া (স্বতন্ত্র), আওয়ামী লীগের যুক্তরাজ্য শাখার ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব ও উপদেষ্টাম-লীর সদস্য মুহাম্মদ মনির হোসাইন, যুক্তরাজ্যপ্রবাসী বিএনপির নেতা ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এম এ সালাম।
সিলেট-৪ (কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর) আসনে রয়েছেন আওয়ামী লীগের যুক্তরাষ্ট্র শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমদ। সিলেট-৫ (জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট) আসনে বিএনপির যুক্তরাষ্ট্র শাখার সহসভাপতি শরীফ আহমদ লস্কর। সিলেট-৬ ( গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার) আসনে আওয়ামী লীগের কানাডা শাখার প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি সরওয়ার হোসেন, আওয়ামী লীগের ফ্রান্স শাখার উপদেষ্টা চৌধুরী সালেহ আহমদ, আওয়ামী লীগ লন্ডন শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আফছার খান ও নিউজার্সি শাখার সাধারণ সম্পাদক সফিক উদ্দিন।
সুনামগঞ্জ-৩ (দক্ষিণ সুনামগঞ্জ ও জগন্নাথপুর) আসনে আওয়ামী লীগের যুক্তরাজ্য শাখার নেতা সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক, সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি যুক্তরাজ্য প্রবাসী সৈয়দ আবুল কাশেম ও বিএনপির নেতা এম এম সাত্তার।
সুনামগঞ্জ-১ (তাহিরপুর, জামালগঞ্জ ও ধরমপাশা) আসনে যুক্তরাজ্য বিএনপি আইনজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক হামিদুল হক আফিন্দি। সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) আসনে সিলেটের এমসি কলেজের সাবেক ভিপি যুক্তরাজ্যপ্রবাসী আওয়ামী লীগের নেতা ইকবাল হোসাইন, বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সদস্য তাহির রায়হান চৌধুরী, ইস্ট মিডল্যান্ড রিজিওনাল বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও যুক্তরাজ্য জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের উপদেষ্টা মোঃ আবদুল মজিদ তাহের, শ্রমিক লীগ যুক্তরাজ্য শাখার সভাপতি শামছুল হক চৌধুরী ও আওয়ামী লীগ কুয়েত শাখার সাংগঠনিক উপদেষ্টা মোঃ ছায়েদ আলী মাহবুব হোসেন।
মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা-জুড়ী) আসনে বিএনপি কাতার শাখার সদস্য সচিব শরীফুল হক সাজু। মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনে আওয়ামী লীগের যুক্তরাজ্য শাখার তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক কামাল হাসান। মৌলভীবাজার-৩ (সদর ও রাজনগর) আসনে যুক্তরাজ্যের সাবেক কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা এম এ রহিম। হবিগঞ্জ-৩ (সদর, লাখাই ও শায়েস্তাগঞ্জ) আসনে যুক্তরাজ্য প্রবাসী আওয়ামী লীগের নেতা সুশান্ত দাস গুপ্ত মনোনয়নপ্রত্যাশী।
