ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

হাল্কা শীতে শালের ফ্যাশন

প্রকাশিত: ০৮:০৩, ২৩ নভেম্বর ২০১৮

হাল্কা শীতে শালের ফ্যাশন

রঙের ঋতু শীত। প্রকৃতির মতো মানুষের পোশাক-আশাকেও লাগে রঙের ছোঁয়া। নানা রঙের, নানা ধাঁচের শীতের জামা-কাপড় পরা মানুষের ভিড়ে পথঘাটের চেহারাও বদলে যায়। চারদিকে কেমন যেন একটা উৎসবের ছোঁয়া লাগে। হিমহিম শীতের সকালের শুরু কি শালের উষ্ণতা ছাড়া চিন্তা করা যায়? একদমই না। শুধু শীতের পোশাক হিসেবেই নয়, ফ্যাশন অনুষঙ্গ হিসেবেও আজকের প্রজন্মের কাছে শালের রয়েছে আলাদা কদর। শীত ঠেকাতে চমৎকার বুনন আর আকর্ষণীয় ডিজাইনের শালের সমাদর বেড়েছে। এক প্যাঁচে শীত তাড়াতে জুড়ি নেই শালের। পশ্চিমা দেশগুলোতে প্রত্যেক ঋতুতেই পোশাকের ফ্যাশন বদলায়। শীতের ঋতুতেও পোশাক বিক্রেতারা বাজারে ছাড়েন নতুন নতুন পোশাক। আমাদের দেশে তাদের মতো অতটা সুযোগ না থাকলেও শীতবস্ত্রের ফ্যাশনে নতুনত্ব আনার সুযোগ রয়েছে। কিশোরী, তরুণী, এবং বয়স্ক নারীরাও শাড়ির সঙ্গে রং মিলিয়ে পরতে পারেন নানা স্টাইলের শাল, স্টোল কার্ডিগান। বাংলাদেশে গ্রামের শীত আর শহরের শীতের মধ্যে বিস্তর তফাৎ। শহরে শীতের আমেজ উপভোগ করার সময় যেন কারোরই নেই। শীতের রূপ তাই দুই জায়গায় দুই রকম। এ কারণেই শহরে শীতের পোশাকটিও যেন নগরের যান্ত্রিকতা মাথায় রেখেই করা। তাই পাঁচ হাত লম্বা আর আড়াই হাত বহরের শীতের শাল এখানে হাল সময়ে এসে যেন একটু খাটো হয়ে যায়। দিনের বিভিন্ন সময়ে শীতের তারতম্য, আর ব্যবহারিক উপযোগিতা এ দুই বিষয় মাথায় রেখেই যেন শীতের শালে এই নতুনত্ব। শাল এখন শুধু শরীরকে ওম দেয়ার জন্যই নয়- এটি এখন শিল্পীর শিল্প প্রদর্শনের ক্যানভাসও। এ জন্যই শিল্পীর শিল্প রূপটি ধরা দেয় ভিন্ন আঙ্গিকে। আর আমাদের দেশের ফ্যাশন হাউসগুলোতে বরাবরই শিল্পকে প্রাধান্য দিয়ে আসছে। শিল্পের সঙ্গে ঐতিহ্যের শঙ্কর ঘটিয়ে অনবদ্য এক চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন শালের ডিজাইনে। খনার বচন, প্রচলিত প্রবাদ প্রবচন, কবিতার পঙ্্ক্িত, গানের কলি, বিচিত্র ক্যালিওগ্রাফির মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে শালের বুননে। নিশ্চিতে পরতে পারেন এগুলো। মাল্টিকালারও পরতে পারেন। এক্ষেত্রে সাদা-কালো, সবুজ, বাদামি, বেগুনী, বিস্কিট-ম্যাজেনটা, আকাশি রংগুলোই বেছে নেবেন। কন্ট্রাস্ট শেডগুলোও বেছে নিতে পারেন। শাল পরা এবং শালের ধরন দুই ক্ষেত্রেই এসেছে বৈচিত্র্য। দেশী শালের মধ্যে বাঙালী মেয়েদের প্রথম পছন্দ খাদি শাল। তাতে বøক, বাটিক, স্ক্রিনপ্রিন্ট করা থাকলেও যেমন কোন সমস্যা নেই, তেমনি একরঙা শালেও নেই কোন আপত্তি; তা দিব্যি শাড়ি, কামিজ, ফতুয়া, টপস যে পোশাকে যাচ্ছে, সেই পোশাকের সঙ্গেই গায়ে জড়িয়ে নিচ্ছেন তরুণীরা। আবার একরঙা পশমিনা শালের ফ্যাশনও দারুণ চলছে। নরম এবং বহর কম বলে ব্যবহারে আরামদায়ক; তাই তরুণীরা এই শালে বেশ স্বাচ্ছন্দ্য। আর এ কারণেই ঢাকা শহরের প্রায় সব বিপণিবিতানেই এখন এই শাল পাওয়া যাবে। সেই সঙ্গে নিউমার্কেটে আছে খাদি শাল, আদিবাসী শাল, পশমিনা শাল, উলের শালের পসরা। কলেজ-ইউনিভার্সিটির ছাত্রীদের কাছে যেমন কদর তেমনি নারী সাংবাদিকরাও ভীষণ পছন্দ করেন। একটু বৈচিত্র্য বাড়াতে অনেকেই এ শালের ওপর একটু উলের রঙিন সুতার কাজ করিয়ে নেন। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, পত্রিকা অফিস, শপিং সেন্টার, সাহিত্য অনুষ্ঠান কিংবা ঘরোয়া পার্টিতে এসব শাল চমৎকার মানানসই। হালকা শীতে পরার জন্য বেছে নিন খাদি, তাঁত, গ্রামীণ চেক এবং সুতির চাদরে বাটিকপ্রিন্ট বা এম্ব্রয়ডারির কাজ করা চাদর। এ ছাড়া হ্যান্ডস্টিচ স্কিন, এ্যাপলিক, প্রিন্টেড ডিজাইন, হ্যান্ডপেইন্ট, বøক, ডাই এদের জন্য চমৎকার মানানসই। ইডেন কলেজের ছাত্রী আফ্রিন প্রিমা বলেন, ফ্যাশনের ব্যাপারে মানুষ আগের চেয়ে বেশ সচেতন। যেনতেন কিছু একটা পারলেই তো ফ্যাশন হয় না। চাই হাল ফ্যাশনের সঙ্গে তাল মেলাতে। শীত নিবারণ এবং ফ্যাশনের জন্য একই সঙ্গে সবচেয়ে যুগোপযোগী হবে শাল। শীতের শুরুতে সোয়েটার বা বেøজার পরার মতো ঠা া থাকে না, তাই হালকা শীতে পাতলা শালের বিকল্প নেই। আর শালগুলো বেশ ফ্যাশনেবল। হালকা শীতের জন্যই এগুলো বেশ কার্যকর। জাঁকজমক কোন পার্টি কিংবা বিয়ে-শাদিতে পরতে পারেন একটু গর্জিয়াস শালগুলো। এসব জায়গায় পরার জন্য জয়সিল্ক এ্যান্ডি ও খাদির মিশ্রণ কাতান, রাজশাহী সিল্কসহ ফেব্রিক্সের শাল। ফেব্রিকের ওপর নকশীকাঁথা, এ্যান্ডি ও খাদিতে ইক্কত ডিজাইন, পাটের মোটিফ, চুমকি, পুঁতির কাজ, কাঁথাফোড়ের সঙ্গে চুমকি, ডলার প্রভৃতির কাজ করা শাল। আরেকটু গর্জিয়াস লুক আনতে কুন্দন, পুঁতি, ঝালর, কাচ বসিয়ে নিতে পারেন। এছাড়া কারচুপি সিকোয়েন্স, জরি বসিয়েও ট্রেন্ডি লুক আনতে পারেন বিয়েতে বা পার্টিতে পরার শালগুলোতে। দাম ও রকমফের বাজারে নানা ধরনের শালের ছড়াছড়ি। আর তাই দামটাও আছে বিভিন্ন রকম শাল ও মার্কেটের ভিন্নতায়। শীতের শুরুতেই দাম একরকম আর পরে শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দামও বেড়ে যায়। ভারত, চীন, মালয়েশিয়া থেকে আমদানিকৃত শালগুলোর দাম- চায়না শাল ৪৫০ থেকে ৮০০ টাকা। কাশ্মীরি পাতলা শাল ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা। উচ্চতায় ও প্রস্থে ছোট কাশ্মীরি শাল ১৬০ থেকে ৪০০ টাকা। কুমিল্লার খাদি ও টাঙ্গাইলের শাল ১৫০ থেকে ৫০০ টাকা। অভিজাত শপিংমলগুলোয় শাল কিনতে পারেন ৫০০ থেকে ৫০০০ টাকার মধ্যে। ফ্যাশন হাউসগুলোয়ও ভিন্ন ভিন্ন দামে শালগুলো পাওয়া যাবে। যেখানে পাবেন পছন্দসই শালের পসরা সাজিয়েছে অনেক প্রতিষ্ঠান। দেশী ফ্যাশন হাউস রং, দেশাল, নিত্য উপহার, আড়ং, বাংলার মেলাসহ অন্য হাউসগুলোয় মিলবে বাহারি শাল। এছাড়া নগরীর নিউমার্কেট, গাউসিয়া, বঙ্গবাজার থেকেও কিনতে পারেন। কে-ক্রাফটস, আড়ং, অঞ্জনস, ময়ূরী, নবরূপা, বিবিয়ানা, নাগরদোলা, নিপুণ, ময়ূরী, তহুস, ক্রিয়েশন, কাপড়-ই-বাংলা ফ্যাশন হাউসগুলোতে ইতোমধ্যেই শালের আয়োজন শেষ করেছে। এসব জায়গায় পাবেন খাদি, তাঁত ও এ্যান্ডির শালগুলো। এ ছাড়াও পাবেন বঙ্গভবন, পীর ইয়ামেনি মার্কেট, নিউমার্কেট, গাউসিয়া, চাঁদনি চক, ঢাকা কলেজের বিপরীতে, রামপুরা, মৌচাক, খিলগাঁও, সদরঘাটসহ রাজধানীর ছোটবড় মার্কেটগুলোতে। ফুটপাথেও পাবেন সুন্দর সুন্দর শালগুলো। এখান থেকে কিনলে কম দামেই পাবেন। তবে একটু যাচাই-বাছাই করে নেবেন না হলে ঠকার সম্ভাবনাই বেশি থাকবে।
×